।। প্রথম কলকাতা ।।
Solar Storm: সৌর ঝড়ে তোলপাড় মহাকাশ, অন্ধকারে ডুবে যাবে গোটা পৃথিবী! সৌর কণা সেকেন্ডে ১৬০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসে পৃথিবীর দিকে। কাজ করে না ফোনের সিগন্যাল, পৃথিবীর জন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে সৌর ঝড়? পৃথিবীর থেকে সূর্য এত দূরে থেকেও এর প্রভাব কতটা? সৌর ঝড় আসলে কি? এই সৌর ঝড়ের কারণে আদৌ কি মানুষের মৃত্যু হতে পারে?
এই সৌর ঝড় কি? এই নিয়ে নানান প্রশ্ন। সূর্যের অ্যাকটিভ ফেজে সৌর কণা গুলো বিস্ফোরিত হয় যার কারণে তীব্র ইলেক্ট্রোম্যাগেটিক শক্তির উৎপত্তি ঘটে। সূর্যের এই অ্যাকটিভ ফেজ কে বলা হয় সোলার ম্যাক্সিমাম, যা প্রতি ১১ বছর অন্তর ঘটে। প্রতি ১১ বছর অন্তর পৃথিবী সূর্যের সবথেকে কাছে যায়। তখন সৌর ঝড়ের প্রবণতা বেশি থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সৌর ঝড় হবেই হবে। সৌর ঝড়কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় জিও ম্যাগনেটিক স্টর্মও বলা হয়। এই সময় সূর্য থেকে তীব্র গতি সম্পন্ন হাওয়া রূপে বেরিয়ে আসে প্রচুর শক্তি। এক বৈদ্যুতিক চার্জ আর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রবাহ মহাকাশে ছিটকে বেরিয়ে আসে। তবে এর ফল ভয়ঙ্কর হবে এমনটাও নয়। সমস্যা অন্য জায়গায়। যেভাবে মানুষের প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বাড়ছে যার কারণে সৌর ঝড়ের পূর্বাভাস আমাদের জীবনকে ঠেলে দিয়েছে একাধিক সমস্যার দিকে। কয়েকদিন আগেই মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করে। পৃথিবীর দিকে নাকি ধেয়ে আসছে সৌর ঝড়। সূর্যের বুকে তৈরি হয়েছে এক বিশাল বড় গর্ত, যা পৃথিবীর থেকেপ্রায় কুড়ি গুন বড়, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় করোনাল হোল। এটিকে গর্ত বলা হলেও আদতে এটি গর্ত নয়। আসলে সূর্যপৃষ্টের ওই জায়গায় তাপমাত্রা আশেপাশের তুলনায় বেশ কম, তাই জায়গাটিকে দূর থেকে কালো দেখায়। দেখলে মনে হয় যেন সূর্যের গর্ত তৈরি হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করেছেন, পৃথিবীপৃষ্ঠে এত বড় গর্তের কারণে মহাজাগতিক প্রভাব পড়বে বিশাল। আর তার প্রভাব ভুগতে হয়েছে বিশ্বের বহু জায়গাকে। ২০২৩ এর মার্চ এ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের একাধিক জায়গায় হঠাৎ করে কিছু ক্ষণের জন্য রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাসার সোলার ডায়নামিক্স অবজারভেটারি সূর্যের গতিবিধির ওপর সর্বক্ষণ নজর রেখেছিল, বারংবার মানুষকে সতর্ক করেছিল, কিন্তু এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার, আটকানো সম্ভব নয়। সৌর ঝড় মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার এবং আয়নোস্ফিয়ারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
অনেকেই বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী মানেন, আবার কেউ মানেন না। বলা হয় এই বাবা ভাঙ্গাও নাকি ২০২৩ সালে পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর সৌর ঝড়ের কথা বলেছিলেন। আপনি নিশ্চয়ই বাবা ভাঙ্গার নামটা শুনেছেন। বুলগেরিয়ার এই মুনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিশক্তি হারানোর সত্ত্বেও অসাধারণ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ২০২৩এ পৃথিবীতে আসবে ভয়ঙ্কর সৌর ঝড়। এখনো ২০২৩ শেষ হতে অনেকটা বাকি, তাই আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সৌর ঝড়ের ফলে কি পৃথিবীর উদ্ভিদ থেকে প্রাণী সব মারা যেতে পারে? ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সবকিছু! ওলটপালট হয়ে যেতে পারে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম! যতটা ভয় পাচ্ছেন ততটা ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আসলে সৌভাগ্যবশত পৃথিবীর মানুষ পুরু বায়ুমণ্ডল পেয়েছে। যা সৌর ঝড়ের শক্তিকে শোষণ করতে পারে। সৌর ঝড়ের আঁচ পৃথিবীতে লাগলেও তার খুব কম শক্তি পৃথিবীর মাটিতে এসে পৌঁছায়। তাই মারাত্মক প্রভাব মানুষকে পোহাতে হয় না। অর্থাৎ মানুষ বা পশু পাখি মারা যায় না। কিন্তু গবেষকদের মতে, সৌর ঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ না করেও পৃথিবীর বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক অবকাঠামোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যার কারণে স্যাটেলাইট ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ফাইবার অপটিক কেবল যা ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভালো রাখে সেগুলি কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সৌর ঝড়ের কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে উপগ্রহগুলিতে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জিপিএস নেভিগেশন, মোবাইল ফোনের সিগন্যাল সহ রেডিও সিগন্যাল। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর। এছাড়াও মহাকাশের বড়সড় প্রভাব পড়ে। কোন মহাকাশচারী সৌর ঝড়ের কবলে পড়লে মারাত্মক কিছু ঘটতে পারে। ১৮৮৯ সালে একটি সৌর ঝড় পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে, যার জেরে কানাডাতে প্রায় নয় ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
আসলে সৌর ঝড়ের সাথে বিপুল পরিমাণে সৌর কণা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। বলা হয়,এই সময় সূর্য নাকি ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রায় কয়েক লক্ষ টন গরম গ্যাস সূর্যের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাস ইলেকট্রিক চার্জ যুক্ত, যেখান থেকে তৈরি হয় এক চৌম্বকীয় তরঙ্গ। তাই এই সময়ে ব্ল্যাকআউটের আশঙ্কাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি মার্চে হওয়া শুরু ঝড়ের কারণে আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে, নিউ মেক্সিকো সহ অস্ট্রেলিয়ায় রঙিন মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছে। ২০২৩ সালে মাত্র তিন মাসেই এই নিয়ে সপ্তম বিস্ফোরণ ঘটেছে সৌরমণ্ডলে। ২০২০ সালে সূর্যের ১১ বছরের নতুন সাইকেল শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই সাইকেল চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে ২০২৫ সালে। সৌর ঝড় শেষ ভয়ঙ্কর ভাবে পৃথিবীতে আঘাত এনেছিল প্রায় সতেরো বছর আগে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম