।। প্রথম কলকাতা ।।
UCC: গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন দল। আর ভোটের আগে বলা হয়েছে, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলেই কার্যকর করা হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অর্থাৎ ইউনিফর্ম সিভিল কোড। এমনকি এর জন্য আলাদা করে কমিটি গড়ার কথা জানানো হয়েছে। এবার রাজ্যসভায় ইউনিফর্ম সিভিল কোডের উপর বিল পেশ করেছেন বিজেপির কিরোদি লাল মিনা।
বিরোধী সদস্যরা বিলটি প্রত্যাহার করার জন্য মিনাকে অনুরোধ করেছিলেন। সেইসঙ্গে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে আইনটি গ্রহণ না করার কথা বলেন। তাঁদের দাবি, এতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে। বিলটি UCC তৈরির জন্য জাতীয় পরিদর্শন ও তদন্ত কমিটি গঠন এবং সমগ্র ভারতে এর বাস্তবায়ন চায়। ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বিলের সূচনার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আম্বেদকরকে উদ্ধৃত করে সদস্যদের করা মন্তব্য দেখে আমি ব্যথিত। সংবিধানের নির্দেশিকা নীতির অধীনে এমন একটি বিষয় উত্থাপন করা একজন সদস্যের বৈধ অধিকার। এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে ডিবেট হোক। আমার সহকর্মী প্রকাশ জাভড়েকর এই বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাবেন। কিন্তু এই পর্যায়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা, বিলটির সমালোচনা করার চেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। আমি চাই যে বিলটি পাশ করা হোক’।
প্রাইভেট মেম্মবারস বিল সংসদে পাশ হতে সরকারের সমর্থন প্রয়োজন। বিলটির সূচনা ভোটের জন্য রাখা হয়েছিল এবং তাতে পক্ষে ৬৩ এবং বিপক্ষে ২৩টি ভোট পড়ে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির অনেক বিরোধী সদস্য আলোচনার সময় ও ভোটের সময় উপস্থিত ছিলেন না। রিপোর্ট অনুযায়ী, MDMK-এর ভাইকো ট্রেজারি বেঞ্চে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, দেশপ্রেম আপনার লোকেদের একচেটিয়া নয়। তিনি বলেছেন, ‘আপনার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে পারে। তাঁরা আরএসএসের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাঁরা কাশ্মীরকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা দেশকে বিপর্যয় ও বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাচ্ছি। সংখ্যালঘুরা ভয়ঙ্কর ভাবে আঘাত পেয়েছে। এটা একটা লজ্জা ও দুঃখের দিন যে, আমাদের এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে’।
IUML-এর আবদুল ওয়াহাব বলেছেন, ‘এই বিল জাতির জন্য উপকারী নয়। এটি ফিরিয়ে নিন’। অন্যদিকে সিপিআই থেকে এলমারাম করিম বলেছেন যে, ‘ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং যখন শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণের মতো আরও অনেক নীতি রয়েছে, তখন সরকার কেন সেগুলি বাস্তবায়ন করছে না। এই বিল দেশকে পুড়িয়ে ফেলবে’। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘দেশ সংকটের মুখোমুখি। আসুন আমরা ঐক্য পুনরুদ্ধার করি। জনগণের মধ্যে বিভাজন আপনাকে অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করবে না। সমাজকে পরিপক্ক হতে দিন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন’।
এদিকে সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব বলেন, ‘বিলটি সংবিধানের নীতির পরিপন্থী। এটি জনগণের মধ্যে মোহভঙ্গের দিকে নিয়ে যাবে’। কংগ্রেস পার্টির এল. হনুমানথাইয়া বলেছেন, ‘চরম বাম এবং চরম ডানপন্থী মতাদর্শ গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। ভারতের মতো সুস্থ গণতন্ত্রে আমাদের এই ধরনের চরমপন্থায় প্রবেশ করা উচিত নয়। আমাদের এই দেশের বুনন ধরে রাখা উচিত। আমরা ৭৫ বছরের একটি ছোট গণতন্ত্র মাত্র’।
প্রতিবেদন অনুযায়ী তিরুচি শিবার কথায়, ‘এই দেশের ভিত্তি ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং ফেডারেলিজম। উভয়ই এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই প্রাইভেট মেম্বার বিল পাস হলে কী ঘটতে পারে, তা আমরা আন্দাজ করছি। যখন এটি বিবেচনার জন্য নেওয়া হবে, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, এটি পাশ করা হবে। সংখ্যালঘুদের মানসিকতা কী হবে? আমরা কি তাঁদের মনে এর দরুন কোনও শঙ্কা সৃষ্টি করব না?’
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ ঝা বলেছেন, ‘বিলটি আগে ছয়বার পেশ করা হয়নি। পরিবার বিভক্ত, গ্রাম বিভক্ত, এটা দেশের স্বার্থ নয়’। জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির ফৌজিয়া খান জানিয়েছেন, বিলটি গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পাশাপাশি কংগ্রেসের ইমরান প্রতাপগড়ী বলেন, এই সময়ে বিল আনা কাম্য নয়। এক কথায় বিরোধীরা বিলের বিপক্ষে কথা বলেছেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম