।। প্রথম কলকাতা ।।
Adenovirus: করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রভাব থেকে মানসিকভাবে এখনও পর্যন্ত মানুষ পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। আবার কোন রোগ, আবার কোন ভাইরাস থাবা বসায় শরীরে এই আতঙ্ক এখনও পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে। তারই মাঝে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করেছে অ্যাডিনোভাইরাস (Adenovirus)। এই ভাইরাসে ইতিমধ্যে শহর কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জন শিশুর। বিগত দুই মাস ধরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বহু শিশু। কাজেই অ্যাডিনোভাইরাস প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যতটা না ক্ষতিকারক তার থেকে অনেক গুণ বেশি ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশুদের (Children) জন্য।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এক্সট্রিম এজ অর্থাৎ এক মাস থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের শরীরে খুব সহজে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারছে অ্যাডিনোভাইরাস। এর প্রকোপ থেকে বাদ যাচ্ছে না বয়স্করাও। শিশু এবং বয়স্ক উভয়েরই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট কম। এই কারণে বর্তমানে অ্যাডিনোভাইরাস থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সতর্ক হতে হবে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে। হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই সংক্রমণটি ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কাজেই বাচ্চাদের খেলার মাঠে, স্কুলে কিংবা অন্য কোন জায়গায় পাঠানোর আগে সচেতন হন। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র অ্যাডিনো ভাইরাসের উপরেই কাজ করে এমন কোন ওষুধ বা টিকার খোঁজ পাওয়া যায়নি। কাজেই সাপোর্টিভ চিকিৎসা (Supportive Treatment) দেওয়া হচ্ছে।
অ্যাডিনোভাইরাসের সনাক্তকরণ:
কোন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্য যেমন নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয় তেমনি অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্যও ভাইরাল প্যানেল বা পিসিআর (PCR) পরীক্ষা করা হয়। বেসরকারি কোন জায়গা থেকে এই পরীক্ষা করাতে গেলে খরচ হতে পারে দশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাজেই সকলের পক্ষে বর্তমানে এই টেস্ট করানো সম্ভব হচ্ছে না। শহর কলকাতার সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতে ক্রমশ জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার।
মূলত যে সকল বাচ্চাদের বয়স দু বছরের কম তাঁরাই তাড়াতাড়ি সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাস দ্বারা। পূর্বেও অ্যাডিনো ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে সেই সময় অ্যাডিনো ভাইরাসের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। কিন্তু এবারে অ্যাডিনো ভাইরাসের মিউটেশন ঘটেছে। ফলস্বরূপ এটা আরও বেশি সংক্রামক এবং ভয়ানক হয়ে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের ফুসফুস। যেহেতু এই ঋতু বদলের সময়ে জ্বর সর্দি কাশির মতো অসুখ-বিসুখ ঘরে ঘরে দেখা দেয়, তাই অনেকেই প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। পরবর্তীতে হাঁচি কাশি সর্দির বাড়বাড়ন্তে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছে। শিশুদের শরীরে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট । আর চরম পরিণতি হিসেবে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে শিশুরা।
ইতিমধ্যেই কলকাতার ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতলে অ্যাডিনোভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জন শিশুর। কলকাতা মেডিকেল কলেজে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন জন শিশুর। পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ অ্যাডিনো ভাইরাসের কারণে মৃত্যু হয়েছে তিন শিশুর। আর তাদের অধিকাংশই শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিল হাসপাতালে। এই মতো পরিস্থিতিতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলাই হল সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে গেলে শিশু এবং বয়স্কদের রোজকার খাদ্যাভ্যাসে নজর দিতে হবে। তাদের পাতে নিয়মিত রাখতে হবে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। এছাড়াও পুনরায় মাস্কের ব্যবহার শুরু করলে অন্যের হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে আসা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে শিশুরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম