।। প্রথম কলকাতা ।।
Dev Anand: ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা তিনি। বলিউডের চিরসবুজ অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মেয়েদের মধ্যে দারুন জনপ্রিয় ছিলেন এই অভিনেতা। তাঁর পুরো নাম ধরম দেবদত্ত পিশোরিমল আনন্দ। যাঁকে সবাই দেব আনন্দ বলে জানেন। জনপ্রিয়তার জেরে তাঁকে বদলাতে হয়েছে নিজের পোশাক।
বলিউডে সেই সময় নামি অভিনেতার কমতি ছিল না। কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন একজনই, আর তিনি হলেন দেব আনন্দ। তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব খুব কমই ছিল সেই সময়। ছবি ‘কালাপানি’ মুক্তি পাওয়ার পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেতা। এমনকি সেই সময় সকলের ‘স্টাইল আইকন’ হয়ে উঠেছিলেন এই ব্যাক্তি। অভিনেতা যাই পরতেন সেটাই ট্রেন্ড হয়ে উঠত। আর তখনকার সময়ে হোয়াইট শার্ট-ব্ল্যাক কোর্টকে স্টাইল আইকন হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। যাতে বাঁধ সেধেছিল আদালত। এক প্রকার কালো পোশাক পরে রাস্তায় বের হওয়া বারণ ছিল অভিনেতার।
কোনও ফিল্মি পরিবার থেকে আসেননি তিনি। বাবা, বড় দাদা আইনের লোক ছিলেন। অভিনেতা নিজে পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। কলেজে পড়তে পড়তেই ফিল্মি দুনিয়ার ভূত মাথায় চাপে। অশোক কুমারের একটি ছবি দেখে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে। লাহৌরের কলেজের কলা বিভাগের সেই ছাত্র পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বলিউডের একজন আদর্শ অভিনেতা, সফল পরিচালক ও দক্ষ প্রযোজক। ১৯২৩-এর ২৬ সেপ্টেম্বর আনন্দ পরিবারে জন্ম হয় অভিনেতার।
তাঁর পরিবারে প্রথম থিয়েটার বা সিনেমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন দাদা চেতন আনন্দ। ভবিষ্যতে ফিল্ম প্রযোজক এবং পরিচালক হবেন ভেবেছিলেন। প্রথম চল্লিশের দশকের শুরুতে তিনিই গুরুদাসপুর ছেড়ে বম্বে পাড়ি দেন। আর তার কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে হাজির হন দেব আনন্দ। দাদার সঙ্গে চওলের ঘুপচি ঘরে থাকতেন নায়ক। সেই সঙ্গে উপার্জনের জন্য ছোটখাট কাজ করতেন। মিলিটারি পোস্টাল সার্ভিসে মাসে ৪৫ টাকা বেতনের চাকরি করেছেন। সেইসঙ্গে নাম লিখিয়েছিলেন থিয়েটারের দলে। আর থিয়েটার করতে গিয়ে দেখা হয় বাবু রাও পাইয়ের সঙ্গে। শোনা যায়, অভিনয়ের থেকেও বেশি অভিনেতার হাসিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাবু রাও। তারপর ১৯৪৬-এ ‘হাম এক হ্যায়’ ছবি দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি। এরপর ১৯৪৭-এ ‘জিদ্দি’ ছবির দরুন তাঁর দিকে নজর যায় সকলের। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে।
তবে জনপ্রিয়তার সঙ্গে চর্চায় ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও। সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন প্রায়ই শোনা গিয়েছে। কিন্তু তাঁর মনে যিনি জায়গা করেছিলেন, তিনি ছিলেন সুরাইয়া। তাঁর এবং সুরাইয়ার সম্পর্ক ছিল সেই সময় বলিউডের হট টপিক। ১৯৪৮-এ পছন্দের মানুষের সঙ্গে মুক্তি পায় দেব আনন্দের ছবি ‘বিদ্যা’। দু’বছর নিজেদের সম্পর্ক গোপনে রেখেছিলেন দুই তারকা। এরপর সম্পর্ক প্রকাশ্যে এলে ১৯৪৯-এ ‘জিৎ’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় পালিয়ে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেন দেব আনন্দ-সুরাইয়া। কিন্তু অবশেষে সেই সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। কারণ ছিল অভিনেত্রীর পরিবার। পরে ১৯৫৪-য় মোনা সিংহ ওরফে কল্পনা কার্তিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন দেব আনন্দ। কিন্তু তাঁর মুখে প্রায়ই শোনা গিয়েছে সুরাইয়ার কথা।
দাদা চেতনের সঙ্গে নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘নবকেতন ফিল্মস’ খুলেছিলেন অভিনেতা। একের পর এক হিট ছবিও দিয়েছেন। ‘জনি মেরা নাম’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘গাইড’-এর মত ছবি হিট করেছে। ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব। এছাড়া ‘দাদা সাহেব ফালকে’, ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড’, ‘আইফা’ সহ বড় বড় সম্মান পেয়েছেন তিনি। ৮০-র দশকে যখন অভিনেতার বয়স ৬০-এর কাছাকাছি, তখনও নায়কের চরিত্রে অভিনয় করার অফার পেয়েছেন। ততদিনে ছবি করা কমিয়েছেন দিলীপ কুমার। ১১৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন বলিউডের এই সুপারস্টার। ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। ২০১১-র আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন বলিউডের চিরসবুজ অভিনেতা দেব আনন্দ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম