।। প্রথম কলকাতা ।।
Greetings Card: হাতে লেখা চিঠি পোস্ট করে কাছের মানুষদের খোঁজখবর নেওয়া ? এই সব এখন সেই কোন প্রস্তর যুগের কাজ কারবার। তরুণ প্রজন্ম হয়তো বলে উঠতে পারে, এত সময় কি কারও আছে মশাই ! হাতের কাছেই রয়েছে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট। যখন খুশি যাকে খুশি হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেসবুকে একটা মেসেজ করে দিলেই সমস্যা মিটে যাচ্ছে। এতো গেল খোঁজখবর নেওয়ার কথা । কিন্তু বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে যে শুভেচ্ছা (Wishes) বার্তার আদান-প্রদান করা হয় সেক্ষেত্রেও বিস্তর ফারাক বর্তমানে চোখে পড়ে।
গ্রিটিংস কার্ডের নস্টালজিয়া
আগে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা (New Year Wish) পাঠানোর জন্য বন্ধু কিংবা প্রিয় মানুষটির জন্য যত্ন সহকারে সুন্দর গ্রিটিংস কার্ড (Greetings Card) বাছাই করে কেনা হতো। দোকানে থাকা লম্বা ভিড় ঠেলে নিজের পছন্দের কার্ড কিনে নিয়ে আসা খানিকটা যুদ্ধের থেকে কম ছিল না। ইদানিং Whatsapp আর Facebook এর জালে সেইসব এখন শুধুই স্মৃতি । ধীরে ধীরে সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের চাহিদা। তাই নতুন প্রজন্ম গ্রিটিংস কার্ডকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে। শহরের বুকে আর সেই ভাবে গ্রিটিংস কার্ড কেনার জন্য স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের দোকানে দোকানে ভিড় চোখে পড়ে না। মফস্বলের হালও খানিকটা একই রকম।
হয়তো অনেকেই বলতে পারেন এখন সবকিছুই অ্যাডভান্স হয়েছে। টেকনোলজির সদ্ব্যবহার শিখেছে মানুষ। তাই যেটুকু সময় বাঁচানো যায় সেটারই চেষ্টা করা হয় প্রতিমুহূর্তে। তবে সেকালের একাংশ মানুষ মনে করেন সময় তখনও যথেষ্ট দামি ছিল। শুধু এখনকার মত এতটা স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেনি। টাইম মেশিনের অস্তিত্ব যদি সত্যিই থাকতো তাহলে হয়তো কয়েক বছর আগে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখে আসা যেত। ২৫ ডিসেম্বর থেকেই বাজারের সব দোকানে দোকানে টাঙানো থাকতো সারি সারি গ্রিটিংস কার্ড। সে বিভিন্ন মাপের এবং বিভিন্ন ধরনের।
ছোট থেকে শুরু করে বড়দের জন্যও রকমারি গ্রিটিংস কার্ডের সম্ভার সাজিয়ে বসতেন বিক্রেতারা। এমনকি রাস্তার ধারে ছোট টেবিল পেতে শুধুমাত্র গ্রিটিংস কার্ড বিক্রি করার জন্য বহু মানুষকে বসতে দেখা যেত। কাঁধে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে কিংবা বাবার সাথে সন্ধ্যাবেলায় দোকানে গিয়ে পছন্দ মতো গ্রিটিংস কার্ড বন্ধুদের জন্য বেছে নেওয়া একটা টাস্ক ছিল বটে। আবার টিউশন পরিয়ে ফেরার পথে প্রিয় মানুষটির জন্য পছন্দের একটি গোলাপ আঁকা গোলাপী কিংবা হলুদ খাম বন্দী গ্রিটিংস কার্ড কিনে নিয়ে সাথে সাথেই সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলা। কোনমতেই যাতে কেউ দেখে না ফেলতে পারে।
বদলেছে সময়, সঙ্গে মানুষও
সেই সময়টা অ্যাডভেঞ্চারের থেকে কিছু কম ছিল না। কিন্তু এটাই লুকিয়ে ছিল দারুন একটা আনন্দ। যদিও কার্ড বিক্রেতাদের কথায়, তরুণ প্রজন্ম এখন আর এই কার্ড- টার্ড তেমন পছন্দ করেন না । বাচ্চাদের মধ্যেও এই কার্ডের প্রচলন তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কমে গিয়েছে। রাত বারোটা বাজতে না বাজতে ফোনের এপার থেকে ওপারে বিভিন্ন নববর্ষের মেসেজের আদান প্রদান হয়। তাই সেই ভিড়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে গ্রিটিংস কার্ড । শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্মের ঘাড়ে বন্দুক রাখলেই কিন্তু চলবে না। এখন ফোন আর ইন্টারনেটকে ভীষণভাবে সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছেন সেকালের মানুষরাও।
তাঁরাও সেই ফোনের মাধ্যমেই পুরনো বন্ধুদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের নববর্ষের শুভেচ্ছাটা জানিয়ে দেন। চিঠি লিখে খোঁজখবর নিয়ে নববর্ষের প্রণাম কিংবা ভালোবাসা জানানোর ধৈর্য হয়তো তাদের মধ্যেও নেই। কিন্তু চাঁদের এপিঠ যেমন রয়েছে ওই পিঠটাও তো রয়েছে।
‘ওল্ড ফ্যাশন’-এ খুশি
এমন অনেকেই আছেন যারা সেই ওল্ড ফ্যাশন পদ্ধতিতেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর ইচ্ছে রাখেন। তাই কাছের মানুষটির জন্য বছরের প্রথম দিনে নিজের হাতে লেখা একটা গ্রিটিংস কার্ড সাথে কিছু গিফট নিয়ে পৌঁছে যান। গ্রিটিংস কার্ড এখন বহু মানুষের কাছে ‘সেকেলে’ বলে মনে হতে পারে । আবার কারও কারও ভালো লাগার তালিকায় এখনও রয়েছে গ্রিটিংস কার্ডের নাম। যাই হোক, নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোটাই আসল কথা। সে হাতে লেখা কার্ডের মাধ্যমে অথবা মেসেজের ব্লু টিকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম