।। প্রথম কলকাতা ।।
Teenage Child-Parents Relationship: জন্ম থেকে একটি শিশুর কাছে সব থেকে আস্থা ভরসা বিশ্বাসের জায়গা হল তাঁর মা এবং বাবা। ধীরে ধীরে সেই শিশুটি যখন বড় হতে থাকে তাঁর কাছে প্রায়োরিটি বদলাতে থাকে। আর অভিভাবক হিসেবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হল নিজের টিনেজার সন্তানকে বোঝা। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের আমরা টিনেজার বলে থাকি। এই বয়সটা এমনই যেখানে মা-বাবা সন্তানের প্রায় শত্রু সমান হয়ে ওঠে। কারণ এই সময় টিনেজারদের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর এই সেনসিটিভ সময়ে যদি বাবা-মা সঠিকভাবে মানসিক সম্পর্ক না স্থাপন করতে পারেন সন্তানের সাথে তাহলে পরবর্তীতে তা খারাপ ফল দিতে পারে। বরং ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলিতে তিক্ততা আনতে পারে।
এই বয়সে ছেলেমেয়েরা স্কুলে কলেজে সময় কাটাচ্ছে, টিউশন পড়তে যাচ্ছে অথবা নাচ গান কম্পিউটার শিখতে যাচ্ছে। বন্ধুদের সাথে সময় কাটাচ্ছে, বাইরে থেকে অনেক কিছুই শিখে আসছে। তার মধ্যে যে সব ভালো এমনটা বলা যায় না। আবার সবই যে খারাপ এমনও বলা যায় না। বাবা মায়ের উপদেশ গুলি টিনেজারদের কাছে খানিকটা বিষের মতো শুনতে লাগে। কারণ সেই সময় তাদের প্রয়োজন আরও স্বাধীনতার। অনেক বাবা মা বুঝে উঠতে পারেন না এই সময় ঠিক কীভাবে নিজের টিনেজ সন্তানের সাথে মানসিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা যাবে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে সেই রকমই কিছু তথ্য।
* শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন বুঝুন
বয়ঃসন্ধির সময় ধীরে ধীরে আপনার সন্তানের শারীরিক পরিবর্তন আসছে। হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণে গলার স্বর ভারী হয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের মুখে দাড়ি উঠছে তেমনি মেয়েদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন আসছে। দেখা যায় হঠাৎ করেই সন্তান লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে গিয়েছে, আপনার বেশিরভাগ কথাতেই রিয়্যাক্ট করছে ,মিথ্যে বলছে, কিছু লুকাচ্ছে, তর্ক করছে। এই নাটকীয় পরিবর্তনকে একেবারেই হালকা ভাবে নেবেন না। টিনেজ সন্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে গেলে এই সময় আপনাকে সমজদারের মতো কাজ করতে হবে।
* সহজেই হতাশ হবেন না
এই সময় দেখা যায় সন্তান তাঁর পরিবারের সঙ্গে কম সময়ে ব্যয় করতে চাইছে। বেশি থাকতে চাইছে বন্ধুদের সাথে। নিজের স্বাধীনতাকে সবার আগে রাখছে। এতে বাধা দিতে গেলেই স্বাভাবিকভাবে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় মা-বাবা এবং সন্তানের মধ্যে। টিনেজ হল এমন একটি বয়স যেখানে সম্পূর্ণরূপে মানসিক এবং শারীরিক উন্নয়ন হয় না। তাই তাদের প্রত্যেকটি কার্যকলাপের জন্য দায়ী অসম্পূর্ণ মানসিক উন্নয়ন। এক্ষেত্রে মা-বাবা যদি সহজেই হতাশ হয়ে পড়েন তাহলে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটতে পারে। বরং আপনার টিনেজ সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। এতে জীবনের ওই কঠিন সময়টাও খানিকটা সুন্দর কাটবে।
* সহানুভূতিশীল হন
টিনেজ সময় কিন্তু আপনিও পার করে এসেছেন। তাই এটা কখনই ভুলে যাবেন না। আপনার সন্তানের মনের মধ্যে কী চলছে তা বুঝতে না পারলে তাঁর সাথে মন খুলে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। তাকে ধমকে চমকে নয় বরং আপনার কথার মাধ্যমে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বোঝানোর চেষ্টা করুন।
* বিশ্বস্ত হয়ে উঠুন
নিজের সন্তানের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ান। আপনার কথাগুলি তাকে শুনতে যখন বাধ্য করছেন তেমনই তাঁর কথাগুলি ধৈর্য সহকারে শুনুন। তাকে সময় দিন। তাঁর বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করুন। একটা এমন সম্পর্ক তৈরি করুন যেখানে আপনার সন্তান আপনার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে। ঠিক যেমনটা তাঁর বন্ধুদের সাথে বলে। তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিন।
* শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠুন
আপনি অবশ্যই চাইবেন যাতে আপনার সন্তান আপনাকে শ্রদ্ধা করুক , সম্মান দিক ভালোবাসুক। এটা পাওয়ার জন্য আপনাকেও ঠিক একই জিনিস করতে হবে। আপনার সন্তান আপনার উপরে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে অথবা ভয়ে নির্ভরশীল থাকবে এমনটা হতে দেবেন না। সন্তানের ব্যক্তিত্ব, তাঁর ধারণা, তাঁর মতামত, তাঁর আবেগ প্রত্যেকটি জিনিসকে সম্মান দিন। তাঁর খুঁতগুলি নয় বরং গুণগুলিকে উৎসাহ দিন।
নিজের টিনের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করার জন্য তাকে যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ দিন। আপনি যেমন ভাবে চাইছেন তেমন ভাবে নয় বরং সে যেমন ভাবে চাইছে তাকে তেমনভাবে তৈরি হতে দিন। অবশ্যই ভুল করলে বাধা দিন, বোঝান কিন্তু বিচক্ষণতার সঙ্গে। সন্তানের সঙ্গে কিছুটা সময় দিলেই বুঝতে পারবেন সে কী চাইছে কী ধরনের মানসিক টানা পোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে। আপনার পক্ষে যদি তা সম্ভব না হয় তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। সন্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং তাদেরকে সঠিক পথে চালনা করার জন্য মা-বাবাকেও নিজেদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। যার ফল শেষে গিয়ে ভালোই হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম