।। প্রথম কলকাতা ।।
China-Russia relations: যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের চক্ষুশূল, মধ্যপ্রাচ্যে নিজের জায়গা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে হাজির আরো বড় বিপদ। একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে রাশিয়া আর চীনের রাষ্ট্রপ্রধান। আর তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কালো মেঘ। বিষয়টাকে সামনাসামনি তাচ্ছিল্য করলেও, যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গিয়েছে, ভূ রাজনীতিতে পিঠ থেকে যাচ্ছে ওয়াশিংটনের। সেই ভয় থেকেই কি জড়িয়ে পড়ছে একের পর এক যুদ্ধে? কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি আর কতদিন? এই মোড়লগিরি করার ব্যাপারটা এবার হয়ত শেষ হতে চলেছে। ঠিক কী ভাবে কোণঠাসা হচ্ছে? পতনের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য।
রাশিয়া-চীনের জোটে যুক্তরাষ্ট্রের মুখভার
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন চলতে চাইছে তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র নীতিতে। কোন বিগ ব্রাদারের আন্ডারে নয়। চীন আর রাশিয়া যখন তাদের সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন করে এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে, তখন বহু দেশ পিছু পিছু সাপোর্ট করছে এই দুই দেশকে। বেইজিং- মস্কোর সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন বুঝিয়ে দিল, জো বাইডেনের পায়ের তলার মাটি এবার নড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গিয়েছিলেন চীনে। তাঁর এই সফরে চোখে মুখে এখন অন্ধকার দেখার জোগাড় যুক্তরাষ্ট্রের। চীন রাশিয়ার বন্ধুত্বে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুতিন আর শি জিনপিং নাকি এক হচ্ছে ক্ষতি করার পরিকল্পনা নিয়ে। ট্রাম্পের কথায়, তিনি শি জিনপিং কেও ভালোভাবে চেনেন। আবার পুতিন কেও ভালো করে চেনেন। যেখানেই তারা একত্রিত হন সেখানেই তারা ক্ষতি করেন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর কূটনৈতিক মহলের মতে, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রের মনে এতদিনে একটা ভয় কাজ করছিল? চীন আর রাশিয়ার নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করতেই প্রকাশ্যে বেরিয়ে এল সেই ভয়। যদিও সত্যি সত্যি একটা বড় ভয়ের কারণ রয়েছে। কারণ মস্কো আর বেইজিং একসাথে প্রতিরক্ষা শিল্পে অংশীদারিত্বের কথা বলেছে। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। তাই হয়ত, মার্কিন প্রশাসন আগে থেকেই এই দুই দেশের অংশীদারিত্বের বিরুদ্ধে। প্রয়োজন পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দিল ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরির দিন শেষ, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব
এই যে এই যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে হুমকি দেয়, কখনো সতর্কবার্তা দেয়, আবার কখনো বা সরাসরি নিষেধাজ্ঞা চাপায়, আদৌ কি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সেই আগের জায়গাটা পোক্ত রয়েছে? মোটেও না, বরং অন্যান্য দেশগুলো অস্ত্র শানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। যদি উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বন্দ্বের দিকে তাকান, সেখানেও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ফেঁসে আছে দক্ষিণ কোরিয়াকে সাপোর্ট করার জন্য। উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রকে বিন্দুমাত্র ছেড়ে কথা বলে না। শুধু তাই নয়, তার মুখে পরমাণু হামলার হুমকিও শোনা গিয়েছে। তলে তলে কিম জং উন আবার হাত মেলাচ্ছে চীন আর রাশিয়ার সঙ্গে। আবার ওদিকে যদি তাইওয়ান আর চীনের সংঘাতের দিকে তাকান, সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রয়েছে বড় বড় অভিযোগ। মার্কিন প্রশাসক নাকি অস্ত্র যুগিয়েছে তাইওয়ানকে। যার জেরে চীনের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আর সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা তো রয়েইছে। হামাস আর ইসরায়েলের সংঘাতের মাঝে প্রথমে ইসরায়েলকে সাপোর্ট করে বেশ বিতর্কের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই এখন পিঠ বাঁচাতে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করতে উঠে পড়ে লেগেছে ওয়াশিংটন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র বলে মনে করা হয় ইরানকে। একইভাবে ইরান আর ইসরায়েলের সংঘাতেও ইরানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও একইভাবে, ইউক্রেনের পক্ষে থেকে মস্কোর চরম শত্রু হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন। একইভাবে যদি ভারতের কথা বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মাখোমাখো সম্পর্ক আর নেই। ইরান আর ভারতের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভারতও ছেড়ে কথা বলেনি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্বের দাদা নয়। বরং ক্রমশ কমে আসছে তার প্রভাব আর প্রতাপ। ঠান্ডা যুদ্ধের পর, গোটা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে আধিপত্য ছিল তা আজ শেষের পথে। এখানে ভারত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলছে না ঠিকই, কিন্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিদেশ নীতিতে দিল্লি এবার হাঁটছে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরতার পথে।
সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে পররাষ্ট্রনীতি আর কূটনৈতিক ক্ষেত্রগুলো ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে দরকার পড়বে না। আর সম্প্রতি পান্নুন হত্যার ছক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ করেছিল তা খন্ডন করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। একদিকে যখন ভারত আর রাশিয়ার সম্পর্ক আরো মজবুত হচ্ছে, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের মধ্যে থাকা সম্পর্কের যে টানাপোড়েন, সেখানে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে ইরানের চাবাহার বন্দর। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশ্লেষক মহল মনে করছে, বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের অন্যতম কারণ নাক গলানোর অভ্যাস। মাঝেমধ্যেই যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কথা বলে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মেরামত অনেকটা হলেও, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যেভাবে ঢাকা আর ওয়াশিংটনের সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছে ছিল, তা সবাই দেখেছে।
অস্ত্রের বাজার হারাবে যুক্তরাষ্ট্র! রাশিয়াকে বাঁচাচ্ছে চীন
আর একটা জায়গায় গিয়ে বড় ধাক্কা খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সেটা হল অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে। বিশ্বের বহু দেশে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করে। শুধু তাই নয়, যখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বৈঠক হয় সেখানে অস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গও তোলে। এই যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইউক্রেন, তাইওয়ান, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো। ২০২২ থেকে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে অস্ত্র বিক্রি করেছে প্রায় ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের। সামরিক খাতেও ওয়াশিংটনের ব্যয় সবথেকে বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই, পূর্ব ইউরোপের আশপাশের দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষা জোরদার করতে অস্ত্রের উপর একটু বেশি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের উপর। যার জেরে মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থায় এসেছে নতুন জোয়ার। অস্ত্র বাজারের দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য মানতে পারছে না চীন আর রাশিয়া। হয়তো তাই এইবার দুই দেশ জোট বেঁধেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। অস্ত্রের বাজারে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাশিয়াও। সেই জায়গায় গিয়ে কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বড় ধাক্কা খেতে পারে, শুধুমাত্র ভুল কূটনৈতিক চালে।
সম্প্রতি বেইজিং সফরে থাকার সময় ভ্লাদিমির পুতিন আর শি জিনপিং যে একে অপরকে আলিঙ্গন করেছে, এইটুকু ছাড়া হোয়াইট হাউস চীন-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কে বিস্ময়কর কোন অগ্রগতি দেখেনি। দেখুন, যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও অনেকবার চীন রাশিয়ার সম্পর্কে নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীন নাকি রাশিয়াকে ইউক্রেনে হামলার জন্য তলে তলে অস্ত্র সরবরাহ করছে। মস্কোর সশস্ত্র বাহিনীকে চীন সাহায্য করতে চায় বলেও মনে করে ওয়াশিংটন। ওদিকে আবার চীন আর রাশিয়া মনে করছে, তাদের মধ্যে থাকা সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বর্তমানে বিশ্বে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক হবে এই দুই দেশ। ভ্লাদিমির পুতিন আরো বড় পরিসরে সমর্থন জানাতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যেভাবে রাশিয়া পশ্চিমাদের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মস্কোর অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে আসছে বেজিং।
বুঝতে পারছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাটা ঠিক কেমন? বিশ্বে যে সমস্ত দেশগুলো নিজেদের শক্তি নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেই পরাশক্তি গুলোই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে আর মানতে চাইছে না। যদি যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সাপোর্ট পেত, তাহলে হয়ত ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলা যেত, গোটা বিশ্ব জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে দাদাগিরি চলছে সেটা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু তা নয়। সেই সুরে এখন তাল কেটেছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম