।। প্রথম কলকাতা ।।
Snake Venom vs Human Blood: জাস্ট একফোঁটা সাপের বিষ, তাতেই জমাট বাঁধবে রক্ত। মারাত্মক বিষের জ্বালায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে মানুষ। বহু মানুষ সখ করে সিংহ বাঘের মতো হিংস্র পশু পোষেন, কিন্তু সাপ পোষেন কজন? বাস্তবে তো দূর, অনেকে টিভির পর্দায় সাপ দেখেও আঁতকে ওঠেন। এর ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনলে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। মানুষের শরীরে সাপের বিষ ঠিক কীভাবে কাজ করে? যার জন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তাজা প্রাণ। রইলো এমন কিছু তথ্য যা জানলে আপনি ভয়ে কাঁটা হয়ে যাবেন।
সাপ দেখলেই অনেকেরই হাত-পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসে। একে পছন্দ করে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে দুঃখের বিষয়, পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ সাপের বিষ নেই। কিন্তু বিষধর সাপের আতঙ্কে মানুষ বিষহীন সাপকে আক্রমণ করে। কিন্তু বিষধর সাপেরা সবসময় যে ছোবল মারতে উদ্যত হয়ে থাকে এমনটা নয়। মূলত তারা নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজে লাগায় তাদের বিষকে। বহু সাপ আছে যারা শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্যই কামড় বসায়, আবার অনেক সাপ রীতিমত হিসেব করে বিষ ঢালে। তবে ইনল্যান্ড টাইপ্যান প্রজাতির সাপ আছে যারা ছোবল বসিয়ে তাদের সমস্ত বিষ উজাড় করে ঢেলে দেয়। আপনি সাপকে যতই ভালো প্রাণী হিসেবে বারংবার ভাবার চেষ্টা করুন না কেন, এদের বিষ কে কখনোই ভালো প্রমাণিত করতে পারবেন না।
কীভাবে বিষ ঢালে?
সাপের বিষ হল প্রোটিন এনজাইম আর কিছু রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে তৈরি জটিল যৌগ। আসলে সাপের জিভের নিচে কিংবা চোয়ালের দুই পাশে একজোড়া প্যারোটিড গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থির মূল কাজ হলো বিষ উৎপন্ন এবং সংরক্ষণ করা। আর এখান থেকেই অতি সূক্ষ্মনালী পৌঁছেছে বিষ দাঁতে। ছোবল দেওয়ার সময় ইনজেকশনের মত বিষ ঢেলে দেয়। জানলে চমকে উঠবেন, এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয় মাত্র ২০ মিলি সেকেন্ডে।
সাপের বিভিন্ন বিষ কীভাবে কাজ করে?
•হিমোটক্সিক( ভিডিও)- এই ধরনের সাপেরা তাদের সমস্ত বিষ ঢেলে দেয় রক্তে। শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই এই মারাত্মক বিষ লোহিত রক্তকণিকাকে দ্রুত ভেঙে দেয়। যার ফলে রক্তের অক্সিজেন পরিবহন করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সাপের বিষে এমন এক এনজাইম থাকে, যার কারণে খুব দ্রুত মানুষের রক্তচাপ কমে যায়। পাশাপাশি রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এই প্রক্রিয়া হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট।
• প্রটিওলাইটিক- এই বিষের ফলে মানুষের শরীরের টিসুগুলি খুব দ্রুত ভেঙে যায়।
• সাইটোটক্সিক- এই ধরনের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় মূলত কোবরা। এই সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই মানুষের শরীরের কোষগুলি খুব দ্রুত নষ্ট হতে শুরু করে।
• নিউরোটক্সিক- এই বিষ মানবদেহে অত্যন্ত দ্রুত দ্রুত কাজ করে। যার কারণে নষ্ট হয়ে যায় স্নায়ু কলা পেশী এবং শ্বসনতন্ত্রের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। খুব দ্রুত নেমে আসে মৃত্যু আবার অনেকে প্রাণে বাঁচলেও শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়।
• কার্ডিওটক্সিক- বহু সাপের বিষ আছে যা খুব দ্রুত মানুষের হৃদপিন্ডের কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন রক্ত পরিবহন না হওয়ায় মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ভারত বাংলাদেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা
প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ শুধুমাত্র সাপের ছোবলে মারা যান। এই সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে ভারত,বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো এশীয় দেশগুলিতে রীতিমত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দ্রবোড়া। ভারতের প্রতিবছর যে পরিমাণ সাপের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে শুধুমাত্র ৪৩ শতাংশ মৃত্যু ঘটে চন্দ্রবোড়ার কামড়ে। শ্রীলঙ্কায় এই হার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশেও যেসব সাপের ছোবলে মানুষ মারা যায় তার মধ্যে অন্যতম হল চন্দ্রবোড়া। মূলত এই সাপ রাত্রে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, ছোবল মারার আগে শান্ত নিশ্চুপ অবস্থায় নিজেকে গুটিয়ে রাখে। একদম নড়াচড়া করে না। তারপর ঘা লাগবেই ভয়ানক ছোবল বসায় মানুষের শরীরে। তার উপর হামলা হচ্ছে ভেবে ঘন ঘন ছোবল দিতে থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২ দশকে শুধুমাত্র সাপের কামড়ে ভারতে ১২ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর বর্ষাকালে বাংলাদেশের অন্তত ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হন। যার মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রায় ৬ হাজার মানুষ। আর যারা বেঁচে ফেরেন তাদের জীবনের থেকে যায় বিষের মারাত্মক প্রভাব। র্যাটেল স্নেক দংশন করার সাথে সাথেই তার ৫০ শতাংশ বিশ ঢেলে দেয়। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা না হলে সেই মানুষের মৃত্যু অবধারিত। এদিক থেকে তুলনামূলকভাবে একটু ভালো কোবরা। কারণ কোবরা কামড়ানোর পর ৮ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম