।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশের বুকে থরে থরে সাজানো গুপ্তধন, চোখ আটকে যাচ্ছে গোটা পৃথিবীর। অদ্ভুত সুন্দর! জানেন ওপার বাংলার মাটিতে কি জমাচ্ছে দেশটা? তলে তলে গ্রীন হাউজের পাহাড়! সারা বছর সেখানেই কি সোনা ফলে? সবুজ খাজানা পাড়ি দেয় বিদেশের মাটিতে। নেদারল্যান্ডসের ডিটো নকশা? বারোমাসের এক মন্ত্র! টেকনিকটাই আলাদা, পৃথিবীর বুকে এভাবে সুনাম কুড়োচ্ছে বাংলাদেশ। কথায় আছে, উপরওয়ালা যখন দেয়, ছপ্পর ফারকে দেয়। বাংলাদেশে কি নেই? সবটাই ছবির মত সাজানো। জলে স্থলে একেবারে ভরে আছে ওপার বাংলা। সবজি চাষে বাংলাদেশে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে, সেই নমুনা দেখছে গোটা বিশ্ব।
ভালো স্বাদের ফল, সবজি রফতানিতেই হচ্ছে বিরাট লক্ষী লাভ। করলা, বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, বরবটি, কাঁচা লঙ্কা, কাঁচা পেঁপে, পালংশাক, পটল, কাঁচকলা, মূলো, ঝিঙে, কচু, চিচিঙ্গা, কচুর লতি, মিষ্টি আলু, চালকুমড়া, তেজপাতা, কলার ফুল, ফুলকপি কি পাঠায় না বাংলাদেশ? ফলের তালিকাও বেশ লম্বা। যেমন কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আম, কামরাঙা, ড্রাগন ফল, কতবেল, আমড়া, খেজুর, আমলকী, জলপাই, লেবু আরো কত কি।সময় বদলেছে। একসময় ভালো স্বাদের সবজির জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। টমেটো, লাউ, কপি বা নানা পদের শাক শীতকাল ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে পাওয়াই যেত না। গ্রীষ্মকাল ছিল সবজির আকালের সময়। এখন প্রায় সারা বছরই ২০ থেকে ২৫ রকমের সবজি খেতে পারছে ওই দেশের মানুষ। নানা রকমের শাক এখন শুধু বাজারে নয়, অলিগলিতে ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে ফল আর সবজি। বাংলাদেশ থেকে তাজা সবজি রপ্তানি হয় বিশ্বের ৪০-৪৫টির বেশি দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও বাংলাদেশ তাজা সবজি ও ফল রফতানি করছে। ইউরোপেও বাংলাদেশী ফল ও সবজির বড় বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে বছরে সবজি উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টন। ফল উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেক ফল ও সবজি অতিরিক্ত থাকে বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেইসব ফল সবজি বিদেশ পাড়ি দেয়, আর বাংলাদেশের মাটিতে ভরে যায় বৈদেশিক মুদ্রা। যদিও, ইউরোপের দেশগুলোতে ফল ও সবজি রফতানি করতে হলে তাদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। খাদ্য নিরাপত্তা, প্লান্ট কোয়ারেন্টিন ও প্লান্ট প্রটেকশনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে গুড এগ্রিকালচার প্রাকটিস বা গ্যাপ মেনে চলতে হয়।
কিন্তু, তাতে কি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের চাহিদা কমছে? মধ্যপ্রাচ্যে তো বিশাল ডিমান্ড।বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি রপ্তানি আয় আসা ছটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও কুয়েত। বাংলাদেশের মুকুটে অনেক পালক। বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং পেঁপে উৎপাদনে তৃতীয়। একদিনে এতো সুনাম আসেনি। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সাল থেকে শাকসবজি ও ফলমূল রফতানি শুরু করে। প্রথম বাজার ছিল যুক্তরাজ্য, তখন ১ হাজার ৭০০ ডলারের পণ্য রফতানি হয়। দিনে দিনে রফতানি বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানিতে আয় হয়েছিল। এখন গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী।
এখন ফল ও সবজি রফতানিতে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের প্রতিযোগী হতে চায়। কৃষিপণ্য রফতানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ নেদারল্যান্ডস। তারাই সবচেয়ে বেশি সবজি রফতানি করছে। কিন্তু, এতদূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ যে নেদারল্যান্ডসের প্রতিযোগী হতে চায়। গ্রিনহাউসে নেদারল্যান্ডস খুবই সফল। অনেক ফসল তারা গ্রিনহাউসে উৎপাদন করে, এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস সরকার বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে একইসঙ্গে, আনারস ও কলার মতো বিভিন্ন ফল ও সবজি বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে তারা তা বিদেশে রফতানি করলে। বাংলাদেশের জন্য সেটি একটি ভালো বিষয় হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাছ থেকে সবজি, ফুল থেকে ফল। বাংলাদেশের সম্পদে ভরে যাচ্ছে বিশ্ব। না, এখানেই শেষ নয়। এখনও আরও বাকি আছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম