।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangriposhi: বিভিন্ন ঘোরার জায়গা এখন বর্ষার জন্য প্রায় বন্ধ। তার উপর এখন ভূমিধসের ভয়ে পর্যটকের সংখ্যাও কমছে। কলকাতার মানুষ তাই একটু চিন্তাতেই পরে গেছে। কিন্তু যাঁরা অফবিট ভ্রমণ ভালবাসে, তাঁদের আটকাবে কে? কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে ঘন সবুজ জঙ্গল, আদিবাসী এবং তাঁদের সাবেকি এক সভ্যতা। রাস্তাঘাট সাধারণত ফাঁকাই থাকে সেখানে। হাতে গোনা লোকজন সেখানে বেড়াতে যান। রোম্যান্টিক সময় কাটানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। পাহাড়, জঙ্গল ছাড়াও আছে ঝর্ণা, নদী এবং ট্রেকিং। তাই অ্যাডভেঞ্চারেরও কমতি হবে না। এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসও।
হ্যাঁ, কলকাতা থেকে মাত্র সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় এই জায়গায়। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় অবস্থিত ছবির মত এক সুন্দর জায়গা বাংরিপোসি। সুন্দর ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে প্রিয় সঙ্গীকে পাশে বসিয়ে গাড়িতে হুশ করে রওনা দিন। বাইকেও সঙ্গীকে পিছনে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন ওড়িশার এই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গন্তব্যে। মাত্র দু’দিনের ‘রোড ট্রিপে’ আপনি কত কিছুই দেখতে পাবেন বাংরিপোসিতে। এখানকার পর্বতশৃঙ্গ, নদী, লেক, অরণ্য মুগ্ধ করে তুলবে আপনাকে।
জায়গাটার চারপাশ ঘেরা বিদ্যাভান্ডার, অর্ধেশ্বর, বুড়াবুড়ি নামের অদ্ভুত সব পাহাড়চুড়োয়। এখানেই শেষ নয়। কাছেই পাবেন বরেহিপানি ঝর্না, বাঁকাবল হ্রদ, ঠাকুরানি পাহাড়। আর দেখা পাবেন এ দেশের আদি জনজাতির মানুষদের। কত রকমেরই না আদিবাসীর বাস বাংরিপোসিতে। সাঁওতাল, ভিল, মুন্ডা, লোধা! ইচ্ছে হলে কাছেই সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, তেমনই কাছাকাছির মধ্যে পড়া কেওনঝড় জঙ্গল, শতাব্দী-প্রাচীন সিমলেশ্বরী শিবমন্দির, শনিবারের হাট ঘুরে-দেখে-শুনে আসতে পারেন। এমনকি আপনি হস্তশিল্প-পিপাসু হলেও নিরাশ হবেন না।
বাংরিপোসি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে কুলিয়ানা গ্রাম, ডোকরা শিল্পের জন্য যে জনপদ পৃথিবী বিখ্যাত। আপনি নিখাদ প্রকৃতিপ্রেমী হলেও বাংরিপোসি আপনার মন খারাপের সময় তাকে চাঙ্গা করতে আদর্শ গন্তব্যস্থল। এখান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে শাল-সেগুন-মহুয়া-শিমুল-পলাশে ছাঁওয়া কানচিন্ডা-র মোহময়ী রূপ আপনাকে প্রকৃতিপ্রেমে হাবুডুবু খাইয়ে ছাড়বে। লেক ও বাঁধ, তা’ও পাবেন বাংরিপোসিতে। বাঁকাবল লেক ও বাঁধ দেখতে যেন ভুলবেন না! বাংরিপোসি ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ এই বুড়িবালাম নদী। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস। এই বুড়িবালামের পাড়েই শহিদ হয়েছিলেন বাংলার বীর বিপ্লবী বাঘাযতীন।
১৯১৫ সালে ৯ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ৫ বিপ্লবী। তারমধ্যে ছিলেন শহিদ বাঘাযতীনও।ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রান যায় তাঁর। কাজেই এই বুড়িবালামের সঙ্গে বাঙালির মন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস বিজরিত বাঘা যতীন-খ্যাত বুড়িবালামের শাখা নদী কালাচাঁদের পাড়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত, দু ই-ই দেখার সৌন্দর্য আপনার মন কাড়বেই। লেক ও বাঁধ, তা’ও পাবেন বাংরিপোসিতে। বাঁকাবল লেক ও বাঁধ দেখতে যেন ভুলবেন না দেখতে। ওড়িশার রানী বলা হয় এই বাংরিপোসিকে।
একটু বেলাতে বুড়িবালাম নদীতে স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে হেঁটে জঙ্গল গ্রামে ঘুরে আসা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যায় দূরে জঙ্গল থেকে ভেসে আসা মাদলের তান আর পাখিদের ঘরে ফেরার গান আপনাকে পৌছে দেবে এক নতুন দেশে। শাল, মহুয়া, শিমুল,পলাশের পাশাপাশি এখানে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল সহ নানান গাছ-গাছালি। পথের দুধারে চোখে পড়বে আদিবাসিদের ঘরবাড়ি, উঠোন আর সুন্দর আলপনায় আঁকা চিত্রিত দেওয়াল এককথায় অনবদ্য। রোডট্রিপ ভালবাসলে কলকাতা থেকে সড়কপথে পৌঁছে যেতে পারেন বাংরিপোশি।। দূরত্ব ২৯৫ কিলোমিটার।
এছাড়া হাওড়া থেকে ট্রেনে করে পৌঁছে যান বালাসোর। বালাসোর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৯৫ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন বাংরিপোশি। বাংরিপোশিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। যার থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ ১,২০০ টাকা থেকে শুরু। বাংরিপোশিতেই বেশ কয়েকটা খাওয়া-থাকার হোটেল আছে।। মধ্যবিত্তর বাজেটের মধ্যেই সেই হোটেল। তাহলে আর দেরি না করে বর্ষামাখা এক বিকেলে রওনা দিয়ে দিন বাংরিপোশির উদ্দেশ্যে।
https://www.facebook.com/share/v/4BU1PqH34vAJhZ2C/?mibextid=qi2Omg
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম