।। প্রথম কলকাতা ।।
ঘটনা-অঘটন-চমৎকার-রোমাঞ্চ সবকিছু মিলিয়ে শেষ হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের আসর। অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অভূতপূর্ব, অতুলনীয় বললেও চলতি বিশ্বকাপকে বিশেষায়িত করা যাবে না। এর আগে এতো অঘটনের নিদর্শন অন্য কোন বিশ্বকাপে হয়েছে কিনা মনে পড়ে না। একের পর এক অঘটনের সাক্ষী থেকেছে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২।
‘গ্রুপ’ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ক্যামেরুন। ভিনসেন্ট আবুবাকরের শেষ মুহূর্তের গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে ক্যামেরুন। আবুবাকর তৃতীয় আফ্রিকান ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে গোল করলেন। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার কোন আফ্রিকান দলের কাছে হার মানল সেলকাওরা। সকলেই আশা করেছিল কাতার বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে গ্রুপের তিনটি ম্যাচ জিতেই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে ব্রাজিল। কিন্তু সে গুড়ে বালি। উল্টে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে হেরে বসল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
শেষ ষোলো আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলের। তাই প্রথম একাদশে এদিন ঢালাও পরিবর্তন করেন তিতে। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন এদিন জয় না পেলেও ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় পা রাখবে। ব্রাজিলের তারুণ্যে ভরপুর দলটা একের পর এক আক্রমণে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ। কিন্তু ছন্দপতনে গোল খেয়ে বসে ব্রাজিল। তিতে হয়তো ভাবতে পারেননি দুর্বল ক্যামেরুন এমনটা ঘটিয়ে দেবে। শুধু হারালই না বিশ্বকাপের ইতিহাসে লজ্জার রেকর্ড গড়ল সেলকাওরা। ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়ের ফলে ২০ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় পেল আফ্রিকান দেশটি।
প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ডকে হারায় ব্রাজিল। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দুর্দান্ত রেকর্ড গড়ে তিতের দল। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা ১৭ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ে ব্রাজিল। ১৯৯৮ সাল থেকে চলতি বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই রেকর্ড নিজেদের দখলে করে সেলকাওরা। এর আগে ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে ২০০৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে টানা ১৬ ম্যাচ জিতে এই নজির ছিল জার্মানির দখলে। সেই রেকর্ড নিজেদের দখলে করে নেয় ব্রাজিল। তবে সেলকাওদের জয়রথ স্তব্ধ করে দিল ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের আগে ব্রাজিল গ্রুপপর্বে হেরেছিল নরওয়ের কাছে।
বিশ্বকাপে এর আগে ক্যামেরুন, ঘানা, আইভরি কোস্ট, মরক্কো সহ সাতটি আফ্রিকান দলের মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল। তবে সব ম্যাচেই জয় পেয়েছে তাঁরা। ক্যামেরুনের সঙ্গে এর আগে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল। যার মধ্যে পাঁচবারই জয় পেয়েছিল সেলকাওরা। বিশ্বকাপে শেষ দুইবার ১৯৯৪ সালে ৩-০ এবং ২০১৪ সালে ৪-১ গোলে ক্যামেরুনকে হারিয়েছিল ব্রাজিল। আর এবার তৃতীয় দেখায় ব্রাজিলকে ১-০ গোলে পরাজিত করল ক্যামেরুন। তবে ক্যামেরুনই একমাত্র দল যারা তিনটি বড় ইভেন্টে ব্রাজিলকে পরাজিত করার নজির গড়েছে। ২০০০ সালে অলিম্পিক গেমস, ২০০৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ এবং ২০২২ সালে বিশ্বকাপ। যদিও এই হারের প্রভাব গ্রুপের টেবিলে পড়েনি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোয় পৌঁছেছে ব্রাজিল। দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে সুইৎজারল্যান্ড।