।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-United States relations: আবার পাল্টি খেলেন জো বাইডেন! বাড়ছে ফিলিস্তিনের মর্যাদা, রাষ্ট্র হিসেবে একের পর এক দেশের থেকে পাচ্ছে স্বীকৃতি। রাগে ইসরায়েল নিল বড় স্টেপ। কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণে ব্যাকফুটে নেতানিয়াহু, নরওয়েতে গেলেই গ্রেফতার হয়ে যাবেন। কোন বিপদে ইসরায়েল? যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তা কে না জানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় সেই বন্ধুত্বের অঙ্কে একটু গরমিল দেখা গিয়েছিল। তবে তা ছিল পুরোটাই ধোঁয়াশা। ইসরায়েল নাকি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে না। আবারো নতুন করে জোট বাঁধছে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের সামনে নতুন বিপদ খাঁড়া করবে না তো? এবার নিষেধাজ্ঞা আসছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে।
গাজায় গণহত্যা চলছে না? নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত করার কথা শোনা গিয়েছে বাইডেনের গলায়। কিন্তু সেসব পুরোটাই কি ছিল আইওয়াশ? কূটনৈতিক মহলে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলেন আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান। একই সাথে তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন হামাসের তিন কর্মকর্তা গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাশের কাসেম ব্রিগেড মিলিটারি উইং এর কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও। আর এখানেই বড় আপত্তি যুক্তরাষ্ট্রের। নেতানিয়াহুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন পুনরায় আন্তর্জাতিক আদালতে উঠতেই নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন আইন প্রণেতারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলে দিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের যে প্রসিকিউটাররা গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে মার্কিন আইন প্রণেতাদের সাথে একসঙ্গে কাজ করবেন।
কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতদের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল। আর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বলা হচ্ছে, ব্লিঙ্কেনের এই ঘোষণা এমন একটা সময় এল, যখন আইসিসির কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে রিপাবলিকানদের উপর। এই বিষয়ে খুব দ্রুত ভোট হতে পারে। আসলে এখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় জোর। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য দেশ নয়। আইসিসি যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন, শুরুর দিকে কূটনৈতিক মহল বুঝে গিয়েছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ক্ষমতা ঠিক কতটা। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমের পুতিনের বিরুদ্ধেও আইসিসি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। কিন্তু তাতে পুতিনের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। তখন আবার পুতিনের বিরুদ্ধে আনা আইসিসির সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, একটা দেশের স্বাধীন বৈধ এবং গণতান্ত্রিক বিচার প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই বিষয়ে নাক গলানো টা ঠিক হবে না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আইসিসির পদক্ষেপ ভুল। আর তাতেই কূটনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন। যে যুক্তরাষ্ট্র বারংবার গাজায় বেসামরিক মানুষের হামলার বিরুদ্ধে ছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ গ্রেফতারি পরোয়ানার ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর পাশে কেন?
হামাসকে হারাতে চান বাইডেন, নরওয়ে যা করতে পারে
জো বাইডেন আপত্তি তুলে বলেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদনটা আপত্তিকর। কারণ ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে কোন সমতা নেই। একই তালিকায় ইসরায়েল আর হামাসকে রাখার কোন মানেই হয় না। আপাতত যুক্তরাষ্ট্র শক্ত হাতে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের পাশে। আইসিসির যে সমস্ত কর্মকর্তা এই মামলার সাথে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাদের ভিসা প্রত্যাহার করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে তাদের যে কোন সম্পত্তি লেনদেনে চাপানো হবে নিষেধাজ্ঞা। আর এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের সুরক্ষিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নেয়। অপরদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল নাকি গণহত্যা চালাচ্ছে না, বলে দাবি করেছেন বাইডেন। আর এই দাবি করে এখন তিনি ফিলিস্তিন বিক্ষোভকারীদের সমালোচনার মুখে। অথচ এই বাইডেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত গাজায় বেসামরিক মানুষদের কথা বারংবার বলেছেন। তাদের হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করছে।
এর আগেও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অনুষ্ঠানে, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। ইসরায়েলকে কট্টর সমর্থন দেয়ার অভিযোগে, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিক্ষোভকারীরা দেগে দিয়েছে জেনোসাইড জো অর্থাৎ গণহত্যাকারী বলে। তবে বাইডেন এসবকে খুব একটা পাত্তা দেন না। উল্টে ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় দৃঢ় মার্কিন সমর্থনের কথা। বাইডেন জানিয়েছেন, তারা হামাস নেতা এবং হামাসের বাকিদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলের সঙ্গে আছে। যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে পরাজিত করতে চায়, আর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে হামাসকে পরাজিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি অসুস্থ বয়স্ক এবং আহত ইসরায়েলিদের মুক্ত করা যায়, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। আর এই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিক হাউসের অন্তত ৩৭ জন আইনপ্রণেতা। বুঝতে পারছেন? এই যে এতদিন ধরে জল্পনা চলছিল, নেতানিয়াহু নাকি গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কি তাহলে আর এগিয়ে আসবে? প্রশ্নের উত্তরটা তাহলে শুনুন।
আইসিসিতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যে ওয়ারেন্ট জারির আবেদন করা হয়েছে, সেটা যদি সত্যি সত্যি জারি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করতে বাধ্য নরওয়ে। দেশটা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে পরোয়ানা জারি হলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে। এই প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে নরওয়ে এমন ঘোষণা করল। নরওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডের কথায়, যদি হেগ ট্রাইব্যুনালের তরফ থেকে নেতানিয়াহু আর গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে তারা যখনই নরওয়েতে আসবে, তখনই নরওয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করতে বাধ্য থাকবে। নেতানিয়াহু নরওয়েতে গেলে যথেষ্ট রিস্ক রয়েছে।
মর্যাদা বাড়ছে ফিলিস্তিনের, নয়া সমীকরণে চাপে ইসরায়েল
একদিকে যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সহ বহু দেশ বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, তখন পাশে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে তখন নরওয়ে নিয়েছে বড় একটা সিদ্ধান্ত। বেশ কয়েকদিন ধরেই চর্চিত জল্পনাকে সিলমোহর দিল নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোর। তাঁর কথায়, আয়ারল্যান্ড আর স্পেনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে নরওয়ে। তিনি মনে করেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সাম্প্রতিক সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের স্লোভেনিয়া, মাল্টা ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে চলেছে। কারণ ওই অঞ্চলটিতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির প্রতিষ্ঠায় একটা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান খুব দরকার। এবার একই সুর শোনা গেল, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর গলায়। তাঁর কথায়, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ যখন মারা যাচ্ছে, তখন ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনিদের জন্য নিরাপদ ভূমি নিশ্চিত করতে হবে। আর তা হল দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।, যাতে তারা একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি, এই নরওয়ে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ নয়, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। বহুদিন ধরেই বলে আসছে, যদি শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক হয় তবে ফিলিস্তিনকে তারা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এই ধরনের কথা বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই ইসরায়েলকে বেশি সমর্থন করলেও, নরওয়ে প্রথম থেকেই রয়েছে ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনার মাঝে নিরপেক্ষ অবস্থানে। আগাগোড়াই শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে এসেছে দেশটা। এমত পরিস্থিতি থেকে যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছি ইউরোপে তিন দেশ, তখন সম্পর্কে আরো জটিলতা বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনকে মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা করায় স্পেন, নরওয়ে আর আয়ারল্যান্ড এই তিন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বার্তা দিয়েছে ইসরায়েল। দেশে ফেরার নির্দেশও দিয়েছে ওই তিন দেশে থাকা ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের। যার জেরে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই তৈরি হতে চলেছে নয়া কূটনৈতিক সমীকরণ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম