।। প্রথম কলকাতা।।
Shafiqul Islam Kajol: বাংলাদেশি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। ২০২০’র মার্চের ১০ তারিখে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়। কিন্তু ঘটনাটি ঠিক কী? বিবিসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে, নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি খবর প্রকাশের জেরে, তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য। আর তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এরপর এদিন সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে ৫৩ দিন ধরে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে রাখা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে সেখানে নির্যাতন করা হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যমকে শফিকুল ইসলাম কাজল বলেছেন, ‘কখনও কখনও তাঁরা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ার আগে মারধর করত। এটা যে কতটা বেদনাদায়ক ছিল, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তাঁরা আমাকে আমার লেখা গল্পগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমাকে অনেক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আমাকে যুদ্ধ করতে হয় নিজের সঙ্গে’। তিনি বলতে চেয়েছেন তাঁর সঙ্গে পশুর মত আচরণ করা হয়েছিল। কিন্তু কারা করেছে তাঁর সঙ্গে এই আচরণ? নিরাপত্তা বাহিনী!
এই প্রথম তিনি নিজের গল্প বিস্তারে শেয়ার করেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি সেই সপ্তাহে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন, যখন ঢাকায় বিএনপি’র সদস্যদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে তার অ্যাকাউন্ট ভ্যারিফাই করা যায়নি। সিক্রেট লোকেশন থেকে তিনি কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই দেশে কোনও মানবাধিকার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। তাঁদের মূলত মাথা ব্যথা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকটি নিয়েও তাঁরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে, কিন্তু তা অস্বীকার করে।
বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা বেআইনিভাবে জড়ো হচ্ছে। তাঁর সরকার বাকস্বাধীনতা রোধ করছে, এমন অভিযোগ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। উল্টে জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পর ১৯৭১-এ গঠিত তাঁর জাতি ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার’কে সমুন্নত রাখতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২০-র মার্চে যখন কাজল নিখোঁজ হয়, তখন জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশকারী সংস্থাগুলির মধ্যে ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শফিকুল ইসলাম কাজলের মত সাংবাদিকদের টার্গেট করা স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন কাজল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে একটি যৌন-পাচার চক্রের জড়িত থাকার অভিযোগের বিবরণ দিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। এর পরপরই তাঁর আইনজীবী জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সদস্য এই নিয়ে তাঁর ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে কাজল জানায়, তাঁকে একটি চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছিল। জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল তিনি কেন এই কেলেঙ্কারির সম্পর্কে লিখেছেন? তাঁর এই নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, কাজলকে কিছু মেয়ের ছবি এডিট করার জন্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই মেয়েরা শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছিল। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে। তবে কাজলকে ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে আটকে রাখার কথাও অস্বীকার করেন মন্ত্রী। যদিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, বাংলাদেশে গোপন আটক স্থানের অস্তিত্বের প্রমাণ শোনা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী জানিয়েছেন, ‘কিছু লোক বলেছে যে তাঁরা মাটির নীচ থেকে কথা শুনতে পায়। এটা খুবই বিরক্তিকর। মনে হয় কারোর উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে’।
কাজল যখন জেলে ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছিল। একজন আইন সমালোচক বলেছেন যে, একটি ফেসবুক পোস্ট সমালোচনা মূলক বলে বিবেচিত হতে পারে। ২০১৮-তে আইন আসার পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে এই মর্মে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ৯ বছর ধরে নিখোঁজ বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংগঠক সাজিদুল ইসলাম সুমন। তাঁকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৩-র ডিসেম্বরে। ২০১৪-র জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে, আওয়ামী লীগ সরকারের হুমকির ভয়ে তিনি তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বাড়ি থেকে দূরে চলে যান। এরপর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানা যায়, একদল পুরুষের সঙ্গে সাজিদুলকে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর চোখ বাঁধা ছিল এবং হাতকড়া পড়ানো ছিল। তাঁর বোন সনজিদা ও মেয়ে আরওয়া এখনও বসে আছেন তাঁর অপেক্ষায়। আশা ছাড়তে রাজি নয় পরিবার।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম