।। প্রথম কলকাতা।।
Kolkata’s China: বিবিধের মাঝে মিলন মহান। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হল কলকাতার চিনা পাড়া। শহর কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। এখনও পর্যন্ত ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু স্থাপত্য, স্মৃতিসৌধ। সেই রকম ভাবেই বাংলার মিশ্র সংস্কৃতি হিসেবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে কলকাতার চিনা পাড়া। এই শহরের মাঝেই রয়েছে ছোট্ট একটা চিন। শুনতে অবাক লাগলেও তা একেবারেই সত্যি। চিনাপাড়া হিসেবে পরিচিত কলকাতার ওই এলাকাটির দেওয়াল লিখন পর্যন্ত হয় চিনা ভাষাতে
সালটা তখন ১৯৬২। সেই সময়ে ইন্দো-চিন যুদ্ধ হয়েছে। যার কারণে ভারত-চিন সীমান্তে থাকা বহু চিনা পরিবার নিজেদের লোটা-কম্বল নিয়ে এসে উপস্থিত হন ভারতে। শোনা যায়, ১৭৭৮ সালে প্রথম কলকাতায় আসেন চিনের ওয়াং চাউ। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী প্রথম চাইনিজ। কলকাতায় চিনারা এসে তাদের বসবাস শুরু করেন ট্যাংরা এলাকায়। ধীরে ধীরে বেশ বড় বসতি গড়ে উঠতে থাকে তাদের। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশে ফের কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় চিনাপাড়া। কারণ সেখান থেকে নিজেদের দেশে চলে যেতে হয় বহু মানুষকে।
এখনও পর্যন্ত ট্যাংরার ওই এলাকায় বসবাস রয়েছে প্রায় ২০০০ চিনা পরিবারের। তাঁরা বংশানুক্রমে চাইনিজ হলেও একেবারে আপনার মত বাংলা কথা বলে অবাক করে দিতে পটু। এখন কলকাতার ওই চিনা মহল্লায় টেরিটি বাজারে গেলে সকালের দিকে পেট পুরে চিনা ব্রেকফাস্ট হয়ে যাবে। কারণ সেখানে রাস্তার পাশেই ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় বিভিন্ন লোভনীয় খাবার। সেই তালিকায় রয়েছে বাও, মোমো, ওয়ান্টন, খোয়াই চই প্যান, নুডলস্যুপ, চিকেন ও পর্ক সসেজ।
কলকাতাবাসী থেকে শুরু করে যে সকল বিদেশি পর্যটকরা কলকাতায় ঘুরতে আসেন তাদের কাছে চিনা পাড়ার এই ব্রেকফাস্ট কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। কলকাতাবাসী চিনারা তাদের নববর্ষের উৎসব মহাসমারোহে পালন করে থাকেন। নতুন পোশাক থেকে শুরু করে ড্রাগন ডান্স, লায়ন ডান্স ,মার্শাল আর্টের নানা প্রদর্শন হয় সেখানে। নববর্ষের আগের দিন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কলকাতার এই চিনা পাড়ায় আছে বেশ কিছু মন্দির। সেখানে রয়েছে চিনাদের আরাধ্য দেবতা সি ইপ, টুং নাম, চং হে ডং।
এক সময় চিনারা এখানে নিজেদের চামড়ার ব্যবসার ঘাঁটি তৈরি করে বসে ছিলেন। খুলেছিলেন বহু রেস্তোরাঁও। তবে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অনেকেই নিজের দেশে ফিরে যান। যারা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন সেগুলি বাঁচিয়ে রাখার। কিন্তু সময়ের স্রোতে ম্লান হয়ে গিয়েছে কলকাতার এই চিনা পাড়ার ঐতিহ্য । এখনও পর্যন্ত সেখানে চিনা সংস্কৃতির বহু ছাপ দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই চিনারাই এখন ভারতীয় ভোটার। তাই তাদের চিনা সংস্কৃতিতে কোথাও না কোথাও ভীষণ গাঢ় ভাবে মিশে গিয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম