।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: ফিলিস্তিনের উপর বিশ্বের বেশ কিছু দেশের এত রাগ কেন বলুন তো? কেন দেশটাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না কিছু রাষ্ট্র? এবার পাল্টে গেল চাল। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পাশে অধিকাংশ দেশ। একা ইসরায়েল এবার টক্কর দিতে পারবে তো? ওদিকে ইসরায়েল হামাস যুদ্ধে বলি গাজার সাধারণ মানুষ, রাফা ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলের সেনা। বাতাসে শুধুই গোলা বারুদের গন্ধ। রাফার মানুষগুলো এবার কোথায় যাবে? কী ভাবে রাফাকে ঘিরে ধরেছে ইসরায়েল? রাফায় ইসরায়েল সেনাকে পাল্টা আক্রমণ করছে হামাস, ধ্বংস করে দিল ট্যাংক। এরই মাঝে না ফিলিস্তিন পেল বড় মর্যাদা। জাতিসংঘর সদস্যপদ পেতে পারে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনিদের বহুদিনের স্বপ্ন তাহলে কি এবার পূরণ হবে?
•রাফায় ইসরায়েলকে পাল্টা জবাব দিল হামাস
তাহলে শেষমেষ রোখা গেল না ইসরায়েলকে! ইতিহাসের বড় মানবিক বিপর্যয়টা ঘটতে চলেছে না তো? রাফার অর্ধেক ঘিরে ফেলেছে তেল আবিবের সেনা। এবার কি হবে ? যে যেদিকে পারছে, প্রাণের ভয়ে সে দিকে পালাচ্ছে। বড্ড অসহায় ফিলিস্তিনিরা। ভীষণ উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। এত আলাপ আলোচনার পরেও যেন ব্যর্থ যুদ্ধ বিরতি চুক্তি। এই মুহূর্তে যদি গাজার দিকে তাকান, তাহলে দৃশ্যটা অত্যন্ত করুণ। রাফার মানুষগুলো একটু নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে। না আছে মাথার ছাদ , না আছে ক্ষিদে মেটানোর ন্যূনতম খাবার। ইতিমধ্যেই রাফার পূর্বাঞ্চলের পুরোটা ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে পাত্তাই দিল না ইসরায়েল। আশঙ্কা সত্যি করে, গাজার দক্ষিণ আঞ্চলীয় শহর অর্থাৎ রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করে দিয়েছে দেশটা। শুধু তাই নয়, নিয়ন্ত্রণ করছে পূর্ব আর পশ্চিম রাফা সংযোগকারী সড়ক। গত কয়েকদিন ধরেই, রাফার পূর্ব আর উত্তর পূর্বাঞ্চলে ক্রমাগত শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণ আর গোলাগুলির শব্দ।
তবে ওদিকে থেমে নেই হামাসও। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে টক্কর দিতে তারাও জোরদার করেছে লড়াই। হামাসের দাবি, তারা নাকি ইতিমধ্যেই রাফার পূর্বাঞ্চলে থাকা একাধিক ইসরায়েলি ট্যাংকের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায়, রাফা সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি সেনা ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে প্রায় কয়েক কিলোমিটার ভিতরে। কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলি সেনা রাফায় পূর্বাঞ্চল ছেড়ে দিতে বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছিল। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মতে, তারপরেই প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। আবার কেউ বা শহরের বাইরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁবু টাঙিয়ে। মোটামুটি গাজা উপত্যকার কোনো অংশই আর নিরাপদ নয়। পুরোটাই বসবাসের অযোগ্য। তাই হয়ত, জাতিসংঘ বারংবার গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু শুনবেটা কে? হামাস তাদের দাবিতে অনড়, আর ইসরায়েলও নাছোড়বান্দা। মাঝখান থেকে চরম দুর্দশায় পড়েছে গাজাবাসী। ইতিমধ্যেই রাফার সর্বত্র অংশে ট্যাংকের গোলা পড়তে শুরু করে দিয়েছে। আর যাদের তাবু কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের অবস্থাটা ঠিক বুঝতে পারছেন? কতটা দুর্বিষহ?
•রাফার চাবিকাঠি ইসরায়েলের হাতে
গাজাকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েল। রাফা ক্রসিং এবং তার দুই পাশে বিস্তৃত রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা। যাকে বলা হয় ফিলাডেলফি করিডোর সেটাও সম্পূর্ণ ইসরায়েলি সেনার নিয়ন্ত্রণে। হঠাৎ যুদ্ধে জর্জরিত, গাজা বাসী কিন্তু এই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করতে পারবে না, আবার রাফা সীমান্ত দিয়ে কোন সাহায্যও প্রবেশ করতে পারবে না। যেকোনো মূল্যে ইসরাযেল যেন রাফা থেকে হামাসের ঘাঁটি উপড়ে ফেলতে তৎপর। রাফা ক্রসিং ছাড়াও স্থলপথে গাজার আরও দুটো ক্রসিং রয়েছে। একটা রাফা ক্রসিং থেকে কিছুটা পূর্বে এগিয়ে গেলে কেরেম শালম ক্রসিং, অপরটি হল উত্তরে ইরেজ ক্রসিং। এছাড়াও ইসরাইলের সাথে গাজার আরো চারটি ক্রসিং থাকলেও সেগুলি প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর বন্ধ রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, ইসরায়েল আর গাজার মধ্যে দুটি ক্রসিং বন্ধ। আপাতত খোলা রয়েছে শুধুমাত্র রাফা ক্রসিং। যা গাজার মানুষের কাছে প্রায় লাইফলাইনের মত। কিন্তু সেটাও এখন ইসরায়েলের মুঠোয়। এমনকি এখানকার উপকূলটা রয়েছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধবিশ্বস্ত মানুষ যদি চায় সমুদ্রপত্রে এই অঞ্চল ছেড়ে বেরিয়ে যাবে, তাও সম্ভব নয়। আর গাজার বিমানবন্দরে তো সেই ২০০১ সালেই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। যখন যুদ্ধ বিরতি আলোচনা চলছিল, গাজাবাসী ভেবেছিল, হয়ত এবার একটু স্বস্তি মিলবে, কিন্তু কই? সে আলোচনার আর কেন অগ্রগতি নেই। মাঝ পথে থমকে গিয়েছে পুরো প্রক্রিয়াটাই। কায়রো ছেড়েছে ইসরায়েল আর হামাসের প্রতিনিধি দল। যুদ্ধবিরতি হবেই বা কি করে? যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুকে হুমকি দিয়ে, অস্ত্র চালান স্থগিত করেছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু একাই লড়তে রাজি। যুদ্ধবিরতির সমস্ত প্রচেষ্টা নস্যাৎ হতেই, ইসরায়েল কিন্তু রাফায় স্থল অভিযান শুরু করে দিয়েছে।
•জাতিসংঘে সদস্যপদ পাবে ফিলিস্তিন!
ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাবে কি পাবে না, এই নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলছিল। কিছু দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল, আবার কিছু দেশ এই প্রস্তাবের তুমুল সমর্থক ছিল। এবার সেই সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়ে গেল প্রস্তাব। এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত মূল্যবান এবং ভালো বলে মনে করছে ফিলিস্তিনের মিত্র রাষ্ট্রগুলো। ওই প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ফিলিস্তিনকে সদস্য পদ দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে পুনর্বিবেচনা করা হয়।। এই প্রস্তাবে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলে এক সাধারণ পরিষদের মোট ১৯৩ টি সদস্য দেশের মধ্যে পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩ দেশ। আর বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল সহ নটি দেশ। অপরদিকে ভোটদানে বিরত ছিল ২৫ টি দেশ। তবে হ্যাঁ, হয়তো এই ভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাবে না। কিন্তু ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের যুক্ত করার পক্ষে একটা বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। এর আগেও কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রস্তাবটা উঠেছিল যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তাই সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটা যতটা সহজ ভাবছেন ততটা সহজ কিন্তু নয়।
কারণ ২০১২ সাল থেকে , ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক হিসেবে মর্যাদা পেলেও জাতিসংঘের সদস্য নয়। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে গেলে প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস হতে হবে। তারপর সেটি পাস হবে সাধারণ পরিষদে। তারপর যদি কোন জাতিসংঘের কোনো স্থায়ী সদস্য ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তা আটকে যাওয়া কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যেমনটা হয়েছিল আগের বারে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এবারে কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে আশা করা হয়েছিল হয়তো ১২০ থেকে ১৩০ টা ভোট পড়বে। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে ভোট পড়েছে অনেকটা বেশি। ১৪৩ টা। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই প্রস্তাব পাস প্রমাণ করে দিল, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আর অধিকারের পক্ষে। আর বিপক্ষে রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ওদিকে আবার এই ভোটাভুটির মাঝে নিন্দার সুর শোনা গিয়েছে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডানের গলায়। তাঁর মতে, জাতিসংঘ স্বাগত জানাচ্ছে একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে। বিতর্ক যাই থাকুক। আপাতত সাধারণ পরিষদের ভোটের মাধ্যমে হয়ত জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পেল না ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পেতে চলেছে ফিলিস্তিন। পরিষদের অধিবেশন কক্ষে অন্য সদস্যদের সঙ্গেও আসন পাবে দেশটা। যদিও কোন প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
* ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে অসুবিধা কোথায়?
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন সদস্য পদ পাবে কি পাবে না, এই জল্পনার মাঝে আর একটা প্রশ্ন কিন্তু বার বার ঘুরে ফিরে আসে। কেনই বা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে কিছু কিছু দেশ স্বীকার করতে চায় না? ফিলিস্তিনের উপর এত রাগ কিসের? এক্ষেত্রে কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যেহেতু ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন একে অপরের ঘোর শত্রু, তাই ইসরায়েলের পরম মিত্র দেশ কিংবা যে যে দেশ ইসরায়েলকে অন্ধের মত সাপোর্ট করে, তারা ফিলিস্তিনকে সহজে স্বীকৃতি দিতে চায় না। দুই দেশের বিবাদ মেটাতে কম শান্তি আলোচনা হয়নি। সেই ১৯৯০ সালে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। তারপর ২০০০ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ব্যর্থ হতে শুরু করেছে সেই আলোচনা। ২০১৪ তে এসে ওয়াশিংটনে ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের শান্তি আলোচনার পুরোটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। বড় প্রশ্নের মুখে পড়ে, দুই দেশের সীমানা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রকৃতি, জেরুজালেমের কি হবে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে পৌঁছাবে সহ একাধিক জটিল ইস্যু। আবার ইসরায়েলের কিছু কিছু সমর্থক সহ বহু রাষ্ট্র মনে করে, ১৯৩৩ সালে যে মন্টে ভিডিও কনভেনশন রয়েছে, সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা তার মধ্যে নাকি ফিলিস্তিন পড়ে না। যেখানে বিচার করা হয় স্থায়ী জনগোষ্ঠী, সরকার, অন্য দেশের সাথে সম্পর্কে যাওয়ার সামর্থ্য, একটি নির্দিষ্ট সীমা সহ বহু দিক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম