।। প্রথম কলকাতা ।।
Honey Making Process: পৃথিবীতে যত মিষ্টি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল মধু (Honey)। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া এই মধুর নেপথ্যে কৃতিত্ব কিন্তু ছোট একটা প্রাণীর। সেই প্রাণীটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। তাদের পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপনের ফল স্বরূপ পাওয়া যায় এই মধু। গ্লুকোজ, জল এবং বিশেষ কিছু উৎসেচকের মিশ্রণে তৈরি করা হয় মধু। অবশ্য এই মধু তৈরি করার বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। আর সেই ধাপে ধাপে কাজ করে থাকে মৌমাছিরা। বলা যায়, তাদের দেহই হল এক-একটা মধু তৈরির ফ্যাক্টরি। বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই ? চলুন জানা যাক কীভাবে মধু তৈরি করে মৌমাছিরা (Honey bee) ।
মৌমাছির মধু সংগ্রহ
রঙিন ফুলের উপরে মৌমাছি ঘুরে বেড়ানোর ছবি প্রায়ই চোখে পড়ে। কমবেশি সকলেই জানেন মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। তাঁরা সেই মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যায় নিজেদের মৌচাকে (Beehive)। কিন্তু শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে কাজটা ততটা সহজ নয়। জানলে আশ্চর্য হবেন, মাত্র এক পাউন্ড মধু তৈরি করার জন্য মৌমাছিকে প্রায় ১০ থেকে ২০ লক্ষ ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হয়। মৌমাছি যে পরিশ্রমী তার প্রমাণ মেলে এখানেই। মৌমাছির খাদ্য তালিকায় থাকে ফুলের রস এবং পরাগ। ফুলের রসের মধ্যে উপস্থিত থাকে চিনি আর কার্বোহাইড্রেট। ঐ কার্বোহাইড্রেটটিকে মৌমাছি নিজেদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজে লাগায়।
মৌমাছির সংগ্রহ করা ফুলের রসই কি মধু?
ফুলে ফুলে ঘুরে বেরিয়ে তার রস সংগ্রহ করা মৌমাছির কাজ । আর তারপর সেই মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা মানুষের কাজ। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল মৌমাছি কি সরাসরি ফুল থেকে তৈরি হওয়া মধু সংগ্রহ করে? যে মধু আমরা খাই সেটা কি তাহলে ফুলেরই মধু ? উত্তরে বলতে হয় একেবারেই না। আমাদের হাতে যে মধু এসে পৌঁছায় এবং ফুলের রসের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে । ফুলের রস সংগ্রহ করা থেকে মধু তৈরি হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু পদ্ধতি (process) আছে। আর মৌচাকের মধ্যে রয়েছে একটা গোটা সাম্রাজ্য। সেখানে রয়েছে একজন রানী মৌমাছি, রয়েছে রাজা মৌমাছি। এছাড়াও অসংখ্য কর্মী মৌমাছি, আরও কিছু মৌমাছি রয়েছে যারা মধু তৈরি করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কীভাবে তৈরি হয় মৌচাকের মধ্যে মধু ?
কর্মী মৌমাছিরা সারাদিন ফুলে ফুলে ঘুরে বেরিয়ে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। শীতকালে যেহেতু খুব বেশি ফুল ফোটে না তাই তাঁরা গরমের দিকে একটু বেশি ফুলের রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করে থাকে। মৌচাকের কর্মী মৌমাছিদের শারীরিক গঠনও কিছুটা অন্য ধরনের। কারণ তাদের মধ্যে থাকে দুটি পাকস্থলী। একটিতে তাঁরা খাবার রাখে আর অন্যটিতে সংগ্রহ করে ফুলের রস। কর্মী মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এনে সেটা মৌচাকের প্রসেসর মৌমাছির (Processor Bee) মুখে তুলে দেয়। কারণ মধু তৈরি হওয়ার ওই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি চলবে প্রসেসর মৌমাছির পাকস্থলীর মধ্যে।
এবার শুরু হয় প্রসেসর মৌমাছির কাজ। সে কর্মী মৌমাছির কাছ থেকে ফুলের রস (Flower Juice) নেওয়ার পর ইনভার্টেজ নামক এক ধরনের উৎসেচক তার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। এরপর ফুলের রসের মধ্যে থাকা সুক্রোজকে গ্লুকোজ আর ফ্রুক্টোজে ভেঙে দেয় । এরপর ওই প্রসেসের মৌমাছিটি অপর এক প্রসেসের মৌমাছির মুখে তুলে দেয় আংশিক তৈরি হওয়া মধু। ওই প্রসেসর মৌমাছি তখন আরও ইনভার্টেজ উৎসেচক (Invertase Enzyme) মেশাতে শুরু করে ফুলের রসের সঙ্গে। এই কাজটি চলাকালীন ফুলের রসের ওই মিশ্রণের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। জলকে বাষ্পীভূত করার কাজটাও করে থাকে মৌমাছিরাই। তাঁরা খুব দ্রুত ডানা ঝাপটাতে শুরু করে। এর কারনে তাদের শরীরে থাকা জল ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয় ফলস্বরূপ মিশ্রণটি ধীরে ধীরে ঘন হয়। এই ভাবেই তৈরি হয় একেবারে প্রাকৃতিক সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন মধু। প্রাকৃতিক মধুর উপকারিতা বহু । এই কারণে ফ্যাক্টরিতে তৈরি হওয়া মধুর বদলে বাজারে খাঁটি মধুর দাম ও চাহিদা থাকে অনেকটাই বেশি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম