।। প্রথম কলকাতা ।।
বাংলাদেশে প্রতারণার জাল বিছিয়ে দিচ্ছে মধুবৃক্ষ। কিভাবে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে খেজুর গুড়? এক শ্রেণীর মুনাফাখোর কিভাবে চালাচ্ছে লোক ঠকানোর ব্যবসা? আইনকে বুড়ো আঙুল, হু হু করে কাটা হচ্ছে এতো দামী সম্পদ। বড় সংকটে জড়াচ্ছে গাছিরা। কোন পথে পুরোনো ঐতিহ্য ফেরাতে পারে হাসিনা সরকার? বিদেশেও বিশাল মোহ, আদৌ কি বাঁচবে বাংলাদেশের এই অমূল্য রত্ন? খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য এভাবে মাঠে মারা যাচ্ছে? তাও কিনা বাংলাদেশের বুকে?কিভাবে শীতের সম্পদের স্বাদ ফিকে হচ্ছে পদ্মাপাড়ের দেশে? তলে তলে কিভাবে চলছে জালিয়াতি? এই সিজনে খেজুরের গুড় হিসাবে যা পাওয়া যায়, যা কিনে নিয়ে যায় মানুষ তার অধিকাংশই একশ্রেণির মুনাফাখোর গুরের সঙ্গে চিনি, সুগার মিলের চিটাগুড়, নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর ক্যামিকেল মিশিয়ে বিক্রি করে। আর এতেই হারাচ্ছে খেজুর গুড়ের স্বাদ, বাড়ছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। কমছে খেজুর গুড়ের ক্রেতা।
না এখানেই শেষ নয়। একেবারে গোড়ায় ঘুণ ধরেছে। বাংলাদেশের বুকে ৭ থেকে ৮ বছর আগেও যে ছবিটা দেখা যেত, এখন সেটা বদলেছে। একশ্রেণির অসাধু ইঁটভাটার ব্যবসায়ীরা জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। ইটভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ তার পরেও ইটভাটার মালিকরা সবকিছু ম্যানেজ করে ধ্বংস করে চলেছে খেঁজুর গাছ। তাছাড়া, মানুষের বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ক্রমেই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে। আরও কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামের কিছু কিছু এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা না হওয়া। নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করা, গাছ কাটায় পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। ফলে শীত পড়ার শুরুতেই পেশাদার খেজুর গাছিরা চরম সংকট ফেস করছে।
অথচ কয়েক বছর আগেও শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত থাকতো। খেজুরের রস ও পাটালি গুড় বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা আয় করতো। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ সহ বিশ্বের অনেক দেশে খেজুরের গুড় রফতানি হতো। এর জন্য দায়ী উদাসীনতা আর কঠোর নজরদারির অভাব। আর তাই মধুবৃক্ষের বিরাট অংশ এভাবেই উজার হয়ে যাচ্ছে।খেজুর রসের দানা গুড়, ঝোলা গুড়ের মিষ্টি গন্ধ এখন আর বাংলাদেশ এর গ্রামের হাট বাজারে খুব একটা দেখা যায় না। সবাই শীতের ঐতিহ্য মিষ্টি খেজুর রসের স্বাদ আজ ভুলতে বসেছে। তবে চেষ্টা থাকলে উপায় হয়।ঐতিহ্যবাহী এই খেঁজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব। গ্রামীণ ঐতিহ্য ও অর্থনীতিতে খেজুর গুড়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, সরকারি উদ্যোগে এর বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
নাহলে, শুধু খেজুর গাছ নয়, খেজুরের রস সংগ্রহকারী গাছিদের জীবন ও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। এমনিতেই আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় এখন আর সেই রমরমা অবস্থা নেই। ফলে, ইঁটভাটা কিংবা অন্য পেশায় দৈনিক রোজগার বেশি হওয়ায়, খেজুর গাছির সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমছে। গাছিরা বলছেন, খেজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খেজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের রস আরব্য উপনাস্যের গল্পে পরিণত হতে চলেছে আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও সময় আছে।যথাযথ পরিবেশ আইন প্রয়োগ করে ইটভাটা সহ যেকোনো বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেজুর গাছকে রক্ষা করতে হবে, নাহলে বিপদ বাড়বে।
অবশ্য সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু এলাকায় কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ রোপণ করলে ভবিষ্যতে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। পরিকল্পিত উপায়ে খেজুর রস উৎপাদন হলে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ব্যবসায় যুক্ত করতে পারলে খেজুর গুড় দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মূদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। তবেই, মৌসুমী খেজুর রস দিয়ে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে শুরু হবে শীতের আমেজ। পিঠা, পায়েসে লেগে থাকবে গুড় পাটালির গন্ধ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম