।। প্রথম কলকাতা ।।
Mizoram: উত্তাল ভারতের সীমান্ত রাজ্য মিজোরাম (Mizoram)। প্রায় শতাধিক বাংলাদেশী শরণার্থী বহুদিন ধরেই মিজোরামে (Mizoram) আশ্রয় নিতে চাইছেন। ২০২২ এর শেষের দিকে বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে প্রায় ২৯৩ জন শরণার্থী মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনা আর কুকি চীন ন্যাশনাল আর্মির সংঘাতে তারা বাধ্য হয়েছেন নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে। তখন মিজোরাম প্রশাসন মানবিকতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করে। মিজোরামের শরণার্থীদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে বিভিন্ন গির্জা আর এনজিও। কিন্তু ২০২৩ এর ৮ই জানুয়ারি রবিবার বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ করেই আইজল এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সমস্ত এলাকা জুড়ে বাজতে থাকে মাইক্রোফোন। এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করে ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন। সেন্টার ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন রাজভবনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে। যেখানে মূলত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা মিজো ভাইদের জন্য সংহতি দেখানো হয়। সেই বিক্ষোভের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, বাংলাদেশের যে শরণার্থীদের মৃত্যু হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যেন সমস্ত মিজো পুরুষ এবং মহিলারা একত্রিত হয়ে আবেদন করেন।
• কুকি-চিন কারা?
বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি আর বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কুকি-চিন (Kuki-Chin) শরণার্থীরা নিরাপত্তার জন্য তাদের গ্রাম ছেড়ে চলে আসছে মিজোরামের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে। বাংলাদেশের কুকি-চিন সম্প্রদায়ের মিজোদের সাথে জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে। মায়ানমারের চিন, মিজোরামের মিজো, আর বাংলাদেশের কুকি একই বংশের। মিজো পাহাড়ের আদিবাসীরাও এই কুকি জাতি গোষ্ঠীর অন্তর্গত। কুকি চিন জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে। এর দক্ষিণ-পূর্বে মায়ানমার, উত্তরে ত্রিপুরা, পূর্বে মিজোরাম এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। মিজোরাম বাংলাদেশের সাথে প্রায় ৩১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগ করে নেয়।
• শরণার্থীরা মিজোরামের দিকে কেন ঝুঁকছে?
প্রশ্ন উঠছে, মিজোরামের দিকে কেন বাংলাদেশের শরণার্থীরা এত ঝুঁকছে? উদ্বাস্তু সমস্যার কারণে দিনের পর দিন বাড়ছে মিজোরামের আর্থিক সংকট। এমনি থেকেই মায়ানমার থেকে আশা কুকি চিন শরণার্থীদের বোঝায় এই রাজ্য ভারাক্রান্ত। পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও শরণার্থীদের আগমন ঘটছে। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে অন্তত ২০০ জন কুকি চিন উদ্বাস্তু মিজোরামের লংটলাই জেলায় রয়েছেন। মিজোরামের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশি কুকি চীন শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী আশ্রয় এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে।
মায়ানমারে সামরিক শাসকদের কর্মকাণ্ড আর বাংলাদেশে পরিচয় হারানোর কারণে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের এই যাযাবর জীবনের মূলে রয়েছে জাতিগত পরিচয়ের লড়াই। তাদের বিদ্রোহের অপর একটি কারণ হল, মনিপুরে কুকি এবং নাগাদের মধ্যে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। কিছু কুকি অধ্যুষিত এলাকা নাগা অধ্যুষিত এলাকার সাথে মিলে যাওয়ায় পরিচয় এবং জমি সুরক্ষিত করার জন্য কুকি আর নাগা দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই অঞ্চলে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দুই সম্প্রদায় প্রায়ই সহিংস সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কখনো বা গ্রামে আগুন লাগে, আবার কখনো বা বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। এইসব পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত প্রশাসন। ভারত মানবিক কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের সহায়তা ও আশ্রয় দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মিজোরাম মন্ত্রিসভায় শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয়, খাবার এবং ঔষধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসবের মাঝে গুরুতর অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। দাবি করা হয়, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী কুকি চিন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন সদস্যকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে মিজোরামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মূলত প্রবেশে অস্বীকৃতির কারণে এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখন উত্তপ্ত মিজোরাম। সেই ব্যক্তি নাকি জঙ্গলে অনাহারে মারা গিয়েছেন। তার মৃত্যুর প্রতিবাদে ডাক দেওয়া হয়েছে বিক্ষোভের। সেন্টার ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন মনে করছে, মিজোরামে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত। যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, তিনি হাঁটতে পারেননি। তিনি মূলত পালাতে এবং মিজোরামে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কঠোর সংগ্রাম করেছিলেন, কিন্তু তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তাদের দাবি অনুযায়ী, সীমান্তে এমন নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে যা মিজো জনগণের যত্ন নেবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম