।। প্রথম কলকাতা ।।
Hindenburg Report: হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট(Hindenburg Report) প্রকাশ্যে আসতেই গোটা বিশ্বজুড়ে এখন হইচই। অপরদিকে গৌতম আদানি(Goutam Adani) ব্যস্ত ঋণ শোধ করতে। লাগাতার আদানি গ্রুপ(Adani Group) চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেদের হারানো সিংহাসন ফিরে পেতে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আদানির হিন্ডেনবার্গ ধাক্কায় ভারতের বড় বড় প্রকল্পগুলিতে আঘাত লাগতে পারে? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে আদানি গোষ্ঠীর উপর হিন্ডেনবার্গের রিসার্চের ধাক্কা বহু এই ধরনের সংস্থাকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে উপকার করেছে। অনেকেই আগে থাকতে সাবধান হয়ে গিয়েছেন, আবার কেউবা বুঝতে পেরেছেন নিজের সিংহাসন ধরে রাখতে গেলে স্ট্র্যাটেজি কতটা শক্তপোক্ত হওয়া দরকার। নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ করতে গিয়ে যদি বিপুল ঋণ নেওয়া হয় তাহলে ওঁত পেতে রয়েছে কোন কোন বিপদ, সেক্ষেত্রে এই হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট একটা আগাম সতর্কতা দিয়ে দিয়েছে। বিগত সপ্তাহ কয়েক সপ্তাহ ধরে গৌতম আদানি ঋণশোধ করে তাঁর গোষ্ঠীর আগের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে ব্যস্ত।
‘ThePrint’ এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গৌতম আদানি হিন্ডেনবার্গের টার্গেটের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে ত্বরান্বিতভাবে ঋণ পরিশোধ করে তাঁর গোষ্ঠীতে আত্মবিশ্বাস পুনঃনির্মাণে ব্যস্ত। বেদান্ত গোষ্ঠীর অনিল আগরওয়াল, তাঁর পক্ষ থেকে, মাঝারি মেয়াদে ১ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি শোধ করে শূন্য-ঋণ স্থিতি অর্জনের কথা বলছেন। মুকেশ আম্বানি তিন বছর আগে ইক্যুইটি ডিলের সাথে ঠিক এমন কাজ করেছিলেন। যা তাঁকে মোট ১.৬ ট্রিলিয়ন টাকা ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু আদানির ঋণের পাহাড় অনেক বড়। পরিমাণে প্রায় ৩.৩৯ ট্রিলিয়ন টাকা। যদিও গৌতম আদানি নিজেই উল্লেখযোগ্য ভাবে কম অঙ্কের দাবি করেছেন।
ঋণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। দুই দস্তা উৎপাদককে তার নিয়ন্ত্রণে একীভূত করার জন্য আগরওয়ালের সাম্প্রতিক বিড (অলস পুঁজি মুক্তির জন্য) সরকার দ্বারা অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যার একটি কোম্পানিতে সংখ্যালঘু অংশীদারিত্ব রয়েছে। আদানি বন্ধীকৃত শেয়ারের বিপরীতে প্রদত্ত সমস্ত ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছে, কিন্তু ঋণধারীরা গ্রুপ শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত শেয়ার প্রতিশ্রুতির দাবি করছে। এই সুযোগে একটি অস্ট্রেলিয়ান গ্রুপের সেকেন্ডারি মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট তার শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি ঋণ প্রদানের বর্ধিত ব্যয়কে প্রতিফলিত করতে পারে কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গুলিও সুদের হার বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বন্ড হোল্ডারদের যখন ঋণ পরিশোধের সময় আসে তখন একটি রোল-ওভার বিকল্পকে ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে। ঋণ পরিশোধ করা ক্রেডিট-রেটিং ডাউনগ্রেড প্রতিরোধ করতে পারে। বৈশ্বিক বাজারের খেলোয়াড়রা তাদের কাছে থাকা নথি ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি কমে যাওয়া দেখতে পছন্দ করেন না। এমন মনোভাব অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ককে ঘোষণা করতে প্ররোচিত করেছিল যে তারা আর আদানির নথি গ্রহণ করবে না।
এমত পরিস্থিতিতে বহু সংস্থা তাদের ঋণ এবং ইক্যুইটির অনুপাতের মধ্যে যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছে। প্রশ্ন হল, সুবিশাল প্রকল্পগুলিকে সেক্ষেত্রে তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি? যদি না হয় তাহলে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে সরকারকে। ইতিমধ্যেই বাজেটের মাধ্যমে বেশ মোটা অঙ্কের পুঁজি এসেছে। রিলায়েন্স এবং টাটা গোষ্ঠীর হাতে অর্থের যোগান ভালো রয়েছে। সমস্যা হল, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পর তারা বিনিয়োগ প্রকল্প থেকে একটু হলেও সরে এসেছেন। আসলে ভারতের কিছু কিছু জায়গায় যেমন টেলিযোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, পরিবহন পরিকাঠামো, সেমি কন্ডাক্টর নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিতে কিছুটা হলেও একটু সাপোর্টের প্রয়োজন। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।