।। প্রথম কলকাতা ।।
চীনের বড়সড় বাঁধের জেরে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে। চীন বাংলাদেশের বন্ধু হয়েও গোপনে সর্বনাশের চেষ্টা। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর এতগুলো বাঁধ তৈরির কারণ কী? চীনের জন্য শুকিয়ে কাঠ হতে পারে এশিয়ার আরও দেশ। চীন দেশটায় মোট ৯৮ হাজার বাঁধ আছে অবশ্য তাতে চীনের বিপুল পরিমাণ লাভ হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর যে কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে সেটা দেখা বা বোঝার প্রয়োজনও মনে করেন না প্রেসিডেন্ট জিনপিং। কারণ এক্ষেত্রে বড় নিয়ম ভেঙেছে বেজিং। কেন ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে এতটা মাতামাতি জানেন? সেজন্যই বোধহয় শেখ হাসিনা বলেছিলেন চীনের সঙ্গে টাকার সম্পর্ক আর ভারতের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক তাদের। প্রত্যেকটা মূহুর্তে বাংলাদেশকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বেজিং। নেপথ্যে বাংলাদেশের প্রাণ ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ওপর চীনের আট আটটা বাঁধ।
কীভাবে এই বাঁধের জন্য বাংলাদেশ বড়সড় ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত জানে এটা কত বড় ফন্দি বেজিংয়ের। তাই বারবার দিল্লি কড়া সমালোচনা করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ মারাত্মক ইন্টারেস্টিং এটি একটা আন্তঃসীমান্ত নদী। যা চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। ব্রহ্মপুত্র এক এক অঞ্চলে এক নামে পরিচিত এর উৎপত্তি হিমালয় পর্বতের উত্তরাংশে কৈলাশ পর্বতের কাছে মানস সরোবরে এরপর এটি ইয়ারলাং স্যাংপো নামে চীনের তিব্বতের পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এটি শিয়াং বা সিয়ং নাম পেয়েছে। ভারতের অসমের মধ্যদিয়ে আসার সময় এর নাম দিহাং এরপর এতে দিবং ও লোহিত নামে আরও দুটি বড় নদী যোগ হয়ে সমতলে এসে চওড়া হয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে যমুনা নদী হিসেবেই বেশি পরিচিত। আর একটু জেনে নিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনার রয়েছে চারটি প্রধান উপনদী দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা এবং করতোয়া—আত্রাই নদ প্রণালি সাংপো-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী। পদ্মা ও মেঘনার চেয়ে এর শক্তি ও জলধারা অনেক বেশি। তাই ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীব্যবস্থার প্রাণ। আর সেখানেই সজোরে আঘাত বসিয়েছে চীন। ব্রহ্মপুত্র নদের নিজেদের (ইয়ারলাং স্যাংপো নদীতে) অংশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দেবার উদ্যোগ নেয় বেজিং।
এরপর অন্তত আটটি বাঁধ নির্মাণ করেছে তারা। যার মধ্যে কয়েকটি এরইমধ্যে চালু হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ প্রক্রিয়াধী। এর ফলে কিরকম ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের? বিশ্লেষকরা বলছেন এই প্রভাব বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় আনতে পারে। কারণ নদীপ্রধান দেশ বাংলাদেশ পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষি সবক্ষেত্রেই আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। নদীগুলোতে জলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বড় সংকটে পড়বে নদীপাড়ের কোটি কোটি মানুষ। ব্যাপকহারে বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীতে নাব্য সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে যেমন জলেরপ্রবাহ কমে যাচ্ছে তেমনি উর্বরতা হারাচ্ছে চাষাবাদের জমি সেইসঙ্গে কমে যাচ্ছে মৎস্যসম্পদ। বাংলাদেশ বারবার সেই উদ্বেগের কথা তাদের পরম মিত্র চীনকে জানিয়েছে কিন্তু অতিচালাক বেজিংয়ের দাবি হ্মপুত্র নদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত বাঁধগুলো ভারত ও বাংলাদেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এমনকি সবথেকে বড় কথা অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীপ্রবাহে পরিবর্তন আনতে পারে। এমন কোনো কাঠামো তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার যে নিয়ম রয়েছে চীন এ ক্ষেত্রে সেটা মানেনি।
ব্রহ্মপুত্র নদের বাংলাদেশ অংশে তথা যমুনা নদীতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন বাংলাদেশের যখন জলের প্রয়োজন হবে না তখন জলের প্রবাহ অতিরিক্ত হতে পারে। আবার যখন শুষ্ক মৌসুমে জলের প্রয়োজন যখন হবে তখন জল একেবারেই পাওয়া যাবে না। কারণ চীন তাদের সুবিধা অনুযায়ী জল আটকে রাখবে ও ছাড়বে। শুধু বাংলাদেশ নয় এছাড়াও চীনের নদীবাঁধ সংক্রান্ত নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ তালিকায় আছে লাওস, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশও। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে জলের বিষয়ে আরও বেশি সহনশীল হওয়া উচিত চীনের। তা না হলে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ আগামী দিনে জলের অভাবে ধুঁকবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম