।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: পিছু হটেও যেন হার মানছে না হামাস। এত সহজে ফিলিস্তিনের এই গোষ্ঠী হাল ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যে যে এলাকা ইসরায়েল ‘হামাস মুক্ত’ বলে ঘোষণা করছে, সেই এলাকায় আবার নতুন করে সংঘটিত হচ্ছে হামাস। হামাস দমন করতে মার্কিন সিনেটরের মুখে চাঞ্চল্যকর বক্তব্য। ফিরে আসতে পারে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর স্মৃতি। মনে পড়ে? হিরোশিমা আর নাগাসাকির কথা? ঠিক তেমনটাই হবে না তো গাজার সঙ্গে? কোন মারাত্মক হামলার প্ল্যান করছে ইসরায়েল? দ্বিধা বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র। গাজা নাকি ইসরায়েল, কোন পক্ষে কথা বলছে বোঝাই যাচ্ছে না। ইসরায়েলকে বড়সড় হামলার প্ল্যান কষে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষমতাধর কিছু মানুষ। কিন্তু কেন? এক মুখে দুরকম কথার কারণটাই বা কি? হামাসও নাছোড়বান্দা। গাজার এক চুল মাটিও ছাড়তে নারাজ। তাহলে কি ইসরায়েলের প্ল্যানেই বড়সড় ভুল? আদৌ হামাসকে হারাতে পারবে তো? জোর লড়াই নেতানিয়াহুর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হামলার পুনরাবৃত্তি হবে গাজায়!
১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যালীলার কথা কে না জানে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জিততে, জাপানের উপর মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল। রীতিমত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল হিরোসিমা আর নাগাসাকি শহর। ক্ষতবিক্ষত দুই শহর এখনো সেই মর্মান্তিক স্মৃতি ভুলতে পারেনি, বরং তা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সেই দুর্ঘটনা এবার গাজায় ঘটতে চলেছে না তো? মার্কিন সিনেটরের মুখের কথায় ভয় পেয়ে পাচ্ছে কূটনৈতিক মহল। যে পারমাণবিক যুদ্ধের কথা শুনলেই গোটা বিশ্ব ভয় পায় তারই রিপিট হবে না তো?।গত সাত মাস ধরে গাজায়, কীভাবে ইসরায়েল স্থল অভিযান চালাচ্ছে, তা তো জানেনই। আর তার মাত্রা তীব্র হয়েছে রাফাতে গিয়ে। লক্ষ্য একটাই, ফিলিস্তিনের হামাসকে নির্মূল করা। কিন্তু সাত মাসে এখনো পর্যন্ত ধরাশায়ী হয়নি হামাস। এমত পরিস্থিতিতে গাজায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হওয়া হিরোশিমা আর নাগাসাকির ঘটনার রিপিট করতে বললে মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। তাঁর কথায়, এখন ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে তা হলো একটা অস্তিত্বের যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জয় পাওয়ার জন্য ঠিক যা যা প্রয়োজন, তাই করতে হবে। ঠিক যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছিল, ঠিক তেমনভাবে। তিনি কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় বেসামরিক হতাহতের জন্য দায়ী হামাস। আর এই যুদ্ধে যতক্ষণ না ইসরায়েল জিতছে, ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেটা যে কোন মূল্যেই হোক না কেন।
আরো বলেন, পার্ল হারবারে হামলার পর যখন যুক্তরাষ্ট্র জার্মান আর জাপানিদের সঙ্গে যুদ্ধে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন কিন্তু অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল মারাত্মক বোমা হামলাকে। টার্গেটে রেখেছিল হিরোশিমা আর নাগাসাকিকে। সুতরাং ইসরায়েলকে টিকে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। বুঝতে পারছেন? মার্কিন সিনেটরের এমন এই কথা ঠিক কতটা সমালোচনা হতে পারে। যে সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর ইসরায়েলের হামলার বিরোধিতা করছে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, একটা বৃহৎ আকারের মানবিক বিপর্যয়ের। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মার্কিন সিনেটরের বক্তব্যকে ভালো চোখে দেখছে না কূটনৈতিক মহল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলার বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলছেন। অথচ তাঁরই দেশের সিনেটর হাঁটছে উল্টো পথে। বোঝাই যাচ্ছে, মার্কিন ওই সিনেটর ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক। কারন তিনি নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট অর্থাৎ বাইডেনেরও তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের যে অস্ত্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছে, সেটা নাকি উচিত হয়নি। উল্টে তাঁর অভিযোগ, হামাস গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ব্যবহার করছে মানবঢাল হিসেবে।
ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র
যদি গত এক সপ্তাহে ইসরায়েল এবং হামাসের দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গতিবিধি দেখেন, তাহলে একটু ঘেঁটে যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি অবশ্যই চাইছে। কিন্তু ইসরায়েলের পক্ষে নাকি হামাসকে প্রচ্ছন্নভাবে সাপোর্ট করছে তা পরিষ্কার নয়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কথায়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফায় ইসরায়েলি হামলা হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না। পাশাপাশি রাফাতে ইসরায়েলের হামলা উস্কে দেবে, অরাজকতাকে। ব্লিঙ্কেনের গলায় কিন্তু প্রায় ইসরায়েল বিরোধী মন্তব্য। এছাড়াও ইসরায়েলি বাহিনীর হামাস যোদ্ধাদের চেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে বলে যে মত নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, তার সঙ্গেও একমত ব্লিঙ্কেন। আরো বলেন, রাফায় যদি পূর্ণমাত্রায় অভিযান হয়, তাহলে কিন্তু অবিশ্বাস্য রকম ভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটবে। ইসরায়েল গাজার কিছু এলাকা হামাস মুক্ত করলেও, উত্তর গাজার ওই নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় আবার ফিরে এসেছে হামাস। ওদিকে রাফার অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে, ইতিমধ্যেই সেখান থেকে সরে যেতে হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ গাজা বাসীকে। এমনটাই বলছে জাতিসংঘ।
নতুন শক্তি নিয়ে ফিরছে হামাস
এখনো পর্যন্ত হাড় হাল ছাড়েনি হামাস। বরং পিছু হটে আবার সংঘটিত হচ্ছে এই গোষ্ঠী। অপরদিকে জবাব দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাদের। ইসরায়েলের টার্গেট রাফা, কারণ এটাই নাকি এখন গাজায় হামাসের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি। তাই দিনের পর দিন অভিযান জোরদারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ইসরায়েল। গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় মুখোমুখি লড়াই চলছে দুই পক্ষের। গেল সপ্তাহে শেষের দিকেও গাজার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি যুদ্ধ হয়েছে ইসরায়েলির সেনা আর হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে। রাফা অভিযানের পর থেকে, একইভাবে লড়াই হচ্ছে গাজার উত্তর অঞ্চলে। তবে এই চিত্রটা একদমই নতুন নয়। গত সাত মাসের যুদ্ধে গাজায় এটা একটা অত্যন্ত পরিচিত চিত্র। ইসরায়েল একের পর এক অভিযান চালিয়ে গাজার এক একটি এলাকায় ঘোষণা করছে হামাস যোদ্ধা মুক্ত হিসেবে। কিন্তু তা বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, হামাসও খুব শীঘ্রই আবার সংঘটিত হয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসছে। এমনকি ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে হামাস যোদ্ধারা সত্যি সত্যি মিলিত হচ্ছেন। আর সেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে তারা। গত বছরের ৭ই অক্টোবর অতর্কিতভাবে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। নিহত হয়েছিল প্রচুর ইসরায়েলি। এখনো পর্যন্ত শতাধিক ইসরাইলি নাগরিক বন্দী রয়েছে হামাসের হাতে। আর তাদেরকে উদ্ধার করতে আর হামাসকে নির্মূল করতে মরণপণ লড়াই চালাচ্ছে ইসরায়েল। ব্যর্থ যুদ্ধ বিরতি আলোচনা। এবার দেখার শেষ হাসি কে হাসে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম