।। প্রথম কলকাতা ।।
Putin-biden: যুক্তরাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলতে ইরানের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে চীন রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কি তাহলে অন্ধকারে? হঠাৎ কূটনৈতিক মহলের এমনটা মনে হওয়ার কারণটা কী? রাশিয়ার হুঙ্কার, ছেড়ে কথা বলবে না। সত্যি সত্যি শক্তি ক্ষয়ের পথে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে কি সেই জায়গা নেবে চীন? নাকি রাশিয়া কিংবা ইরান? বিশ্বে ছড়ি ঘোরানোর রাজ কার হাতে থাকবে? যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে উঠেপড়ে লেগেছে অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার প্রথম পেরেকটা পুঁতে দিলেন জো বাইডেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার উপর হামলা। বড় হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন পুতিন। এবার কী হবে?
রাশিয়ায় বাইডেনের হামলার অনুমতি, পুতিনের হুঙ্কার
এই যে রাশিয়ার ভূখন্ডে জো বাইডেন হামলার অনুমতি দিলেন, তার মানে বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা ঠিক কত দূর এগিয়েছে? এই দুটো দেশ এতদিন শুধুমাত্র পিছনে প্রক্সি যুদ্ধে মেতেছিল। সামনাসামনি বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে, কিন্তু এবার যেটা হতে চলেছে তার ফলাফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানো মানে পুতিন যে ছেড়ে কথা বলবে এমনটা এক্কেবারেই নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাপারটা এখনো প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। তবে আন্তর্জাতিক মহলের জোর গুঞ্জন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিয়েভকে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভের কাছে রুশ সীমান্ত এলাকায় নাকি হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে । এমনিতেই ইউক্রেন আর রাশিয়ার মূল যুদ্ধটা ঘুরপথে হচ্ছিল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের। এবার সেটা প্রকাশ্যে শুরু হতে চলেছে। এর আগে বহুবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন।
এখনো পর্যন্ত ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাস কিংবা জাতিসংঘের রুশ মিশনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমত পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ভয় পাচ্ছেন অন্য আশঙ্কায়। কারণ কিছুদিন আগেই পশ্চিমাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন পুতিন। স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যদি পশ্চিমা অস্ত্র রাশিয়ায় আঘাত হানে তাহলে তার পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এই যুদ্ধ ইউক্রেন করতে পারছে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাপোর্টের কারণে। পুতিন মনে করছেন, পশ্চিমা সামরিক প্রশিক্ষকরা ইউক্রেনে কাজ করছে ভাড়াটে হিসেবে। এখন যদি পশ্চিমাদেশ গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেনাদের ইউক্রেনে পাঠায় তাহলে কিন্তু ফল হবে উল্টো। দ্বিগুণ বেড়ে যাবে সংঘাতের মাত্রা। ইউরোপের গুরুতর সংঘাত পৌঁছে যাবে বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে। ওদিকে ইউক্রেন সত্যি সত্যি তার দেশে সামরিক প্রশিক্ষক পাঠানোর জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এভাবে যত দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতি এগোচ্ছে খারাপের দিকে। আর দলাদলির এক দিকে পড়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ হাতে গোটা পশ্চিমা কয়েকটা দেশ। আসলে এই যে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র মোড়লগিরি করে এসেছে, সর্বের সর্বা হয়ে থাকতে চেয়েছিল, সেই ক্ষমতার রাজপ্রাসাদ ভাঙতে হয়তো আর খুব বেশি দেরি নেই।
অন্ধকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ! ইরানকে ইন্ধন যোগাচ্ছে চীন আর রাশিয়া
একশুধু ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গ না হয় বাদই দিলেন, তার পরেও দুটো বিশ্ব জুড়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের তান্ডব চলছে , অদূর ভবিষ্যতে বড় হুমকির মুখে পড়তে চলেছে ওয়াশিংটন। শুধু রাশিয়া নয়, ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে ইরান আর চীন। তবে হ্যাঁ, রাশিয়া চীন আর ইরান এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বদ্ধ হয়নি ঠিকই, কিন্তু তিন দেশের মধ্যে তলে তলে বেশ ভালই সম্পর্ক।। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতে তারা যোগাযোগ, সহযোগিতা আর সমন্বয় দিনের পর দিন বাড়িয়ে চলেছে। সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর পর পুতিন যেভাবে উদ্বেগ, অস্থিরতা দেখিয়েছেন তা কিন্তু সত্যি চোখে পড়ার মত। আর এটাই তো দুই দেশের বন্ধুত্বের বড় ইঙ্গিত। যখন রাইসির দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছিল তখন পুতিন তড়িঘড়ি সেই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে সহযোগিতা করেছে।। পুতিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার কাছে ইরানের গুরুত্ব ঠিক কতটা। অথচ জানলে অবাক হবেন, একটা সময় এই দুই দেশের মধ্যে রেষারেষি কম ছিল না। এশিয়ার বাণিজ্য পথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতা চলেছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। তবে বিগত এক দশক ধরে এই নতুন ভূরাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে দুই দেশ এখন একে অপরের ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হবার পর, রীতিমত মোড় ঘুরে গিয়েছে অন্যদিকে। দুই দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে সামরিক সহযোগিতা। এই জোটের সঙ্গে আবার জুড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু চীন। দিনের পর দিন রাশিয়া আর ইরানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা যেন বেড়েই চলেছে। পাত্তাই দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিকে, বরং প্রকাশ্যে কখনো বা গোপনে ইরানের জ্বালানি ঢুকছে বেজিংয়ে।
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে এই তিন রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব দেখে মনে করা হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে একটা ত্রিদেশীয় নতুন অক্ষশক্তি। যেটা যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি দমনের মূল কারণ হতে পারে। একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, যখন গোটা বিশ্বের দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে চলছে, জোট বাঁধছে, তখন কিন্তু ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু দেশ, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে। সোজা কথায় ওয়াশিংটনের আধিপত্য মানতে রাজি নয় তারা। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে একদিন যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্ররা এতদিনের বিশ্ব ব্যবস্থায় যে একচেটিয়া প্রাধান্য ধরে রেখেছে, তা হয়তো বেসামাল হয়ে পড়বে। আসলে কি বলুন তো, যে যুক্তরাষ্ট্র তার নিষেধাজ্ঞা অস্ত্র দিয়ে সবাইকে কাবু করতে চেয়েছিল, সেই অস্ত্রই এখন ইরান আর রাশিয়াকে কাছাকাছি এনেছে। ইরানের উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে প্রায় ৪৫ বছর ধরে। আর ওদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর সেই নিষেধাজ্ঞা চেপেছে রাশিয়ার উপর। যার পর থেকে প্রথম কোন অমুসলিম দেশ হিসেবে ইরান থেকে রাশিয়ায় যাচ্ছে বিপুল পরিমানে অস্ত্র। যা হয়তো মস্কো কোনদিনও ভাবতেও পারেনি। ওদিকে আবার ইরান আর চীন ২০২১ সালে করে ফেলেছে একটা কৌশলগত সহযোগিতার চুক্তি। যার মূল উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ব্যর্থ করে দেওয়া। বহু কূটনৈতিক সমালোচকের মতে হয়তো, যুক্তরাষ্ট্র তার স্ট্যাটিজিতে বড় ভুল করছে। মধ্যপ্রাচ্যে যত ইরানকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, ততই যেন চীন রাশিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে ইরানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই সহযোগিতার জোট করার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে। গত বছরেই চীনের নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এর জোটে স্থায়ী সদস্যপথ হয়েছে ইরান। অপরদিকে ব্রিকসে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে দেশটা। এই দুই জোট হয়ে উঠেছে চীন আর রাশিয়ার নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট গুলোর অন্যতম বিকল্প।
হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্র, ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তৈরি নতুন প্ল্যাটফর্ম
বহু মার্কিন গবেষক মনে করছেন, চীন রাশিয়া ইরানের সহযোগিতার মূল ভিত্তি হচ্ছে নিরাপত্তা। আর তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করাই দেশগুলোর উদ্দেশ্য। আসলে ভয় পাচ্ছে তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে আলাদা করে জোট তৈরি করছে। কিন্তু এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই একটা বড় হুমকি। কারণ তিন দেশেই সামনে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। ইরান সবসময় ভয় ভয় থাকে, এই বুঝি যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল তার উপর হামলা চালায়। অপরদিকে রাশিয়াও মনে করছে, যে কোন সময় ইউরোপে তারা দীর্ঘযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চীনও ভালো করেই জানে, তাইওয়ান নিয়ে আজ না হয় কাল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ হবেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে গোটা বিশ্বে।
ওদিকে আবার শত্রু শত্রু বন্ধু হিসেবে এই জোটে জুড়েছে উত্তর কোরিয়া। কিম জং উনের দেশ এখন রাশিয়া আর চীনের বাইরে সম মনোভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছে এখন সবথেকে ভালো অপশন হল ইরান। উত্তর কোরিয়া মনে করছে, এই সুযোগে তেহেরানে অস্ত্র আর সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করতে পারবে। কারণ উত্তর কোরিয়া আর ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, আসলে এর মাঝে কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেতে চাইছে দেশটা। মোটামুটি কিম সেই সব দেশকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন যারা সামরিক এবং আর্থিক দিক থেকে তাকে সাহায্য করতে পারবে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা একদিন সত্যি কমে যাবে। আর সেই জায়গাটা নিয়ে নিতে পারে চীন কিংবা রাশিয়া। হয়তো বা বিশ্বের ক্ষমতার উপরে একক কোন রাষ্ট্রের মাতব্বরি থাকবে না। তখন গোটা বিশ্ব পরিচালনা করবে শক্তিধর দেশের জোট।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম