।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: ডলার সংকট বাংলাদেশের কাছে বড় টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একের পর এক সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে শেখ হাসিনার দেশকে। এই সমস্যার সূত্রপাত কিভাবে, কোথায়? কোন কোন খাতে ডলার সংকটের আঁচ এসে পড়ছে? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? সংকট কাটবে কি সহজেই? ঝক্কি পোহানোর এইতো সবে শুর। ডলার সংকটের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এসে লেগেছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। রামপালেরও একই পরিস্থিতি। বিদ্যুতে, জ্বালানিতে, জরুরী পণ্য আমদানিতে, এলসি খোলার ক্ষেত্রে, ই কমার্স সহ বিভিন্ন খাতে ডলার সংকট একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে। না, খুব সহজে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেমন পায়রার ক্ষেত্রেই কয়লা আনতে এখনো প্রায় ২৫ দিন সময় লাগবে, সে হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে, ততদিন ভোগান্তি। অন্যদিকে, জ্বালানি খাতেও ছবিটা অনেকটা একই রকম। তেল আমদানির বিল দিতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, এদিকে বকেয়া না মেটালে বিদেশি কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। না এখানেই শেষ নয় ডলার সংকটের কারণে মেডিকেল ডিভাইস ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের আমদানি কমেছে।কমেছে এলসি খোলা। কম্পিউটার ও মোটর সাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিতে এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইলের কাঁচামালের জন্য এলসি খোলা কমেছে ৩২ শতাংশ। সিমেন্ট ও স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এফ-কমার্সও। বাংলাদেশে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের কার্যক্রম সীমিত করার কথা ঘোষণা করেছে মেটার অথরাইজড এজেন্ট এইচটিটিপুল। এক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এফ-কমার্স বা ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা হচ্ছে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের বড় অংশ। ফলে এরকম চলতে থাকলে ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়বে। এফেক্ট শিল্প খাতেও।
ডলার সংকটের কারণে গত এক বছরে মোংলা বন্দর দিয়ে কমেছে গাড়ি আমদানি। এমনকি, প্রকৌশল শিল্পেও পড়েছে এফেক্ট। যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারীরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন, এতে বিক্রি কমেছে ব্যবসায়ীদের। ঈদে চামড়া নিয়েও রয়েছে বিপদের শঙ্কা। চামড়া ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, একদিকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না, তার ওপর কলকারখানায় বিদ্যুৎ আর গ্যাস না থাকা ব্যবসায়ীদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাদ নেই মুদ্রণশিল্প ও। বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্পেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডলার সংকটের কারণে।
এই সমস্যা হঠাৎ করে একদিনে তৈরি হয়নি। দু বছর ধরে চলা করোনা মহামারির প্রভাব আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চরম সংকটে পড়ে গেছে, বিশ্বজুড়ে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি, বাংলাদেশ এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। সরকার বেশকিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ডলার সংকট আরও তীব্র হয়ে দেখা দেয়। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই দীর্ঘমেয়াদি ডলার সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। যেমন, দেশের রফতানি পণ্যের পরিধি বৃদ্ধি, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অত্যাবশ্যক পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি। যেমন প্লাস্টিক কন্টেইনার, প্যাকেজিং বা কার্টুনের বক্স, বেকারি আইটেম, ফলমূল শাকসবজি, পাটের ব্যাগ। তাছাড়া অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল আমদানি নিয়ন্ত্রণ, কমপক্ষে পশ্চিমা বিশ্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জন খুব সহজে ব্যাঙ্কিং চানেলে দেশে পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। আর এর জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিদেশের ব্যাংকের সাথে করেসপনডেন্ট রিলেশনশিপ বাড়াতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিয়ে রাখলে ডলার সংকট যতই তীব্র হোক বাংলাদেশ সেরকম কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম