।। প্রথম কলকাতা ।।
Jibanananda Das: বাংলা সাহিত্য দুনিয়ার অত্যন্ত পরিচিত একজন লেখক তিনি। তাঁর চোখ দিয়ে এক অন্য বাংলাকে দেখেছে মানুষ। প্রেমে অসফলতা থেকে শুরু করে বেকারত্ব, দারিদ্র্য ফুটিয়ে তুলতেন নিজের লেখার মধ্যে দিয়ে। এক কথায় তাঁর লেখায় প্রকাশ পেত সাধারণের জীবন যন্ত্রণা। অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার রূপ তিনি দেখেছিলেন বলে, পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যান নি। ১৮৯৯-এর আজকের দিনে জন্ম হয় জীবনানন্দ দাশের।
বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ও মা কুসুমকুমারী দাশ। ছোট থেকে তিনি পদবী হিসেবে ‘দাশগুপ্ত’ ব্যবহার করে এলেও, পরবর্তীতে নিজের নামের সঙ্গে শুধু ‘দাশ’কে জুড়ে রাখেন। তাঁর মা গৃহবধূ হলেও কবিতা লিখতেন। এমনকি তাঁকে শৈশবে পাঠ পড়িয়েছেন তাঁর মাই। তাঁর ডাক নাম ছিল মিলু। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ করেছেন কবি। তাঁর রচিত কবিতাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘আদর্শ ছেলে’। এই প্রতিভা ছিল তাঁর রক্তে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যা বাইরে প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু কবে নিজের পদবীতে পরিবর্তন আনলেন তিনি? দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রয়াণের পর তাঁকে স্মরণ করে কবিতা লেখেন তিনি। সেটি ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৭-এ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। আর সেই সময় থেকেই পদবীতে ‘দাশগুপ্ত’-এর পরিবর্তে ‘দাশ’ লেখা শুরু করেছিলেন তিনি।
তবে লেখালেখির পাশেই একসময় কাজ করেছেন সিটি কলেজে। কিন্তু প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যেই চাকরিটি চলে যায়। এমনকি আর্থিক অভাবের কারণে কাজ করেছেন গৃহশিক্ষক হিসেবেও। কলকাতায় কাজ না পেয়ে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষকতা করেন। কিন্তু বেশিদিন সেখানেও কাজ করেননি। দু’মাসের একটু বেশি দিন কাজ করেই ফিরে এসেছিলেন তিলোত্তমায়। যদিও এর পাশাপাশি লেখালেখি একনাগারে চালিয়ে গিয়েছেন জীবনানন্দ দাশ। বলতে গেলে, পেশাগত দিক থেকে নিশ্চিত হতে পারেননি কোনোদিন। তাই বারবার নিজের কাজের জায়গা পরিবর্তন করেছেন তিনি। তাঁর প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব রয়েছে। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ ‘নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলন’-এ পুরস্কৃত হয়েছে।
কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন তিনি। ১৯৫৪-তে মৃত্যুর আগে ২১টি উপন্যাস ও ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করে রেখে গিয়েছেন এই কবি। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তার একটিও প্রকাশ পায়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে দিন কেটেছে তাঁর। ১৯৩০-এ তাঁর বিয়ে হয় লাবণ্য দেবীর সঙ্গে। তাঁর বিয়েতে বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্তের মতো ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি মাঝে কিছুদিন বীমা কোম্পানিতে এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। কিন্তু কোনও কিছুই স্থায়ী ছিল না তাঁর। ১৯৫৭-তে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তাঁর বোন সুচরিতা দাশ এবং ময়ুখ পত্রিকা খ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ। তাঁর প্রবন্ধের সংকলন ‘কবিতার কথা’ বেরিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পর । জন্মদিনে স্মরণ এই প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম