।। প্রথম কলকাতা ।।
কি দোষ করেছে বাংলাদেশ? পাকিস্তানের থেকে হাজার গুণ ভালো পজিশনে থাকা বাংলাদেশের সঙ্গে কীসের শত্রুতা যুক্তরাষ্ট্রের? পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিমাতৃ সুলভ আচরণের কারণ কি? দুই দেশের প্রতি এমন বৈপরিত্যপূর্ণ আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এই প্রশ্নগুলোই এখন খুব বেশি করে প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, অঘোষিত সামরিক শাসনের অধীনে থাকা পাকিস্তানে বিরোধীদের দমনে গণগ্রেফতার, গুম, খুন, নির্যাতন নিয়ে যখন কোনো আওয়াজই তোলা হচ্ছে না, তখন গণতন্ত্র রক্ষার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি আরোপ করতে কেন উঠে পড়ে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র? নিশ্চয়ই এটা এখনো নতুন করে বুঝিয়ে দিতে হবে না যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরি করে বেড়ানোর বিষয়টা পক্ষপাতদুষ্ট। হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত এমনই। বুঝতে হবে, বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসা নীতি আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র দুটো ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
এক, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের আত্মীয়দের একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। এমনকি খোদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলেও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী। দুই, বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের বড় বাজার পশ্চিমা বিশ্ব, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ফলে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা বন্ধ করার বিষয়টা অনেকটা হুমকির মতো। বা বলা যায় ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে এই পথে হাঁটছে, সেটা বেশ স্পষ্ট। বাংলাদেশকে টার্গেটে রাখার পেছনে আরো কারণ আছে বৈকি। যেমন ইসলামপন্থিদের প্রবল অপছন্দের পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার পরিচালনা করে আসছেন।একদিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেমন বজায় রেখেছেন তেমনই দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ এর ঠিক বিপরীত অবস্থা পাকিস্তানের।
না রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না অর্থনৈতিক, পাকিস্তান বর্তমানে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এতো ইতিবাচক দিক থাকার পরও বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাকা হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান ডাক পেয়েও একবারও যোগ দেয়নি।যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পমেয়াদী ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় পাকিস্তানকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে গেলেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে চলেছে। মনে করে দেখুন ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের উপর স্যাঙশন দেওয়া হয়। র্যাবের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ জব্দ করা হয়। অথচ পাকিস্তানে এই মুহূর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করতে যা যা চলছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। বাংলাদেশের চীনা প্রীতি কমাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা করছে তাতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতিরও সম্ভাবনা রয়েছে সেটা কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছে না।
উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু চীন তাতে সাড়াই দেয়নি। বেইজিং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তালিকাভুক্ত। ফলে তিনি মার্কিন সরকারের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন না। একইভাবে মিয়ানমার, ইরান, বেলারুশ এবং কিউবার মতো দেশগুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা কোনো রাজনৈতিক ফলাফল বয়ে আনেনি। যদিও, পশ্চিমারা এখনও বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করছে, ডলার এখনো বিশ্বের প্রাথমিক রিজার্ভ মাধ্যম হিসাবে রয়ে গেছে। তাই নিষেধাজ্ঞা বিষয়টা এখনও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। আর তাই বাংলাদেশে, নিজেদের অঘোষিত মোড়লগিরি বজায় রাখতে, বলা ভালো বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে হুমকি এবং জবরদস্তির পথ বেছে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, এই জবরদস্তি ও বলপ্রয়োগর জন্য বাংলাদেশিদের মনে ওয়াশিংটনের অবস্থান কি হবে বা কেমন হবে সেটা নিয়ে ভাবার সময় আস্তে অনেক দেরি না হয়ে যায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম