।। প্রথম কলকাতা ।।
পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ স্টেশন বরাবরই খুব ব্যস্ত, বহু যাত্রীর ভিড় জমে থাকে এই স্টেশনে। যাত্রীরা স্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে কখন ট্রেন আসবে এবং ঘোষণা শুনে তাঁরা জানতে পারবেন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ছে তাদের গন্তব্যস্থলে ফেরার ট্রেন প্রতিদিনই মাইক্রোফোনে শোনা যায় এক ব্যক্তির গলা, ৩১৮৪১ আপ কৃষ্ণনগর লোকাল ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। দীর্ঘ ৩৪ বছরে এর কোন অন্যথা হয়নি। শিয়ালদা স্টেশনে বহু যাত্রীকে পথ দেখিয়েছেন এই ব্যক্তি।
নৈহাটি স্টেশনে উনি পরিচিত মুখ। লোকাল ট্রেন দাঁড়াতেই হাত ধরে উনাকে ট্রেনে তুলতে সাহায্য করার যাত্রী অভাব হয় না। আমরা যত বিজি থাকুক ঠিক একটা সিট পেয়ে যাবেন তিনি। সহযাত্রীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বাকি পথটা পেরিয়ে সোজা শিয়ালদা শিয়ালদা স্টেশনে। পরিতোষ বিশ্বাসকে তো দেখেছেন অনেকেই। তার গলা শুনেছেন তার বহুগুণ বেশি মানুষ। যদিও খুব কম জানেন পরিচিত পরিতোষ বাবুর গলায় তারা রোজ শোনেন শিয়ালদহ স্টেশনের মাইকে। সকলের চোখের আড়ালে বসে য ঘোষণা করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে দিশা দেখিয়ে চলেছেন। এটি শুধুমাত্র কোন ঘোষণা নয় যেন এক পথপ্রদর্শক তার বাণী প্রচার করছে।
যখনই তিনি ঘোষণা করেন স্টেশনের মেন সেকশনের জনতার ভিড় হুড়মুড়িয়ে ছুটল নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে। এই চেনা ছবি একদিনের নয় প্রতিদিনের। কি ভাবছেন শুধু একবার ঘোষনা করে শেষ? না দিনে বহুবার করতে হয় এই ঘোষণা। কিন্তু আমজনতার সেই ভিড় কোনদিনও জানতে পারেনা প্ল্যাটফর্মে যিনি ট্রেনের ঘোষণা করছে তিনি আসলে কে? এছাড়া তিনি কখনো চোখেই দেখতে পাননি কারণ তিনি জন্মান্ধ। এমনকি ট্রেনের সময় বলার আগে দেখেননি কখনো ঘড়ি। এই ব্যক্তির আসল পরিচয় হলো ইনি নৈহাটির বাসিন্দা পরিতোষ বাবু যিনি প্রত্যেক দিন ভোর ৫টা নাগাদ নৈহাটি স্টেশনে আসেন প্রথম ট্রেন ধরার জন্য। সর্বদাই হতে থাকে একটি সাদা লাঠি। ট্রেনে তোলার জন্য ঠিক পেয়ে যান কাউকে।
তার ডিউটি শুরু হয় ঠিক ভোর ছয়টায়। শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছাতে এখনো লের করেনি তিনি। শিয়ালদহে নেমে তিনি একেবারে চলে যান অ্যানাউন্সমেন্ট রুমে। নিজের দায়িত্ব নিজেই বুঝে কাজে যোগ দেন তিনি। দম ফেলার সুযোগ পান না তিনি। কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন ট্রেন কখন ছাড়বে সেইসব বিষয়ে তার খেয়াল রাখতে হয়। সবকিছুই লিখে নেন। লিখে না নিলেই কিন্তু ভুল হবার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবনে ইস্টার্ন রেলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। জন্মান্ধ হওয়া সত্বেও রেল যে তাকে এই চাকরি দিয়েছে তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ কেরিয়ারের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্টেশনে ছিলেন।
কে কে আছেন পরিতোষ বিশ্বাসের বাড়িতে? তার স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে রয়েছে বাড়িতে। সংসারে একমাত্র তিনি উপার্জন করেন। সহকর্মীরা বলেছেন, এত দিনের কাজে তিনি ঘোষণা করতে গিয়ে কখনো ভুল করেন নি। তাঁর সহকর্মীদেরও কখনো তার ভুলের কথা মনে পড়ে না। তবে পরিতোষবাবু নিজেও সতর্ক ছিলেন তার যেনো কোনো ভুল না হয়। বয়েস হয়েছে কেবল মাথায় থাকে না। আসলে তাঁর এই প্রতিবন্ধকতা শুধুই বাইরের যা অন্যেরা দেখতে পান কিন্তু তিনি নিজে তাঁর অন্তরের দৃষ্টিতে যথেষ্ট উজ্জ্বল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম