।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বড় সংকটে বাংলাদেশ, রিজার্ভে হুড়মুড়িয়ে ধ্বস নামছে। ডলারের আয় ব্যয় এর মধ্যে ব্যালেন্সের অভাব? হাসিনা সরকারের এতো পদক্ষেপ, কেন তার পরেও রিজার্ভের ঘাটতি মিটছে না ওপার বাংলায়? নির্বাচনের পরেই কি ১৮০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ঘুরে যাবে ছবিটা? পরিস্থিতিটা দিনকে দিন কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা? কোন পথে কাটবে বিপদ? কি করলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পদ্মা পাড়ের দেশটা? বাংলাদেশে ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য বলছে প্রায় প্রতি মাসেই রিজার্ভের পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় কমছে। বাংলাদেশে রিজার্ভ আসলে কততে এসে দাঁড়িয়েছে?
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২২ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ নভেম্বরে রিজার্ভ ২৫.১৬ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। এই এগারো মাসের মধ্যে শুধু জুন মাসেই মোট রিজার্ভের পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছিল। বাকি মাসগুলোতে ক্রমান্বয়ে রিজার্ভের পরিমাণ কমেছে। আর সেপ্টেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার কমেছে কিন্তু কেন এটা ঘটছে? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে ডলারের অভাব আংশিক পূরণ করার জন্য প্রতি মাসে একশ কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করছে। এভাবে বিক্রি চলতে থাকলে রিজার্ভ কমতেই থাকবে।তাছাড়াও, ডলারের আয় ও ডলারের ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতাও এটার কারণ। মূলত সমস্যাটা শুরু হয়েছে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের এফেক্ট থেকে। বুঝতে হবে কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সব কিছু কেনার প্রবণতা বাড়ে। তখন রিজার্ভ খরচ হওয়া শুরু হয়।
এরপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যের সাপ্লাই-চেইন ব্যাহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে রিজার্ভের উপর চাপ পড়ে। তাছাড়া এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যতম কারণ। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির কারণে সুদের হার দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর কারণেও বাংলাদেশে রিজার্ভে টান পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সমস্যাটা আরও বাড়বে। বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় আর ঋণ শোধের জন্য যে পরিমাণ ডলার ব্যয় হয়, তার তুলনায় যদি যোগান না বাড়ে, তাহলে রিজার্ভের উপর টান থাকবে। এটা ফ্যাক্ট বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে, কিন্তু এখনো রিজার্ভের ঘাটতি মিটছে না কোনোভাবেই। ডলার সংকট সামাল দেওয়ার দুটো টেকসই উপায়ের কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
১. ডলারের যোগান বিভিন্ন উৎস থেকে বাড়ানো যা বাংলাদেশ বর্তমানে চেষ্টা করে চলেছে।
২. চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতাকে সামাল দিতে হবে।
এক্ষেত্রে অনেকেরই প্রশ্ন, কোনো দেশের জন্য কী পরিমাণ রিজার্ভ থাকা দরকার বা কী পরিমাণ রিজার্ভ থাকলে সেটাকে বিপজ্জনক বলা যাবে না? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোনো দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকলে সেটা কোনো বিপদ সংকেত দেয় না। সেক্ষেত্রে, অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে এখনও আশা আছে। বাংলাদেশ অলরেডি অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। আমদানি কমিয়ে আনার মাধ্যমে চলতি হিসাবে ভারসাম্য ফেরানো হয়েছে। নির্বাচনের পরে আরও হবে, চান্স আছে। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের যে ৯ বিলিয়ন ডলার আসেনি, এই অর্থবছরে নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা শেষ হয়ে গেলে, জানুয়ারির পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে তার সিংহভাগ ডলার ফেরত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাছাড়া আমেরিকা ও ইউরোপের মতো বড় বড় অর্থনীতিতে সুদের হার ও মুদ্রাস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। সুদের হার কমলে বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যে আর্থিক খাতে যে বড় ঘাটতি আছে সেটা পাল্টে যাবে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার আবার সক্রিয় হবে, বাংলাদেশ এখন যে সুদের হার বাড়িয়েছে সেটি কার্যকর হবে। সেই সময় ডলার প্রবাহও স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। রিজার্ভের এ অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও ব্যালেন্স করা সহজ হবে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের জুন নাগাদ সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বলে আশা অর্থনীতিবিদদের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম