।। প্রথম কলকাতা ।।
Peregrine falcon: এই যে পাখিটা দেখছেন, এক ভয়ঙ্কর পাখি। এর কাছে বাজপাখি, চিতা সব যেন তুচ্ছ। এ পাখি রকেটের গতিতে ছিনিয়ে নেয় শিকার। এর কাছে পেরে ওটা ভীষণ মুশকিল। শিকারকে আক্রমণ করে ৩৯০ কিলোমিটার বেগে। আকাশ কিংবা মাটি, কোনো ব্যাপারই নয়। আক্রমণের গতি কখনোই কমে না। এটি পেরেগ্রিন ফ্যালকন। বলা হয় এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সর্বোচ্চ গতির পাখি। যদি আপনাকে বলি, দ্রুত কয়েকটি শিকারি প্রাণীর নাম বলুন, নিশ্চয়ই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে বাজপাখি, ঈগল, চিতা এদের কথা। কিন্তু জানেন কি, পেরেগ্রিন ফ্যালকন এর কাছে এরা অতি সামান্য। তাই তো এদের বলে রকেট বার্ড। বাস মূলত উত্তর আমেরিকায়। কখনো কখনো উড়ে আসে ভারত বাংলাদেশে। আরবের শেখদের কাছে পেরেগ্রিন ব্যাপক জনপ্রিয়।
দেখতে কিন্তু ভীষণ কিউট। শরীরের সামনের অংশটা সাদা আর পিছনের দিকটা নীল আর বাদামী রঙের। মাথাটা একটু কালো। স্ত্রী পেরেগ্রিন ফ্যালকনের থেকে পুরুষ পেরেগ্রিন ফ্যালকন আকারে একটু ছোট। মোটামুটি এরা লম্বায় প্রায় ২৩ ইঞ্চি। ওজন হয় দেড় কেজি পর্যন্ত। খুব একটা যে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে, তা না। পৃথিবীর শীতলতম জায়গা গুলোয় দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। তবে পছন্দের জায়গা নদীর উপত্যকা কিংবা তীর।
এদের গড় গতি মানুষের গড় সর্বোচ্চ গতির থেকেও সাত গুণ বেশি। পেরেগ্রিন পৃথিবীর অন্যতম পুরনো শিকারি পাখি । পেরিগ্রিন নিয়ে প্রাণিজগতে আছে করুণ কাহিনী। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় উত্তর আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে কৃষিকাজে ডিডিটি কীটনাশক ব্যবহার করা হত। যার কারণে ফসলের পোকামাকড়ও মরতে থাকে। পাখি বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন, হঠাৎ করেই পেরেগ্রিন নামক একটা পাখি কমে যাচ্ছে। কারণ এই পেরেগ্রিনের প্রধান খাবার ছোট পাখি। আর এই ছোট পাখিগুলোই বা বাঁচবে কি করে? কারণ তাদের মূল খাবার ছিল ফসলের পোকামাকড়। অবশেষে পেরেগ্রিনকে ঘোষণা করা হয় বিপন্ন পাখি হিসেবে। এই পাখিকে সংরক্ষণ করতে ১৯৭০ সালে তৈরি হয় পেরেগ্রিন ফান্ড। অনেক ক্যাম্পেইন করে ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষিদ্ধ করে ডিডিটির ব্যবহার।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/713057141016886/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
জানলে অবাক হবেন, এই পাখিকে অনেকে বলেন রেসিং গাড়ি। চিতা যখন ঘন্টায় প্রায় ১১২ কিলোমিটার বেগে দৌড়ায়, তখন পেরেগ্রিন চলে তার থেকেও চারগুণ বেশি গতিতে। মোটামুটি অ্যান্টারকর্টিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই কম বেশি পেরেগ্রিনের দেখা মিলেছে। ঋতু পরিবর্তনের সময় পরিযায়ী পাখি হিসেবে এরা এশিয়ার দিকে চলে আসে। ভারত বাংলাদেশও এই পাখির দেখা মেলে। বাংলাদেশের ঢাকা শহর কিংবা দেশটার উপকূলীয় এলাকাতেও পেরেগ্রিন দেখা যায়। আরবের শেখদের কাছে এই পাখির কদর অনেকটা বেশি। এই পাখি দিয়ে প্রতি মৌসুমে বের হয়ে রাজকীয় শিকারে।