।। প্রথম কলকাতা ।।
বাংলাদেশীদের জীবনে এ কোন আতঙ্ক? য়রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে কী ঘটছে ওখানে? জানলে আঁতকে উঠবেন। রীতিমতো বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। জানেন কীসের টানে বাংলাদেশিরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যায়? রহস্য ঘনাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের পাশাপাশি হুহু করে বাংলাদেশীরা ছুটে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। শুরু হয়েছিল নব্বই-এর দশকে। ১৫ টা বছর ধরে এটাই ঘটে চলেছে। উদ্দেশ্যটা কী?
কাজ আর অর্থ উপার্জন, এটাই টার্গেট আর ঠিক এই কারণে বিরাট সংখ্যক বাংলাদেশীরা এমন একটা জায়গায় ছুটে যাচ্ছে যেখানে কিনা জীবনের নিরাপত্তাটুকু নেই। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় যেসব বাংলাদেশী বসবাস করছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবসা করেন, বিভিন্ন দোকানে কাজ করেন। ভালো রকমের টাকাও রোজগার করেন। উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। ওপার বাংলা থেকে যাওয়া একজন কর্মচারী বাংলাদেশি মুদ্রায় সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন পান। তাদের লক্ষ্যই থাকে কয়েক বছর দোকানে চাকরী করে টাকা জমিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের একটি ব্যবসা দাঁড় করানো। এইভাবেই মুদির দোকান, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, মোবাইল টেলিফোন, ইলেকট্রনিকস, টেকনোলজি একসেসরিজ-সহ বিভিন্ন জীনিসের দোকান সাজিয়ে বসেছেন বাংলাদেশীরা।
ওখানে যেসব বাংলাদেশীরা থাকেন তারা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করা বেশ সহজ। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসার অনেক সুযোগ রয়েছে। ভালো ইনভেস্ট করতে পারলে ব্যবসায় উন্নতি করা যায়। কিন্তু ওই যে কথায় বলে সব ভালোর একটা খারাপ ও থাকে। এখানে বাংলাদেশীদের লাইফ রিস্ক আছে। ওখানে প্রাণে বেঁচে থাকাই কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের দোকানপাটে হামলা-লুটপাট নিয়মিত ঘটনা। ওখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওপর হামলার ঘটনা মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়। বিবিসির রিপোর্ট, ২০১৫ সাল থেকে প্রায় ছয়শো’র মতো বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, সঙ্গে ব্যক্তিগত ও নারীঘটিত শত্রুতার কারণেই একের পর এক বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন। অলরেডি এই নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারপরেও কী ছবিটা বদলেছে? দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা বাংলাদেশীদের বেশিভাগই থাকেন বড় শহরগুলোতে – যেমন জোহানেসবার্গ, কেপটাউন কিংবা ব্লুমফন্টেইন। দেশটিতে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী থাকেন। যারা এই মুহূর্তে প্রত্যেকেই ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। শুধুমাত্র একটু রোজগারের জন্য। দুটো বেশি পয়সা উপার্জনের জন্য। আর এতেই ফুলেফেঁপে উঠছে বাংলাদেশ। কিভাবে? দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ৫ বছর আগের তুলনায় এই আয় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পথটাও সোজা নয়।
এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে যে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ধরা পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এয়ারপোর্ট থেকে অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই আবার ভিন্ন-ভিন্ন রুটে কয়েকবারের চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পৌঁছান। কেউ কেউ আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে দালালদের দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়ে দেন। কিন্তু এতো টাকা খরচ করে, লাইফ রিস্ক নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও নিরাপদে থাকা যাবে, এমন কোন গ্যারান্টি তো নেই। দেশটিতে বাংলাদেশীদের জন্য আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে যে। আর ওখানেই ভয়, আতঙ্ক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম