প্রথম কলকাতা
Patharghata Beautiful Place: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে থাকা বাংলাদেশের বরগুনাকে প্রকৃতি সাজিয়েছে নিজের হাতে। পরম যত্নে আর স্নেহে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার কথা বলব আজ। গোটা বিশ্বের নিরিখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এটা এক অনন্য সিক্রেট। এখানে না গেলে অনেক কিছু মিস করেছেন। তবে মন খারাপ করবেন না, আপনাকে আজ দেখাবো পাথরঘাটার সৌন্দর্য, যা দেখে বিমোহিত হয়ে যাবেন।
এখানেই আছে লালদিয়া বন। নামটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই বনটাকে ঘিরে রেখেছে বিষখালি আর বলেশ্বর নদী। আর একদিকে রয়েছে সাগরের মোহনা। হাজারো পাখির কল কাকলি আর সমুদ্রের গর্জন কানে আসলে মুহূর্তে বিমোহিত হয়ে যাবেন। এই ঘন সবুজ বনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে পাশে থাকা বিশাল তিনটি সৈকত। যদিও এই বনের হিংস্র কোন প্রানী নেই। তাই ভয়েরও কিছু নেই। বানর, শুকর, হরিণ, বন মোরগ, গুইসাপ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি আর বন্যপ্রাণী। বালুকাবেলায় একের পর এক আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের নোনা জলের ঢেউ। বেলাভূমিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন লক্ষ লক্ষ লাল কাঁকড়া। কখনো বা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে গাংচিল। কাঁকড়ার দল এখানে লুকোচুরি খেলতেই ব্যস্ত। একবার গর্তে ঢুকছে আর একবার গর্ত থেকে বের হচ্ছে। সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয় দেখার জন্য পারফেক্ট জায়গা। লালদিয়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাখিদের আশ্রয়স্থল। শীতকালে এখানে ভিড় করে প্রচুর অতিথি পাখি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অতটা উন্নত না হওয়ার কারণে, বহু ভ্রমণ বিলাসী মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই পাথরঘাটা উপজেলাতেই রয়েছে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। চিরসবুজের বুক চিরে চলে গিয়েছে বনে প্রবেশ করার রাস্তা। আর রাস্তার দু’ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর বনজ বৃক্ষ। এই বনকে মূলত সুন্দরবনেরই একটা অংশ বলা হয়। কারণ একটি নদী এই দুই বনকে আলাদা করে রেখেছে। পাশাপাশি রয়েছে বিশাল ঝাউ বন। মনে হবে, এ যেন একের ভিতরে দুই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ১০০% উপভোগ করার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। শরীর মন ঠান্ডা করার জন্য স্নান সারতে পারবেন তিন নদী আর সাগরের মোহনায়।
পাথরঘাটার সৌন্দর্যের লীলাভূমি নীলিমা পয়েন্ট। বিষখালি নদীর জল বিলীন হয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গিয়ে। এই বিশাল জলরাশির মাঝে যেন হারিয়ে গিয়েছে সুনীল আকাশ। তাই একেই বলা হয় নীলিমা পয়েন্ট। সবসময়ই এখানে থাকে মৃদুমন্দ বাতাস। নীল আকাশ এখানে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিয়েছে সবুজ শ্যামল গাছ-গাছালি সঙ্গে। বাঁধে তৈরি ব্লকে বসে সন্ধ্যায় দেখতে পারবে সুন্দর চাঁদ ওঠার দৃশ্য। শুধু কি তাই, চাঁদের আলো যখন গিয়ে পড়বে শান্ত নদীতে, দেখে মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। এছাড়াও রয়েছে নিঃসঙ্গ এক দ্বীপ। চারিদিকে জলরাশি ওপরে নীল আকাশ, তার মাঝেই রয়েছে বিহঙ্গ দ্বীপ। এখানে প্রকৃতি মজেছে নিজের রূপে। একদিকে ধুধু বালুচর আর অন্যদিকে শীতল বালু। শামুক, কাঁকড়াদের ব্যস্ততা, ঢেউয়ের গর্জন, পাখির কিচির মিচির, হরিণের ছোটাছুটি জড়িয়ে রেখেছে দ্বীপটিকে। দুর থেকে মনে হবে সাগরের মাঝে এক সবুজ পাহাড়।
বাংলাদেশের বরগুনা জেলার উপকূলীয় উপজেলা হলো পাথরঘাটা উপজেলা। সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে তৈরি। রয়েছে বরিশাল বিভাগে। জনশ্রুতি বলছে, এই উপজেলার মধ্যে প্রচুর পাথরের অস্তিত্ব থেকেই নাকি নাম পাথরঘাটা। আগে বলা হতো বাধাঘাটা। জড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এখানে দুই ধরনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাবেন। বেশিরভাগ ভূমি জোয়ার ভাটা প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত হলেও, দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু অংশ সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন অংশ হওয়ায় প্লাবনভূমি বহির্ভূত।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/733576305631636/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
সত্যি কথা বলতে, সবুজ শ্যামলের দেশ বাংলাদেশে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সৌন্দর্যের প্রতীক পাহাড় পর্বত ঝর্ণা সহ আরো কত কি। আর সেই টানেই সারা বছর পাথরঘাটায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই রয়েছে। যদি মনে হয়, ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, কাজের ব্যস্ততার মাঝে একটু অবকাশ চাই, তাহলে এখানে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ছুঁয়ে আসতে পারেন সাগরের জলরাশি ,গায়ে মেখে আসতে পারেন একটু নির্মল বাতাস।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম