।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: ভিক্ষা এখন বাণিজ্য, যেখানে রয়েছে অজস্র অন্ধকার জগতের অলিগলি। পথ ভুলে এই গলিতে পা দিলে জীবন শেষ। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরের যানজট রাস্তায় ছোট ছোট শিশুদের ভিক্ষা করতে দেখবেন। কোনোদিন জিজ্ঞাসা করেছেন, তাদের সেই ভিক্ষাতে সম্মতি আছে কিনা? নাকি সবটাই শিখিয়ে পড়িয়ে তাদেরকে নামানো হয় রাস্তায়? চলুন আজকে আপনাকে নিয়ে যাব এক অন্ধকার জগতের গল্পে, যার বাস্তবটা শুনলে শিউরে উঠবেন, গায়ে কাঁটা দেবে। যেখানে ছোট্ট দুধের শিশু জোর করে বিকলাঙ্গ বানিয়ে রাখা হয়। শিশু বিক্রি কিংবা শিশু ভাড়া দেওয়া এক্কেবারে সাধারণ ব্যাপার।
প্রযুক্তির আলোয় পৃথিবীর বহু দেশ উন্নত হয়েছে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে রাস্তায় ভিক্ষুকের দেখা পাওয়া বেশ মুশকিল, যদিও বা পাওয়া যায় সংখ্যায় নেহাত কম। কিন্তু এশীয় এবং আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে ভিক্ষুকদের ছবি সবার চেনা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষ প্রচুর স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসে ভাগ্য গড়ার। যার সাথে যেমন ঘটে, সেই শহরকে সে তেমনভাবেই দেখে তাইতো ঢাকা কলকাতার মত শহর গুলো কারোর কাছে মায়া নগরী, কারোর কাছে সফলতার মঞ্চ। ব্যস্ত রাস্তায় একটু খেয়াল করে দেখবেন, বহু মহিলা শিশু নিয়ে ভিক্ষা করছেন। আবার কারোর সঙ্গে আছে প্রতিবন্ধী। আবার কারোর কোলে ঘুমিয়ে রয়েছে শিশু ছোট্ট। তারা কিন্তু কাঁদছে না। একদল শিক্ষিত তরুণ তরুণী কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার জন্য টাকা তুলছেন। দাবি, সেই টাকা পৌঁছে যাবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কাছে। আসলে পিছনে কাজ করছে বড় চক্র, যার তল পাওয়া মুশকিল। নির্মমভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে অনাথ অসহায় পথ শিশুদের। ঢাকা শহরে এই ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘিরে চলে এক ধরনের সিন্ডিকেট। ঢাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা কত সেই বিষয়ে কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ২০১১ সালে ঢাকায় ভিক্ষুকদের নিয়ে প্রথম জরিপ করা হয়েছিল। সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপে তখন দশ হাজার ভিক্ষুকের কথা পাওয়া যায়।
কিছু কিছু শিশু জন্মেছে যেন হতভাগ্য নিয়ে যাদের পথেই জন্ম, পথেই জীবন। এরা জানে না এদের বাবা-মায়ের পরিচয়। ছোট থেকে বড় হয় টাকা কামানোর মেশিন হিসেবে। মাঝেমধ্যে শিশুদের কোলে নিয়ে বহু মহিলা ভিক্ষা করেন। অধিকাংশ সময় শিশুরা ঘুমিয়ে থাকে। এর পিছনেও থাকে জঘন্যতম ষড়যন্ত্র, যা জানলে শিউরে উঠবেন। যাতে দুধের শিশু কাঁদতে না পারে তাই তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। কি ভয়ানক না? যাতে পায়খানা না করে তাই সারাদিন খাবার দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র জল দেওয়া হয়। ছোট্ট শিশুরাই ছোট থেকেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে নানান রোগে আক্রান্ত হয়, বিকাশ ভালোভাবে হয় না। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে শৈশব।
এই ভিক্ষার সিন্ডিকেটে ঢাকার চিত্র আরো ভয়াবহ। গুগলের সার্চ করলে ঢাকার ভিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে আপনি নানান খবর পাবেন। আগের থেকে কিছুটা হলেও ঢাকায় ভিক্ষা বাণিজ্যের রমরমা কিছুটা কমেছে। কিন্তু একেবারে অবলুপ্ত হয়নি। রাজধানীতে চলে ভিক্ষা বাণিজ্য। এমন এক বাণিজ্য, এক এলাকার ভিক্ষুক অপর এলাকায় ভিক্ষা করতে পারে না। আসলে এদের পিছনে রয়েছে বড় মাথা, যারা বিলাসী জীবন কাটায়। তাদের দিন গুজরান হয় আয়েশে, আর শিশুদের? যেসব মহিলারা বা একটু বড় শিশুরা ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে ভিক্ষা করেন সেই শিশুগুলো কি আদৌ তাদের? কিংবা যারা সঙ্গে প্রতিবন্ধী নিয়ে ভিক্ষা করেন আদৌ কি তারা একে অপরের আত্মীয়? এমনকি ভিক্ষার জন্য শিশু ভাড়া পাওয়া যায়। অনেকেই আছেন যারা তার প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করতে লজ্জা পান। নিজের শিশুকে ভাড়া দিয়ে দেন অন্যজনের কাছে। সেই শিশুর সারাদিন কেমন কাটে তার কি খোঁজ রাখেন? এদের মধ্যে আবার ভাগ বাটোয়ারার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কেউ নেন সমান সমান, কেউ বা ৩০, ৪০ কিংবা ৫০ শতাংশে নিজের পাওনাগন্ডা বুঝে নেয়। এখানেই থেমে নেই। ছোট শিশুকে জোর করে বিকলাঙ্গ বানানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় হাত পা। এসব শিশুরা ছোট থেকেই অন্ধকার পরিবেশে বড় হয়। বিশেষ করে ভয়াবহ হয়ে ওঠে কন্যা শিশুদের জীবন। বড় হলে তারা জড়িয়ে যায় অন্ধকার যৌন জীবনে। এছাড়াও স্টেশন কিংবা পথে যেসব শিশুদের জন্ম অথচ তাদের জন্মের পরিচয় নেই তাদের অহরহ ভিক্ষাবৃত্তির কাজে লাগানো হয়। একবার ভাবুন তো, তারা ছোট থেকে সমাজ থেকে কি পেয়েছে? আর কি দেখে বড় হচ্ছে? বড় হয়ে এই সমাজকে অপরাধী ভাবাটা কি খুব ভুল? তাদের কাছে পৃথিবীতে সুন্দর বলে আদৌ কি কিছু আছে? আপনার আমার বাড়ি বাচ্ছা খুব আদরের যত্নে বড় হয় আর একদল শিশু ছোট থেকেই পায় এক ভয়ঙ্কর জীবন। বর্তমানে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে বহু প্রতিষ্ঠান এই সমস্ত শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কিংবা তাদের সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বহু সুবিধাবঞ্চিত শিশু ধীরে ধীরে ফিরছে মূল স্রোতে। বহু সংগঠন আছে যারা নিঃস্বার্থভাবে এই সমস্ত পথ শিশুদের খাওয়া পড়ার পড়াশোনার দায়িত্ব নয়, তাদেরকে সত্যি স্যালুট করা উচিত।
এসবের মাঝে ভুললে চলবে না, এমনও বহু মানুষ আছেন যারা সত্যি অসহায় হয়ে প্রয়োজনের তাগিদে ভিক্ষাকে বেছে নেন। আবার কেউবা হঠাৎ বিপদে পড়ে মানুষের সামনে হাত পাতেন। কিন্তু এই বাণিজ্য ভিক্ষুক কিংবা সিন্ডিকেটের জালে তাদেরকে চেনা বড্ড মুশকিল। বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সত্যি ভালো কাজের উদ্দেশ্যে টাকা সংগ্রহ করে, সেই টাকা দিয়ে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাই তো মানুষ গুলিয়ে ফেলে কে আসল আর কে নকল। সবাইকে খারাপ ভাবার কোন কারণ নেই। শুধু কোথায় টাকা দিচ্ছেন বা কাকে টাকা দিচ্ছেন সেই বিষয়ে একটু যাচাই করে নেবেন। পথশিশুদের সরাসরি টাকা নয়, তাদের পছন্দের জামা কাপড় কিংবা পছন্দের খাবার খাওয়াতে পারেন, দেখবেন খুব খুশি হবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম