।। প্রথম কলকাতা ।।
ইউরোপের এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশে। রাতের আলোয় যেন মায়াবী রাজ্য। ঢাকার বুকে বাধাহীন হয়ে ছুটছে গাড়ি। নেই কোন যানজট। এমনটাও ভাবা যায়? বলছি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা। আরো স্মার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ। বদলে যাচ্ছে দেশটার অর্থনীতি। নজর পড়ছে গোটা বিশ্বের। ঝড় আসতে চলেছে জিডিপিতে।
মনে হবে, বাংলাদেশ নয়, রয়েছেন ইউরোপের রাস্তায়। নতুন গতি পেয়েছে ঢাকা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন যাত্রীরা। আপাতত উদ্বোধন করা হয়েছে বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের সাড়ে এগারো কিলোমিটার পথ। টোল প্লাজা ছাড়া চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের কোথাও গাড়ি থামবে না। এখানে না আছে কোন মোড়, না আছে কোন ক্রস মুভমেন্ট। পার্কিং অ্যাক্টিভিটি বা পথচারী চলাচল করে না। খুব ফ্রিলি বাধাহীন ভাবে বেরিয়ে যায় গাড়ি। ১০ কিলোমিটারের মধ্যে র্যাম্পের কোনো ঝামেলা নেই।
ঢাকার এই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট। প্রথম তিন সপ্তাহে টোলের অঙ্ক ছাড়িয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে চলাচল করবে প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন। তখন আয়টা কত হবে? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কোন বাধা নেই বলে কিন্তু যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন না। গতিবেগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিমি পর্যন্ত। আইন বহির্ভূত কাজও আটকাতে সবসময় নজরদারি রেখেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আগে বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা রোডে পৌঁছতে মানুষের কালঘাম ছুটত। এখন স্বাভাবিকের থেকেও কম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ। যারা কারওয়ান বাজারে অফিস পৌঁছতে প্রায় দেড় ঘন্টা পথ পাড়ি দিতেন, এখন তারা অফিস পৌঁছাচ্ছেন মাত্র কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিটে। লোকাল বাসে প্রচুর স্টপেজ থাকে, সময়ও খায় প্রচুর। কখনো বা ভাড়া আদায় করে অনেকটা। সেই সব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছে অফিস যাত্রীরা।
ব্যস্ত ঢাকায় এই এক্সপ্রেসওয়ে বানাতে খরচ কিন্তু কম হয়নি। প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ১৯১ কোটি টাকা। প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরেও কাজ পড়েছিল প্রায় এক যুগের বেশি। অবশেষে সেপ্টেম্বরে দুই তারিখে কিছুটা অংশের উদ্বোধন হয়। এই এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা নামার জন্য র্যাম্পের সংখ্যা প্রায় ৩১ টি। র্যাম্প সহ দৈর্ঘ্য ৪৭ কিলোমিটার। মোট খরচ হয়েছে ৮৯৪০ কোটি টাকা । বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত যতগুলো মেগা প্রকল্প বা সড়ক তৈরি হয়েছে তার মধ্যে সবথেকে ব্যয়বহুল এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পের ২৭ শতাংশ ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি বিনিয়োগ করেছে বেসরকারি অংশীদার।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তো খুব সাধারণ ব্যাপার। বহু দেশেই দেখা যায়। তাহলে বাংলাদেশ নিয়ে এত হই হই রই রই ব্যাপার কেন? আসলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গত এক মাসের রেজাল্ট বলে দিচ্ছে, শহরের যানজট কমবে। বাঁচবে সময় ও খরচ। এভাবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ যত উন্নত হবে, ততই দেশের অর্থনীতিতে পড়বে গভীর ছাপ। ফুলেফেঁপে উঠবে জিডিপি। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটা দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর কাটতে না কাটতেই রীতিমত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটা, যা একটু বিস্ময়করও বটে। এত কম সময়ের মধ্যেইট দেশটা গড়ে উঠছে স্মার্ট রূপে, যার অন্যতম প্রমাণ এই ধরনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। তবে এই এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা গভীর প্রভাব ফেলবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সব কিছুই নির্ভর করছে সময়ের উপর।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম