।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশ জুড়ে গ্যাসের আকাল? মাটির নীচে ঠাসা এতো দামী সম্পদ। তারপরেও কেন এলএনজি ইমপোর্ট করতে হয় ওপার বাংলাকে? ভোলায় ইলিশা ১ ও ফেইল করছে? প্ল্যানিংয়েই কি গলদ? আসল কারণ ফাঁস! কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? ভারত এগিয়ে যাবে কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনের দৌলতে? কোন পলিসির ভুলে গ্যাস সংকট সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে পদ্মা পাড়ের দেশটা?১০০ ভাগ চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরেও কেন সাকসেসফুল হতে পারছে না? ভারত লাভটা তুলে নিচ্ছে কৃষ্ণ গোদাবরী বেসিন থেকে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে কম গ্যাসের খনি তো আবিষ্কার হয়নি কিন্তু তারপরেও দেশটাতে গ্যাসের সংকট কমেনি, বরং আরও বেড়েছে।
সংকট কতটা গভীর হলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করেও সেটাকে সামাল দেওয়া যায়না একবার ভেবে দেখুন। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা গোড়ায় গলদ দেখছেন। বলছেন, অতীতে জ্বালানি নিয়ে সরকারের নেওয়া ভুল নীতির কারণেই এখন গ্যাস নিয়ে এই সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটাকে। এরকম চলতে থাকলে বড় বিপদের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট গ্যাসক্ষেত্র ২৯টি, যার মধ্যে ১৯টি থেকে উৎপাদন হয় দেশে মজুদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিবছর এক টিসিএফ করে গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বিদ্যুৎ, সার কারখানা, আবাসিক, পরিবহন খাতে ব্যবহারের কারণে এই মজুদও দ্রুত শেষ হয়ে আসছে কিন্তু সেই হারে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যাচ্ছে না বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে আশঙ্কা বাড়ছে, বড় ধরনের মজুদ পাওয়া না গেলে আগামী ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাবে।তখন কি হবে?
ভারত কিন্তু এই ভুলটা করেনি। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার দৈনিক সরবরাহ করতো ৩০০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় উৎপাদন প্রতিদিন ২৩০ কোটি ঘনফুট। বাকিটা আমদানি করা লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে মেটানো হয়। তাই পেট্রোবাংলা বলছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটা গ্যাস ক্ষেত্র বড় কোনো এফেক্ট ফেলতে পারেনা। যদি কোনো এলাকায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস পাওয়া যায়, সেটা হয়তো কাজে আসতে পারে, না হলে আমদানির ওপর নির্ভর করতেই হবে হিসেবটা বুঝতে হবে। পুরনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে আগে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যেতো, এখন সেটাও অনেক কমে এসেছে। অথচ, গ্যাসের চাহিদা ২০ বছর আগের তুলনায় তিনগুণ হারে বেড়ে গেছে। সেই অনুযায়ী নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি। আর তাই এই গ্যাস সংকট দিনকে দিন বাংলাদেশের বুকে বেড়েই চলেছে।
এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেলে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিবর্তে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির নীতি নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কারণ তখন দেশে গ্যাস খনির সন্ধান চালানো বা গ্যাস উৎপাদনের জন্য কূপ খননের চেয়ে আমদানি করাকে বেশি লাভজনক বলে মনে করা হয়েছিল। আর, আশির দশকে যখন অনেক গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া গেল, তখন এমন অবস্থা ছিল যে, দেশে অনেক গ্যাস আছে, কিন্তু চাহিদা ততোটা নেই! ফলে এরপর আর গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আর এখানেই বড় ভুল হয়ে গেছে। না এখানেই শেষ নয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে বাংলাদেশে যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলো হয়তো বিরাট বড় না কিন্তু সম্মিলিতভাবে সেটার আকার ভালোই, তবে এগুলোর উন্নয়নের জন্য যেসব পদক্ষেপ করা উচিত, সেটা কিন্তু হচ্ছে না বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সবমিলিয়ে দেশীয় গ্যাসের আবিষ্কার এবং উত্তোলনে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ আমদানির ওপর গুরুত্ব বাড়াচ্ছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, ভোলায় তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া গেলেও আরও নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাংলাদেশে এখনো অনেক গ্যাস আছে। যথেষ্ট অনুসন্ধান করা হলে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব! সেটা করা হলে আমদানি করা এলএনজি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বহুলাংশে কমানো সম্ভব লাভ বোঝে বাংলাদেশ ও। টেক্সট ইন আসলে গ্যাস উৎপাদন করলে খরচটা খুব তাড়াতাড়ি উঠে আসে। বরং এই ডলারের ক্রাইসিসের সময় বিদেশ থেকে আমদানি করতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে দেশে অনুসন্ধান করে দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস পাওয়া গেলে, সেটা ব্যবহার করা গেলে বেশি লাভজনক হওয়া যাবে যে পথে অলরেডি হাঁটতে যাচ্ছে ভারত। মনে করিয়ে দিই কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিন থেকে শুধু অপরিশোধিত তেলই নয়, প্রাকৃতিক গ্যাস ও উৎপাদন হবে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এই বেসিন থেকে বেশ কিছু পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসও মিলবে বলে জানা গেছে। এখন বাংলাদেশও সেই পথেই হাঁটতে চাইছে। আরও অনেক ড্রিলিং করতে চাইছে বাংলাদেশের মাটিতে। আর এই স্ট্র্যাটেজিতেই সময়ের সাথে সাথে পদ্মা পাড়ের দেশটাও গ্যাস সংকট সামাল দিতে পারবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম