।। প্রথম কলকাতা ।।
College Street: পেটের খিদে মেটাতে যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি মস্তিষ্কের খিদে মেটানোর জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন জ্ঞানের। সেই জ্ঞান সংগ্রহ করার জন্য বর্তমানে সব থেকে সহজলভ্য মাধ্যম ইন্টারনেট। তা থাকলেও আসল জ্ঞানের ভান্ডার কিন্তু বলা হয় বইকেই। পিডিএফ, ই-বুকের যুগে এখনও পর্যন্ত বুক ঠুকে বলা যায় বইয়ের বিকল্প কিছুই হয় না। তাই এখনও বহু মানুষ এমন রয়েছেন যারা নিজেদের বই প্রেমীর থেকে বইপোকা বলতে বেশি ভালোবাসেন। তাদের জন্যই মহানগরের বুকে গড়ে উঠেছে বৃহৎ এক বইয়ের বাজার।
শুনলে হয়তো অবাক হবেন, কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের মার্কেট। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে শুধুই বইয়ের দোকান। দোকানের সামনে লাইন দিয়ে সাজানো রয়েছে বই। আবার কোন কোন দোকানের সামনে একটার পর একটা বই রাখার ফলে তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচিলের মতো আকৃতি। কলেজ স্ট্রিটের অলিগলি , ফুটপাত সব জায়গাতেই দখল বসিয়েছে বই। আর এই বই পাড়া বাঙালি পড়ুয়াদের কাছে স্বপ্নের থেকে কিছু কম নয়। কথায় বলে, যে বই কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে পাওয়া যায় না সেই বইয়ের নাকি কোন অস্তিত্বই আর নেই।
বলাই বাহুল্য কথাটা খুব একটা ভুল কিছু নয়। কলেজ স্ট্রিটের এই বই পাড়ায় কম দামে, ছাড়সহ বহু দেশি-বিদেশি প্রকাশনীর বই পাওয়া যায়। এমনকি শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটা সত্যি যে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডের আউট অফ প্রিন্ট হয়ে যাওয়া বই পর্যন্ত খুঁজলে পেয়ে যেতে পারেন কলেজস্ট্রিটের কোন না কোন বইয়ের দোকানে। বাঙালি শিক্ষিত সমাজের কাছে এই বই পাড়া কিন্তু আকর্ষণের অন্যতম জায়গা।
কলেজ স্ট্রিটের অজানা ইতিহাস
১৮১৭ সালে কলেজ স্কোয়ারের উত্তর দিকে হিন্দু কলেজ বা আজকের প্রেসেডেন্সি কলেজ স্থাপিত হয়েছিল । এই কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পেছনে যে সমস্ত অসামান্য ব্যক্তিত্বদের হাত রয়েছে তাদের তালিকায় রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার সাহেব, স্যার এডওয়ার্ড হায়েড ইস্ট, রাধাকান্ত দেব, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, রানী রাসমণি সহ আরও বহু শিক্ষিত শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের নাম রয়েছে। তবে ১৮৭৪ সালে এই কলেজের স্থান পরিবর্তিত হয়। তারপর হিন্দু কলেজকে ঘিরে ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠতে থাকে বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকান । বাংলার নবজাগরণের সময় কলকাতার বুকে কলেজের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল।
তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই প্রতিবছরই কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেকেই দাবি করেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পৃষ্ঠপোষকতাতেই নাকি প্রথম বইয়ের দোকান স্থাপিত হয়েছিল কলেজস্ট্রিটে। এখনও পর্যন্ত এমন বেশ কয়েকটি দোকানের অস্তিত্ব সেখানে রয়েছে যা কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়া তৈরি হওয়ার সাক্ষী। শুধুমাত্র বইয়ের দোকান বললে ভুল হবে। বই কেনাকাটার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক যে কাজগুলি আপনাকে করতে হবে তাহলে একবার কফি হাউসে ঢুঁ মেরে আসা। এছাড়াও সেখানে রয়েছে নামিদামি বহু রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকান। তবে দু হাত ভর্তি বই কেনার পর কলেজস্ট্রিটের তেলেভাজা আর চা খেতে কিন্তু ভুলবেন না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম