।। প্রথম কলকাতা ।।
Pakistan Crisis: ২০২২ এর নভেম্বর মাসের কথা ভাবুন, তখনও আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তান(Pakistan)। চীন(China) বড় গলা করে বলেছিল পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পাশে থাকবে। পাকিস্তানকে সমর্থন করবে চীন। এমনটাই সরাসরি জানিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সেই কথা হয়ত গাল ভরা ছিল। সেই কথার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝখানে কেটে গিয়েছে কয়েকটা মাস। পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তান হয়ত শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ রুটি কিনতে গিয়ে বেজায় নাজেহাল, অন্যান্য জিনিস তো দূর। তারপর পেশোয়ারে মসজিদ হামলার ঘটনায় দেশটির ভিত নড়ে গিয়েছে। বহুদিন ধরেই পাকিস্তান রিজার্ভ সংকটে ভুগছিল, যার কারণে বৈদেশিক ঋণের ভার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। গতবছরের শেষের দিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সঙ্গে পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এক সমঝোতা চুক্তি করে। যার ফলে দুই দেশের আন্তসীমান্ত লেনদেন আগের থেকে অনেক সহজ হবে। কিন্তু শেষমেশ পাকিস্তান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে চীন।
চীন পাকিস্তানের নানান জায়গায় অবকাঠামো এবং খনিতে খনন কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। দুই দেশ মিলে একত্রে শুরু করেছিল বেশ কয়েকটি প্রকল্প। এছাড়াও চীনের প্রতিশ্রুতি মতো পাকিস্তানে দ্রুতগতির রেল স্থাপনের প্রযুক্তি তৈরি হবে। কিন্তু সব পরিকল্পনা যেন এক লহমায় ওলটপালট হয়ে গেল। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়ত ভয় পাচ্ছে চীন। বর্তমানে পাকিস্তানের অবস্থা এমন যে দেশটি এখন সম্পূর্ণ দারিদ্র্যের পথে পৌঁছে গিয়েছে। পাকিস্তানের বহু বন্ধু রাষ্ট্র ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না। পাকিস্তানকে দ্বারস্থ হতে হয়েছে আইএমএফ-এর কাছে। পাকিস্তান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে চেনা পরিচিত বন্ধু চীন। পাকিস্তানকে নিঃশর্তে ঋণ দেওয়া থেকে সরে এসেছে। উপরন্তু সিপিইসির নামে পাকিস্তানের উপর ঋণের বোঝা চাপিয়েছে। অপরদিকে চীন ভাল সাজতে শ্রীলঙ্কাকে ঋণে ছাড় দিচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের এই প্রতারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিশেষজ্ঞ মহল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান টুইট বার্তায় জানান, “চীন শ্রীলঙ্কাকে ঋণ পরিশোধে ২ বছরের স্থগিতাদেশ দিয়েছে।” অথচ চীন এখনো পাকিস্তানকে ঋণমুক্তির প্রস্তাব দেয়নি। যেখানে চীন পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান এখন ভয়াবহ বিপদের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানকে চীনের কাছ থেকে ঋণ ত্রাণ চাওয়ার উপদেশ দিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের প্রায় ৫২ শতাংশ চীনের। একই সময়ে পাকিস্তানের মোট ঋণের মাত্র ৩০ শতাংশ দিয়েছে চীন। সম্প্রতি আইএমএফ শ্রীলঙ্কার ঋণের বিষয়ে আর্থিক আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান দাবি করেছে যে চীন পাকিস্তানকে ৯ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্কের এই শীতলতা ভালো চোখে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। যার নেপথ্যের অন্যতম কারণগুলি হল চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পে বিলম্ব, সন্ত্রাসী হামলার হুমকি প্রভৃতি। এর আগে আমেরিকা পাকিস্তানের নেতৃত্বকে স্পষ্টভাবে বলেছিল যে চীনকে ঋণে ত্রাণ পাওয়ার জন্য বলা উচিত। এই নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল চীন। অপরদিকে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য। এমত পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি পাকিস্তানের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ালে দেশটি শ্রীলঙ্কা হতে বেশি সময় লাগবে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম