।। প্রথম কলকাতা ।।
Sri Lanka-China: শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর জলে গেছে! এবার দ্বীপটাই বিক্রি হয়ে গেল চীনের কাছে? কলোম্বর মাটিতে সোনা ঢালছে চীন? এতো বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার, এর ভেতরেই গুপ্তধন জমাবে বেজিং? লটারি পেল সিনোপেক। দেশ হাতানোর নেশায় বুদ শি জিং পিং? কিভাবে ভারতের তেলের বাজার ক্যাপচার করতে জাল বিছিয়ে দিচ্ছে বেইজিং। শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ভয়ংকর খেলায় ডুবে ড্রাগনের দেশ শ্রীলঙ্কার মাটিতে চীনের বিপুল খাজানা। হামবানটোটাই চীনের ট্রাম্পকার্ড শ্রীলংকার তেলের ব্যবসায় ভারতীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল একচেটিয়া রাজত্ব করছিল। কিন্তু এবার ছবিটা ১৮০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরে যাচ্ছে। ৯৯ বছরের জন্য লিজে নেওয়া ভারত মহাসাগরের উপর শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরকেই ফের টার্গেট করল চীন। এই বন্দরেই ৪৫০ কোটি ডলারের তেল শোধনাগার তৈরির প্ল্যান কলম্বোর। এমনিতেই হামবানটোটা বন্দরে ষ চীনের আধিপত্যে ভারত হতাশ। তার উপর ওই বন্দরে চীনের সংস্থা তেল শোধনাগার খুললে ভারতের ব্যবসা কতটা মার খাওয়ার চান্স থাকছে? টেনশনের কারণ আছে।
শ্রীলংকার তেলের ব্যবসায় ভারতের প্রতিযোগী চলে আসছে কিন্তু, শ্রীলঙ্কার ইকোনমিক্যাল স্ট্যাটাসটাও বুঝতে হবে। সেই ফায়দাটাই তো তুলছে চীন। দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল। সেই সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কলোম্ব। শ্রীলঙ্কা এখন বাজার সম্প্রসারণে মন দিয়েছে! আরও বেশি সংস্থার সামনে তারা শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দিচ্ছে। এখন শ্রীলঙ্কার নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অর্থনীতি চাঙা রাখতে জ্বালানির প্রয়োজনও আছে। আর এইসব দিক ভাবনা চিন্তা করে চীনা সংস্থা সিনোপেকের উপর বড় এক্সপেক্টেশন রাখছে শ্রীলংকা। সিনোপেক বলে কথা। সক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম তেল পরিশোধনাগার পরিচালনা করে সিনোপেক। পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য তৈরিতেও তারা সবার ওপরে। এত দিন তারা চীনের ভেতরেই পরিশোধনাগার পরিচালনা করেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধি আরও বড় হবে। সিনোপেক সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির খুচরা ব্যবসা শুরু করেছে। আর এবার তেল পরিশোধনাগার এখানে একটা কথা বলতেই হচ্ছে। সিনোপেক শুধু শ্রীলঙ্কার বাজারের জন্য এই তেল পরিশোধনাগার করছে না। চায়না মার্চেন্টস পোর্টের সঙ্গে তাদের পার্টনারশিপ রয়েছে।
এর মাধ্যমে সিনোপেক হামবানটোটা বন্দরে সমুদ্রগ্রামী জাহাজে তেল বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে জাহাজের ব্যস্ত এই পথে নির্মিত হামবানটোটা বন্দরে ২০১৯ সাল থেকেই তেল বিক্রি করছে চীনা কোম্পানিটি। মনে করিয়ে দিই হামবানটোটা আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর। কলম্বোর পরে এটাই ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলংকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর। ২০১০ সালে চালু হওয়া এই বন্দরের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব নিয়ে চর্চা তখন শুরু হয় যখন চীন এই বন্দরকে লিজ নেয়। কিন্তু, আগে বিষয়টা মোটেও এমন ছিল না। শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরই শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘের সরকার দেশের অর্থনৈতিক ভান্ডারে বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি করার তাগিদে এই বন্দর বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের এক সংস্থাকে ১১২ কোটি ডলারের বিনিময়ে বন্দরটি লিজ় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। চুক্তি করা হয়, বন্দরটিকে ঢেলে সাজাতে এবং অত্যাধুনিক বানাতেও বিনিয়োগ করবে ওই চীনা সংস্থা। শ্রীলঙ্কার বন্দরে চীনের বিনিয়োগ দেখেই টনক নড়ে আন্তর্জাতিক মহলের। কিন্তু কেন অর্থনেতিক সঙ্কটের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এই বন্দরের দায়িত্ব নিল চীন? উঠতে শুরু করে সেই প্রশ্নও।
চীনের এই ‘উদার’ মনোভাবে সন্দেহ তৈরি করেছিল ভারতের মনে। হামবানটোটা বন্দরের দায়িত্ব চীন নেওয়ার এই খবর দিল্লির জন্য ভাল নয় বলে সতর্ক করেছিলেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। হামবানটোটা বন্দরে চীন শক্তপোক্ত নৌঘাঁটি গড়ে তুলে ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলার কৌশল নিতে চায় বলেও মনে করে ভারত। আর ঠিক এই কারণেই ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক জোরদার হলেই যে হাম্বানটোটা চীনা এফেক্ট থেকে বেরোতে পারবে। এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ফলে হামবানটোটা ব্যবহার করে চীন যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনেকদূর এগোতে পারবে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শ্রীলঙ্কার বুকে ভারতের আধিপত্যে ভাগ বসানো চীনের জন্য এতটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল চীনের বুকে কোমর বাঁধছে। শ্রীলঙ্কায় আরো ব্যবসা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবার শুধু শ্রীলঙ্কায় চীনের ভবিষ্যতের রোড ম্যাপ দেখার অপেক্ষা। বাকিটা বলবে সময়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম