।। প্রথম কলকাতা ।।
Puffed Rice: রোজ মুড়ি খাচ্ছেন? মুড়ির (Puffed Rice) হাজারো উপকারের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিপদ। রোজ মুড়ি খেয়ে নিজের বিপদ নিজে ডাকছেন না তো? ওজন বাড়ার ভয়ে রাত্রে নির্দ্বিধায় একবাটি মুড়ি খাচ্ছেন! সকালে জল খাবার বা সন্ধ্যার আড্ডায়, বাঙালি বাড়িতে মুড়ি ছাড়া চলে না। শুধু কি মুড়ি, তার সঙ্গে থাকে রকমারি চানাচুর, পিয়াঁজ, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা, টমেটো আরো কত কি। যে যেমন পারে তেমন ভাবে মুড়ির স্বাদ বাড়ান। ব্যস্ত অফিস যাত্রীরা খিদে মেটাতে অনায়াসে রাস্তার দোকান থেকে কিনে নেন এক ঠোঙা ঝাল মুড়ি। বাঙালির জনপ্রিয় মুড়িতে (Puffed Rice) লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক বিপদ। মুড়ির ক্ষতিকারক দিক থেকে বাঁচতে তাহলে কি মুড়ি খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে? আর যদিও বা খান তাহলে কিভাবে খাবেন? সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন।
মুড়ি একটি ক্ষতিকারক খাবার, এই কথা অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে। অনেকেই আছেন যারা খালি পেটে চায়ের আগে মুড়ি খান। ব্রেকফাস্টে ঝামেলা এড়াতে একবাটি মুড়ি নিয়ে অনায়াসে সকালটা কাটিয়ে দেন। আবার কেউ বা ওজন বাড়ার ভয়ে রাতে ডিনার সারেন মুড়ি দিয়ে। হয়ত ভাবছেন, রাতে রান্নার ঝামেলা থেকে বাঁচতে হালকা কিছু খেয়ে নিই, সেই হালকা খাবারের তালিকায় থাকে মুড়ি, এই হালকা খাবার আপনার যা ক্ষতি করে, তার থেকে ভরপেট খেলে অনেক ভালো।
আগে আসা যাক মুড়ির উপকারের দিকে। ১০০ গ্রাম মুড়িতে রয়েছে প্রায় ৪০২ গ্রাম ক্যালরি। ফ্যাট রয়েছে ০.৫ গ্রাম। ক্যালোরির পরিমাণ ০ মিলিগ্রাম। যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা নির্দ্বিধায় মুড়ি খেতে পারেন। মুড়িতে থাকা প্রচুর ফাইবার আপনার শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে দেয় না। যাদের গ্যাস অম্বলের সমস্যা রয়েছে তারা একবাটি শুকনো মুড়ি খেলে ম্যাজিকের মত কাজ করবে। মুড়ি বাড়াতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যার ফলে ইনফেকশন, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গলায় ব্যথার মতো সমস্যা থাকবে না। মুড়িতে থাকা কিছু উপকারী উপাদান আর ফাইবার সহজে মেদ জমতে দেয় না। তাই যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য মুড়ি বেশ উপকার। এছাড়াও মুড়িতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম, আয়রন প্রভৃতি।
কিন্তু মুড়ির সমস্যা অন্য জায়গায়
যদি ১০০ গ্রামের মুড়ির হিসাব করেন তাহলে একটু অবাক হবেন। ১০০ গ্রাম মুড়িতে পাবেন ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট রয়েছে প্রায় ৯০ গ্রাম। এই অঙ্কটা শুনলে একটু অবাক হতে হয়। ১০০ গ্রাম মুড়ি খেলে আপনার শরীরে যাবে ৯০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। বিশেষ করে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের জন্য অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যে কতটা ক্ষতিকর তা কম বেশি সময় জানেন। ডায়াবেটিস থাকলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি রয়েছে এমন খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো, চিনিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হয়েছে ৬৫, যার কারণে ডাইবেটিস রোগীদের চিনি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০। আশ্চর্যের বিষয় মুড়ির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৯০। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং আপনি ঠিক কতটা কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছেন তার সঙ্গে গুণ করে ১০০ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় গ্লাইসেমিক লোড।
{( গ্লাইসেমিক ইনডেক্স× প্লেটে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ)÷ ১০০}
১০০ গ্রাম মুড়ির গ্লাইসেমিক লোড ৮১। একজন ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে সারাদিনের গ্লাইসেমিক লোড থাকা উচিত ১০০, যার ৮০ শতাংশ কভার করবে মাত্র ১০০ গ্রাম মুড়ি। এবার প্রশ্ন হল, তাহলে কি ডায়াবেটিক পেশেন্টরা মুড়ি খাবেন না? অবশ্যই খাবেন, তবে খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি রয়েছে। মুড়ি খেতে হবে হিসেব করে। সারাদিনের ১৪ গ্রামের বেশি মুড়ি একেবারেই খাওয়া যাবে না। মুড়ি খান সবজি দিয়ে। তবে মাটির নিচে যে সবজি পাওয়া যায় সেই সবজি এড়িয়ে চলবেন। সেক্ষেত্রে আপনি সবুজ শাকসবজি কিংবা সবুজ শাকের তরকারি দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খেতে পারেন। অনেকেই বেশি মুড়ি নেন আর কম সবজি নেন, এই ধারণা ভুল। ২ কাপ সবজির সঙ্গে এক কাপ মুড়ি নিতে হবে। আরো ভালো হয় যদি মুড়ির সঙ্গে পাতি লেবুর রস মিশিয়ে নেন। কারণ পাতি লেবু গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমিয়ে দেয়।
আজকাল বাজারে বেশিরভাগ ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি পাওয়া যায়, যা খেলে বিপদ বাড়বে। লবণের পরিমাণ বেশি থাকলে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের মুড়ি না খাওয়াই উচিত। এছাড়াও অতিরিক্ত মুড়ি খেলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ে। যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে তারা মুড়ি একটু এড়িয়ে চলুন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম