।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran-Israel Conflict: যুদ্ধের আবহে হঠাৎ ইরানের হাতে চলে এল মারাত্মক অস্ত্র। যা দেখে আশঙ্কায় পশ্চিমি দুনিয়া। রাশিয়া (Russia) আর ইরান (Iran) এক জোট হয়ে কোন ফাঁদে ফেলতে চাইছে শত্রুপক্ষকে? তলে তলে ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা টের পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞাকে তুরি মেরে উড়িয়ে দিল তেহরান। এবার কি হবে? অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে ইরান। আটকাবে কে? ইরানের কামিকাজে ড্রোন (kamikaze drone) এত ভয়ঙ্কর কেন? কী আছে এতে? আন্তর্জাতিক আলোচনার এখন হট টপিক এই একটা ড্রোন। এর ক্ষমতা জানলে হতবাক হয়ে যাবেন। ইসরায়েলের (israel) বিরুদ্ধে ইরান এই ড্রোন ব্যবহার করবে না তো?
পশ্চিমি দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞাকে আবারও বুড়ো আঙুল দেখালো ইরান। বানিয়ে ফেলল ভয়ঙ্কর হাতিয়ার। রাশিয়াকে ফলো করে, ইরান যে এতটা মারাত্মক অস্ত্র বানাবে কে ভেবেছিল? বলছি কামিকাজে ড্রোনের কথা। এই ড্রোনের নাম হয়তো আপনি এতদিনে শুনেছেন। এই ড্রোন শত্রুদের জন্য ঠিক কতটা মারাত্মক তার নমুনা দেখেছে বিশ্বের কিছু কিছু দেশ। কিন্তু এবার সেই ড্রোনটাকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সাজালো তেহেরান, যা শত্রুপক্ষের উপর আরো শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানতে সক্ষম। সম্প্রতি ইরানের ড্রোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য। যদিও দমে যাওয়ার পাত্র নয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। পশ্চিমি দুনিয়ার আশঙ্কা ছিল, তলে তলে তেহরান হয়ত এমন কোন ফন্দি আঁটছে, যা এই উত্তেজনামূলক পরিস্থিতিতে বোমা ফাটাতে পারে। আর ঠিক তাই হলো।
রাশিয়ার ল্যানসেটের আদলে নতুন রূপ দিল কামিকাজে ড্রোনকে। স্বাভাবিকভাবেই পাল্লা ভারী হল ইরানের। এই ড্রোন ইরানের হাতে আসতেই মধ্যপ্রাচ্যের বহুদেশ তেহেরানকে সমঝে চলতে শুরু করে দিয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ওয়াশিংটনের অভিযোগ ছিল, রুশ সেনাবাহিনীকে কামিকাজে ড্রোন দিয়ে সাহায্য করছে ইরান। আর সেই ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের বুকে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে মস্কো। শুধু তাই নয়, ইরান এই যুদ্ধাস্ত্র তুলে দিয়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের হাতে। আর এই অভিযোগেই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বহু ড্রোন উৎপাদনকারী কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা শেষমেষ ধোপে টিকল না। উল্টে ইরান কাউকে কাউকে পরোয়া না করে, আরো অত্যাধুনিক করে তুলল কামিকাজে ড্রোনকে। এত কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে মূল কারিগর, ইরানের সামরিক বাহিনীর শাখা ইসলামিক রিভেলিউশনারি গার্ড কর্পস।
জানলে অবাক হবেন, কামিকাজে ড্রোনকে বলা হয় আত্মঘাতী। আর তাই হয়তো এর নাম শুনলে ভয় পায় গোটা বিশ্ব। কারণটা কি বলুন তো? আসলে কামিকাজে নির্ধারিত নিশানায় আঘাত করে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলা চালাতে পারে কয়েকশো কিলোমিটার দূর পর্যন্ত। অর্থাৎ অনেক দূর থেকে বসে এই ড্রোনের মাধ্যমে কড়া নজর রাখা যায় শত্রুর উপর। তারপর নিশানা দেখে টার্গেট করলেই বজ্রের মতো আছড়ে পড়ে এই ড্রোন। একদম রাশিয়ার ল্যানসেট ড্রোনের মত। নিশ্চয়ই আপনার মনে এতক্ষণে একটা প্রশ্ন জাগছে, কি এই কামিকাজে? ড্রোনটার নামই বা এমন কেন? মূলত কামিকাজে একটি জাপানি শব্দ। যার অর্থ দৈবী হওয়া। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানি সেনাবাহিনীতে ছিল কামিকাজের স্পেশাল অ্যাটাক ইউনিন নামক এক বিশেষ শাখা। যাদের মূল কাজ ছিল, শত্রুপক্ষের যুদ্ধ জাহাজে আত্মঘাতী হামলা চালানো। মূলত কামিকাজে পাইলটরা প্রথমে একটি প্লেনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বারুদ ভরে, সেই প্লেন নিয়ে আছড়ে পড়ত মার্কিন রণতরী গুলোর উপর। ব্যাস, নিমেষে খেল খতম। জাপানি পাইলটদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের উপর এই ধরনের হামলা করতে দেখা গিয়েছিল।
এই ড্রোনের আবার নতুন করে চর্চা শুরু হয় ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ বাঁধলে। বলা হয়, ইউক্রেনে নাকি রাশিয়া এই ধরনের চালকবিহীন বারুদ ঠাসা আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়াকে এই ড্রোন দিচ্ছে ইরান। তার নাম ছিল শাহেদ ১৩৬। কিয়েভের অভিযোগ, ইরান রাশিয়াকে এই ধরনের প্রায় ২৪০০ টি ড্রোন দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের যে খুব ভালো বন্ধুত্ব তা তো জানেনই। এই ড্রোন বানানোর ক্ষেত্রেও কিন্তু একে অপরের পাশের দাঁড়ায় দুই দেশ। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের দাবি, হয়তো বা কামিকাজে ড্রোন বানানোর ক্ষেত্রে রাশিয়া আর ইরান নানান প্রযুক্তিগত কিংবা ডিজাইন দিয়ে একে অপরকে সাহায্য করেছে । রাশিয়া নাকি ইরানের তৈরি কামিকাজে শাহেদ ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের মাটিতে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে। যে ড্রোন অত্যন্ত সহজলভ্য, অথচ ভীষণ নিখুঁত। তাই তো রাশিয়া নিজস্ব প্রযুক্তিতে শাহেদ ড্রোনের সিরিজ তৈরিতে নেমেছে।
যদি বলা হয়, ড্রোন শিল্পে বড়সড় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে ইরান, তাহলে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে না। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোর চিত্র বলছে, সমরাস্ত্র শিল্পে ব্যাপক উন্নতি করেছে তেহরান। আর ইরান যে এই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, উন্নতি করছে, সেই নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে খোদ পশ্চিমা বহু সংবাদ মাধ্যমে। বর্তমান দিনে, যেকোনো যুদ্ধ ড্রোন ছাড়া একেবারেই অচল। ড্রোন কিংবা মানুষ বিহীন এই ধরনের আকাশ যান যুদ্ধের অন্যতম সেরা হাতিয়ার। ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, হয়তো ইরান নিজের সক্ষমতা আরো বাড়াতে চাইছে। কারণ ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমাদের বৈরিতার কারণে বিষয়টা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তেহরান। তাই এখন বেশি জোর দিচ্ছে নিজের মাটির উপর। তেহরান একদমই হতাশ হয়ে দমে যায়নি। ইউরোপ আমেরিকার তরফ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসা সত্ত্বেও অস্ত্র শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে। মনে করা হয়, বর্তমানে ইরান ড্রোন শক্তিতে যে কোন দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।
তবে এই সফলতা ইরান কিন্তু একদিনে পায়নি। শুরুটা করেছিল, ১৯৮০ দশকে। তবে ইরানে ড্রোন শিল্পের মূল বিপ্লব শুরু হয় ২০১১ সাল নাগাদ। ওই সময় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূপতিত করেছিল মার্কিন কোম্পানি লক হিড মার্টিনের তৈরি একটা গোয়েন্দা ড্রোন। অভিযোগ ছিল, ড্রোনটি নাকি গোয়েন্দাগিরি করতে ইরানের আকাশ সীমায় ঢুকে যায়। তারপর থেকে আরো সতর্ক হয়ে যায় তেহেরান। তৈরি করে ফেলে একটা সিমোর্গ ড্রোন। একে একে ডেভলপ করতে থাকে শাহেদ ১২৯, শাহেদ ১৩৬ এর মত ড্রোন গুলো। তারপর তো সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হইচই ফেলে দিয়েছে শাহেদ ১৩৬ কামিকাজে ড্রোন। যে ড্রোন নিয়ে এতক্ষণ কথা বলছিলাম। এটি এমন একটা ড্রোন যা মুহূর্তেশত্রুপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে পারে। নিখুঁত হামলা চালাতে পারে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তৈল ক্ষেত্র থেকে শুরু করে গ্যাস ক্ষেত্রের মত বড় বড় স্থাপনা গুলোতে।
অথচ আশেপাশের কোন কিছুর বড়সড় কোন ক্ষতি করে না। শুধুমাত্র টার্গেটে থাকে লক্ষ্যবস্তু। আর তার থেকে বড় কথা কি বলুন তো? ইরানি এই ড্রোন অত্যন্ত সস্তা। যুদ্ধের ব্যয় ভার কমাতে, বিশ্বের বহু দেশেরই এই ড্রোনের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। ইরানি ড্রোনের দিকে একটু বেশি ঝুঁকছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী, লেবাননের হিজবুল্লা, ফিলিস্তিনের হামাস, ইরাক সিরিয়ার ইরান সমর্থিত যোদ্ধা এবং বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী। কেউবা প্রকাশ্যে, আবার কেউবা আড়ালে ইরান থেকে ড্রোন কিনছে। কাজাখস্তান , কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোও ইরানের ড্রোনের অন্যতম ক্রেতা।
ইরান যে ড্রোন শিল্পে হু হু করে উন্নতি করছে, তা নিয়ে কিন্তু কম মাথা ব্যাথা নেই ইসরায়েল সহ পশ্চিমি দুনিয়ার। একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র দিয়েও থামাতে পারছে না ইরানকে। আপাতত ইরানের পরিকল্পনা, একটা শক্তিশালী ড্রোন বহর তৈরি করা। আর ওদিকে তো রাশিয়া ইরানের ড্রোন ব্যবহার করে যেন গোটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চাইছে, ইরানের শক্তিমত্তার বিষয়টি। মাছ কয়েক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র মন্তব্য করেছিল, সস্তা আর প্রাণঘাতী ড্রোন উৎপাদনে সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইরান। আর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে নিজের ড্রোনের ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছে তেহেরান।
গোটা বিশ্বজুড়ে এখন যুদ্ধের উত্তেজনা। একদিকে ইরান ইসরায়েলের সংঘাত, তো অপরদিকে ইজরায়েল হামাসের সংঘাত। মাঝখান থেকে জড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্বসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য। স্বাভাবিক ভাবেই, ইরানের হাতে কামিকাজে অত্যাধুনিক রূপে ফিরে আসায় চিন্তায় পড়েছে শত্রুপক্ষরা। যদি যুদ্ধ বাঁধে, আর ইরান যদি যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে, তাহলে ইরানকে মোকাবিলা করতে গেলে বেগ পেতে হবে শত্রুদের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম