।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas war: গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, ইতিবাচক সায় হামাসের। বড় বয়ান বাইডেনের। তাহলে কি মিটতে চলেছে নেতানিয়াহু আর হামাসের শত্রুতা? অবশেষে তাহলে রেহাই পাবে গাজার সাধারণ মানুষ? আর ধ্বংসলীলা নয়, ইসরায়েল আর হামাস ধীরে ধীরে সমঝোতায় আসতে চাইছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো বলেই দিয়েছেন, এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় হয়ে এসেছে। বিগত আট মাস ধরে হামাসের হামলার পাল্টা জবাবে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে পুরো গাজা। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ বাস্তহারা। প্রাণ গিয়েছে প্রায় ৩৬ হাজারের বেশি মানুষের। গোটা বিশ্ব এই যুদ্ধ দেখে স্তম্ভিত। ইসরায়েলকে গোটা বিশ্বের কাছে কম জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিস্তর সমালোচনার মুখেও পড়েছে দেশটা। একে একে পাশ থেকে সরে গিয়েছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। তাহলে কি সেই ভয় থেকেই এই যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব? আদৌ কি হামাস যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মানবে? আর যদি মেনেও নেয়, কতটা সুরাহা পাবে গাজার সহায়- সম্বলহীন মানুষগুলো? পাল্টি খেতে পারেন নেতানিয়াহু।
গাজায় যুদ্ধ বিরতির প্ল্যান, চক্রান্ত নাকি স্বার্থের খেলা?
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাস নির্মূল করতে, বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার মূল ইন্ধনদাতা বলে সমালোচকরা মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরকারকে। এর আগেও দুই পক্ষের যুদ্ধ বিরতি নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলেছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে কাতার আর যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কোন ফল মেলেনি। এবার সমালোচনাই বলুন, আর বিতর্কই বলুন, নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে যেন ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বিরতিতে বেশ তৎপর। কোথাও গিয়ে যেন এবার থামা দরকার। বিশ্বের বহু দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতামত, যুদ্ধ হচ্ছে দুই পক্ষের মধ্যে, কিন্তু মাঝখান থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে গাজার সাধারণ মানুষ। যেটা মানবতার বড় বিপর্যয়ের সমান। আর তাই হয়তো হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানালেন। শোনা যাচ্ছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যে প্রস্তাবটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসে বাইডেন যুদ্ধ বিরতির জন্য একটা রোড ম্যাপের প্রস্তাবের কথা বলেছেন। এই প্রস্তাব নাকি আগে কখনো হামাসকে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন হামাসের উদ্দেশ্যে। সোজা কথায়, বাইডেন কিন্তু তার বক্তৃতার মাধ্যমে ইসরায়েল আর গাজাকে যুদ্ধ বিরতির জন্য একপ্রকার চাপ দিলেন। যদিও গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যে এত কথা চলছে, এত চর্চা চলছে, সেই বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, অনেকটা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে জো বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত। কারণ চলতি বছরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যেখানে লড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই নির্বাচনের আগে এমনি থেকেই গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাইডেন যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছেন ঘরে-বাইরে, তাই নিজের গদি ধরে রাখতে যেন এক্সট্রা কোন চাপ নিতে চাইছেন না তিনি। তড়িঘড়ি যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছেন। পুরোটাই বাইডেনের একটা জিও পলিটিক্সের নতুন চাল হতে পারে।
তবে কি বলুন তো, শুধু ইসরায়েল নয়, হামাসও যেন চাইছে যুদ্ধ এবার বন্ধ হোক। কারণ গাজায় যুদ্ধ বিরতিতে ইসরায়েলের দেওয়া রূপরেখাকে ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করছে হামাস। হামাসের প্রতি যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া এবং গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাইডানের আহ্বানের সঙ্গে একমত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। বিষয়টা নিয়েও জোরালো আশা দেখছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইসরায়েলের প্রস্তাব যুদ্ধ বন্ধের আশার আলোর একটা সম্ভাব্য পথ হিসেবে দেখছেন।
যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে কার বেশি লাভ? হামাস নাকি ইসরায়েল?
যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবের তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ বিরতির কথা। এই সময়ের মধ্যে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে ইসরায়েলি সেনাদের। পাশাপাশি হামাসও নির্দিষ্ট সংখ্যক ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তার বিনিময়ে আবার ইসরায়েলে বন্দি কয়েকশো মানুষ মুক্তি পাবেন। গাজার সব এলাকার বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। বাড়ানো হবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য সামরিক আবাসনের ব্যবস্থা করবে। আর এরই মাঝে চলমান থাকবে যুক্তরাষ্ট্র আর কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা। যদি সেই আলোচনা সফল হয়, তাহলে বাস্তবায়ন করা হবে পরবর্তী পর্যায়ের প্ল্যানিং।
দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাসের কাছে অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন। সেই তালিকায় থাকবেন জিম্মি সেনারাও। পাশাপাশি গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও অর্থাৎ গাজায় আর ইসরায়েলের একজন সেনাও থাকবে না। সোজা কথায় পরিস্থিতি এগোবে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের দিকে।
আর যদি এই দুই পর্যায় সফলতা পায়,তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে গাজায় বাস্তবায়ন করা হবে পুনর্গঠন পরিকল্পনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় পুনঃনির্মাণ করা হবে, বাড়ি বিদ্যালয় আর হাসপাতাল। এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে কিন্তু গাজায় প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা যাওয়া সহ বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে আরো মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেবে। এমনটাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইজরায়েলের প্রস্তাবে রাজি হামাস! নেতানিয়াহু পাল্টি খাবেন না তো?
এই প্রস্তাবে রাজি হয়েও যেতে পারে হামাস। কারণ এটাই তো চাইছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা সবসময় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলেছে। আগে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলো খুব একটা কাজে দেয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, বর্তমানে যে চুক্তিটা হতে চলেছে সেই আলোচনায় হয়ত হামাস পুরোদমে সায় দেবে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ইসরায়েলকেও এই চুক্তির পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তটাকে হারানো উচিত নয়। বাইডেন আরো বলেন, হামাস ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে যে রকম শক্তি দিয়ে হামলা চালিয়েছিল, সেই শক্তি বা সেই হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য এখন তাদের আর নেই। অপরদিকে আবার নেতানিয়াহু বলেছেন, সমস্ত জিম্মিদের মুক্তিসহ হামাসের সামরিক এবং শাসন ক্ষমতা নির্মূল না করা পর্যন্ত এই যুদ্ধ কখনই শেষ হবে না।
গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলার কারণে, কূটনৈতিক সম্পর্কের কম ভাঙাচোরা পথ দিয়ে যেতে হচ্ছিল না ইসরায়েলকে। যুদ্ধ বিরতি কিন্তু, দুই পক্ষের জন্যই ভালো। গাজার মানুষগুলো যেমন হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, তেমনি বিশ্বমঞ্চে ইসরায়েল ফিরে পাবে তার পুরনো জায়গা। কিন্তু এখানেও রয়েছে বিস্তর সংশয়। যদি যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়, তার ফলে কি ফিলিস্তিন আর ইসরায়েলের মধ্যে শত্রুতা চিরতরে মিটবে? যদি শত্রুতা জিইয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু পরবর্তীকালে পুনরায় যুদ্ধ হতে বেশি সময় লাগবে না। প্রস্তাবটা ইতিমধ্যেই কাতার ভিত্তিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে হামাসের কাছে। তবে বহু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা মনে করছেন, এই প্রস্তাবে এমন কোন গ্যারান্টি নেই, যার মাধ্যমে ইসরায়েল তার সেনাদের গাজা থেকে পুরোপুরি ভাবে ফিরিয়ে নেবে।
জো বাইডেন কিন্তু তার বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন, এই চুক্তির প্রথম আর দ্বিতীয় দফার মধ্যে সমঝোতা কঠিন হতে পারে। কারণ কিছুদিন আগেই নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, এই যুদ্ধ বন্ধে কখনোই রাজি নন বলেই ঘোষণা করেছিলেন। যদিও যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বক্তব্য একটাই, যতই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হোক না কেন, সেখানে যেন স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইসরায়েল যেন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। কিন্তু প্রশ্ন হল, নেতানিয়াহু আদৌ কি তার কথা রাখবেন? যুক্তরাষ্ট্র পাল্টি খাবে না তো? কারণ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখে কিছুটা বিশ্বাস করতে চাইছে না হামাস। কয়েকদিন আগেই, রাফা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা যাওয়ার পর, কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। তখন হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা বিশ্বাস করে না যে রাফায় ইসরায়েলি অভিযান রেড লাইন ক্রস করতে পারে। আপাতত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে কথা হচ্ছে, এবার দেখা যাক কবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়। কখন বা কোথায় এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
https://www.youtube.com/watch?v=6s1tgyhFH64
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম