।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশ মহাফাপড়ে পড়ে যাচ্ছে! পোশাক রপ্তানি চেইন একবার ছিঁড়ে পড়লে, কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে পদ্মা পাড়ের দেশটা? বাংলাদেশকে ঠিক কোন বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন? ‘মানবাধিকার’ কাঁটায় বিদ্ধ ওপার বাংলার বাণিজ্য? শৈত্যপ্রবাহের চক্রব্যূহে ঢাকা ব্রাসেলস সম্পর্ক। ইইউ রাজনৈতিক ইস্যুর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যকে জড়ালে, বিপদের আঁচ লাগবে বাংলাদেশের গায়ে। বড় পরীক্ষা! “জিএসপি প্লাস” আদায়ে ফুল মার্কস পেয়ে পাশ করবে তো হাসিনা সরকার? বাংলাদেশ ১০০% নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওপার বাংলার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব। কিন্তু ইইউ? ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ধ্বস নামার চান্স কতটা? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
অনেকদিন ধরেই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত ২৭ দেশ। বছরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। তার বিপরীতে ইইউ থেকে আমদানি ৪০০ কোটি ডলারেরও কম। অর্থাৎ ইইউর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। আর ইইউতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৯৩ শতাংশই তৈরি পোশাক। সেই ইইউ-র বাজারে এবার কি ‘অগ্রাধিকার’ হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশকে যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিয়েছে জিএসপি। যে জিএসপির জন্য গত দুই দশকে ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প পোক্ত জায়গায় পৌঁছেছে কিন্তু এরপর কি হবে? মনে রাখতে হবে ইইউতে ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা ধরে রাখতে বাংলাদেশকে “জিএসপি প্লাস” পেতে হবে এই নিয়ে যখন ইইউর সঙ্গে হাসিনা সরকারের দরকষাকষি চলছে ঠিক তখনই মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশকে বিঁধছে ইইউ।
ওপার বাংলার মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহন করা হয়েছে। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ইবিএ কর্মসূচির মাধ্যমে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়। তাহলে কি জিএসপি সিস্টেম থেকে বাদ পড়বে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বাংলাদেশের টেনশন বাড়ছে। ইইউ’র প্রস্তাবের বিষয়টাকে, সরকারের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। না, ইইউতে শুধু বাংলাদেশ যে পোশাক রপ্তানি করে তা তো নয়, তারা বড় ইনভেস্টর ও। সঙ্গে ঋণ ও দেয়। তাই ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে জিএসপিকে বাঁচাতে হবে। জিএসপি প্লাস না পেলে পোশাক রপ্তানির কী হবে?
জিএসপি সুবিধা না থাকলে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নামবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ কারণ, আজকাল প্রতিযোগিতার বাজারে ১-২ শতাংশ দাম কমবেশির কারণে ক্রেতা হারাতে হয়। সেখানে জিএসপি সুবিধা না থাকলে বাংলাদেশকে তখন প্রায় ১২ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে ইইউতে পোশাক রপ্তানি করতে হবে। ট্যাক্সের কারণে তৈরি পোশাকের দাম ১০-১২ শতাংশ বেড়ে যাবে কিন্তু, এই বাড়তি দাম কেন দিতে চাইবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান? অতএব উপায় একটাই একমাত্র দু দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমেই সম্ভব বুঝে এগোতে হবে বাংলাদেশকে। বর্তমানে ইইউর বাজারে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, উজবেকিস্তান, বলিভিয়াসহ আটটি দেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা পায়। আর বাংলাদেশ সহ ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু, এতো বড় স্টেপ নেবে কি ইইউ? জিএসপি প্লাসের সিস্টেম থেকে আদৌ কি বাদ দেবে বাংলাদেশকে?আশা হারাচ্ছেনা বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ। ইইউ কখনোই রাজনৈতিক ইস্যুর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যকে জড়ায়নি।
এবারেও সেই পথেই হাঁটতে পারে। যদিও এবারের বিষয়টি কোন দিকে যাচ্ছে, তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছে না কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবের কারণে জিএসপি প্লাসের আলোচনায় বাংলাদেশ যে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে সেই বিষয়টাও পুরোপুরি অগ্রাহ্য করছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এখনও সময় আছে বাংলাদেশের হাতে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল তালিকায় যুক্ত হলেও পরের তিন বছর সুবিধাটি থাকবে। যদিও এটা তিন বছরের পরিবর্তে আরও ছয় বছর বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু ২০২৯ সালের পর ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে নাহলে বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার ইইউর কাছে জোর ধাক্কা খেতে পারে ওপার বাংলা। অলরেডি গণতান্ত্রিক, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, সব দলের অংশগ্রহণ, অবাধ-সুষ্ঠু বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছে ইইউ। আর এবার মানবাধিকার ইস্যু তবে, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে ইইউ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কিছু কথা আছে। সেগুলো উন্নত করার চেষ্টা চলছে। এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ইইউ থেকে যে ধরনের ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা পাওয়া যায়, সেটা হারাতে নারাজ বাংলাদেশ। বাকিটা বলবে সময়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম