।। প্রথম কলকাতা ।।
নেপালের জন্য কী রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীন? চীন যা পারে নি, সেটাই কি করে দেখাচ্ছে ভারত? ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় হচ্ছে ছোট্ট দেশ নেপালের। দেখেশুনে জ্বলছে বেইজিং। উভয় সংকটে পড়ে যাচ্ছে নেপাল। সবদিক থেকেই ক্ষতির চান্স বাড়ছে। চীনা বিনিয়োগ বড় ফাঁদ, নেপালের বিপদ রুখতে পারবে তো নয়াদিল্লি? ভারত-চীন টানাপোড়েন এর আঁচে পুড়ছে নেপাল? বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে নেপাল? একটা ভুল চালেই পাল্টে যেতে পারে হিসেব। ভারতের সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতায় চীন রুষ্ট হলে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নেপালের বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। চীন অসহযোগিতা করলে নেপালের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।
আর তাই প্রচণ্ডের ভারত সংক্রান্ত নীতিতে খুশি হতে নয় তাঁরই দলের একাংশ। ভেতরে ভেতরে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। আয়তনে ছোট হলেও, নেপাল মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ একটা দেশ। যার দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দিক জুড়ে ভারত, উত্তরে চীন। দুই পড়শি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। আর সেই টানাপড়েনের আঁচ এসে লাগছে নেপালেও। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেপাল নিরপেক্ষ। সাতে-পাঁচে থাকে না। চীন-ভারত দ্বন্দ্বেও নেপালের কোনও ভূমিকা দেখা যায় না। সেটাও কিন্তু খানিক নিরাপত্তার স্বার্থেই নিরপেক্ষ। কারণ, তার দুই পড়শিই তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই চীন, ভারত উভয়ের সঙ্গেই নেপালের সম্পর্ক ভালো। উভয়ের কাছ থেকেই পায় সাহায্য। কিন্তু, তারপরেও ব্যালেন্স করতে পারছে না নেপাল।
কী ঘটছে? মে মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড ভারতে এসেছিলেন। ভারত-নেপাল পারস্পরিক সম্পর্ক, সহযোগিতার বিষয়ে কথাবার্তা বলে গিয়েছেন। তার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে নেপালের ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। যে ‘ঘনিষ্ঠতা’কে মোটেই ভালো চোখে দেখবে না চীন। আর এখানেই নেপালের বিপদ। চীন রুষ্ট হলে নেপালের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তেই পারে। তখন কী হবে? কী করবে নেপাল? ভারতের এই নীতি সহ্য করতে পারছে না চীন। প্রচণ্ডের ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, ভারত এবং নেপালের মধ্যে সীমান্তকে কেন্দ্র করে যে বিবাদ রয়েছে, তা ‘বন্ধুত্বের আবহেই’ মিটিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু, চীন তা চায়না। উল্টে ফায়দা হাসিল করাই বেজিং এর লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে সত্যিই কী দু দেশের সম্পর্ক হিমালয়ের উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে? প্যালপিটিশন বাড়ছে চীনের। পুরো বিষয়টাকে হালকা ভাবে নিতে পারছে না প্রচণ্ডের দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যেরা। ভারতের সঙ্গে নেপালের ‘ঘনিষ্ঠতা’ চীনেরও নজর এড়াচ্ছে না। যার ফলে পরবর্তীকালে বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
নেপালের মতো হিমালয়ান দেশের হাতিয়ার তার নিরপেক্ষতা। দীর্ঘ দিন ধরেই নেপাল জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করে এসেছে। এই পর্যায়ে এসে তা বদলে ফেললে বিপদ বাড়বে বই কমবে না বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশও। কারণ, হিসেবটা বুঝতে হবে। নেপালের উপর চীনের প্রভাব অপরিসীম। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় বেজিংকে। তারা নেপালে উন্নয়নমূলক কাজও করে থাকে। না এখানেই কিন্তু শেষ নয়, চীনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলে। নেপালের তরাই অঞ্চলে ওই ভাষার একাধিক প্রশিক্ষণ স্কুল খুলেছে চীন। নেপালের মাধেশি গোষ্ঠীর মানুষদের ওই ভাষার প্রশিক্ষিত করছে তারা। ভবিষ্যতে তাঁদের শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। নেপালে রাস্তাঘাট, গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ, রেললাইন নির্মাণে চীনের ভূমিকা রয়েছে। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নেপালকে।
চিন থেকে নেপালে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বৃদ্ধির উদ্দেশে চীনের ব্যাঙ্কগুলিকে তরাই অঞ্চলে শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে নেপাল। দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি রয়েছে। এমনকি, তাইওয়ান বিতর্কেও চীনের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে নেপাল! তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্বীকার করে তারা। চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজার রাখতেই এই স্ট্যান্ড পয়েন্ট নেপালের। তাই ভারতের সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতায় চীন চটলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা হিমালয়ান ওই ছোট্ট দেশটার। এরই মাঝে আরো একটা বিষয় নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার পর এবার কি টার্গেট নেপাল? বিশেষজ্ঞদের দাবি, চীনা ঋণের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ খুইয়েছে ভারতের প্রতিবেশী এই দুই দেশ। এই আবহে নেপালে বেজিংয়ের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি চিন্তা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লির। তাহলে কী আর্থিক ভাবে হিমালয়ের কোলের দেশটিকে কব্জা করতে চাইছে বেজিং? পুরো বিষয়টার দিকে কড়া নজর রয়েছে নয়া দিল্লির।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম