।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: মাটির গন্ধ শুঁকে এই ব্যক্তি বলে দেন সেখানে ইঁদুর আছে কিনা। তারপর বিশেষ উপায়ে মাটির গর্ত থেকে টেনে আনেন ইঁদুর। উপকৃত হন চাষিরা। শুধুমাত্র একটা ইঁদুর প্রায় দুই মন আলু নষ্ট করে দিতে পারে। একবার ভাবুন তো, যদি একটা জমিতে ৪ থেকে ৫ টা ইঁদুর দাপিয়ে বেড়ায় তাহলে সেই কৃষকের অবস্থা কেমন হবে? এমনি থেকেই দিনের পর দিন কৃষি ক্ষেত্রে খরচ বেড়েই চলেছে। বহু কৃষক (Farmer) আছেন যারা ফসল ফলালেও মুনাফা তো দূর উল্টে লোকসান হয়। বাংলাদেশের (Bangladesh) কৃষকদের বন্ধু হলেন আনোয়ার হোসেন। যাকে সবাই ইঁদুর আনোয়ার নামে চেনেন। তিনি বিশেষ কায়দায় কৃষি জমি থেকে ইঁদুর ধরতে পারেন। একসময় এটা ছিল তার নেশা, পরবর্তীকালে তার পরিণত হয়েছে তার প্রিয় পেশায়। এই কাজের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের (Bangladesh Government) তরফ থেকে প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন।
সমীক্ষা (Survey) বলছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার শস্য, আসবাবপত্র এবং ফলমূল নষ্ট হয় শুধুমাত্র ইঁদুরের কারণে। বর্তমানে বাংলাদেশের জয়পুরহাটের আক্কেলপুর এবং তার আশেপাশের উপজেলায় আনোয়ার হোসেন এই ইঁদুর ধরার কাজ করছেন। এই এলাকায় ২০২২ সালে শুধুমাত্র ইঁদুর দ্বারা ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। প্রায় ৬৭ মেট্রিক টন আমন ধান, ৪৩ মেট্রিক টন আলু এবং গম ৩ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকদের বড় সহায় মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। কৃষি জমি থেকে খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারেন প্রচুর ইঁদুর।
ইঁদুর ধরার নেশা থেকে পেশা
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নাম এখন ইঁদুর আনোয়ার। ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় যখন মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে ধান কুড়োতেন তখনই ইঁদুর ধরার এই আইডিয়া তার মাথায় আসে। তিনি মূলত ধান কুড়িয়ে তা দিয়ে মুড়ি মোয়া খেতেন। হঠাৎ একদিন ইঁদুরের গর্তের মধ্যে কিছুটা বেশি ধান পান। সেই ধান দিয়ে প্রায় তিন থেকে চার দিন মোয়া খেয়েছিলেন। তারপর থেকেই তার মাথায় ইঁদুর ধরার নেশা চেপে বসে। বর্তমানে যা পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। যারা ইঁদুর ধরে কৃষকদের উপকার করেন তাদের বাংলাদেশ সরকার পুরস্কৃত করে। ইতিমধ্যেই আনোয়ার হোসেনের ঝুলিতে রয়েছে প্রচুর জাতীয় পুরস্কার। তিনি হলেন বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ইঁদুর নিধনকারী।
ইঁদুর মারার জন্য সাধারণত সরকার একটা বাজেট দিয়ে দেয়। যে যত বেশি ইঁদুর মারতে পাবে সেই অনুযায়ী তিনি পুরস্কার পাবেন। আগে আনোয়ার প্রতি ইঁদুর পিছু অর্ধেক কেজি গম পেতেন। তারপর গম বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীকালে চাল পেতেন। কিন্তু এখন চালও বন্ধ, তাই কৃষকদের কাছে আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে তিনি ইঁদুর ধরে দেন। তার বদলে কৃষকরা খুশি হয়ে তাকে কেউ এক কেজি, কেউ দুই কেজি, আবার কেউ বা খুশি হয়ে ৫ কেজি ধান দেন। এক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেনের কোনো জোর জুলুম নেই। যার যেমন ক্ষমতা তেমন দেবেন।
ইঁদুরের লেজের বিনিময়ে পুরস্কার
আনোয়ার হোসেন প্রত্যেকে ইঁদুরের লেজ কেটে সংগ্রহ করে রাখেন। প্রতি বছর তিনি প্রায় সাত হাজারের বেশি ইঁদুরের লেজে সংগ্রহ করেন। সেই ইঁদুরের লেজ কৃষি অফিসে জমা দিলে পাওয়া যায় পুরস্কার। আনোয়ারের এখন বয়স হয়েছে, তবে ইঁদুর ধরার বিশেষ টেকনিক তিনি শিখিয়েছেন তার ৫৭ জন শিষ্যকে। ইঁদুর ধরতে তৈরি করেছেন বিশেষ দল। আনোয়ারের কাছে রয়েছে ইঁদুর ধরার বিশেষ এক ফাঁদ। এছাড়াও তিনি মাটির গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারেন কোথায় ইঁদুর রয়েছে। এমনকি ইঁদুর গর্ত ছেড়ে চলে গিয়েছে অথচ সেখানে সাপ রয়েছে, তাও তিনি বাইরে থেকে বলে দিতে পারেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম