।। প্রথম কলকাতা ।।
Andaman and Nicobar Islands: রহস্য রোমাঞ্চে মোড়া আন্দামান নিকোবর (Andaman and Nicobar)। যেখানে রয়েছে বাঙালির নাড়ির টান। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দ্বীপের সংখ্যা প্রায় ৫৭২টি, এখানে এমন কিছু দ্বীপ আছে যেখানে গেলে আপনার দিকে ছুটে আসবে শত শত বিষাক্ত তীর। যেখানে কারোর নাক গলানো সহ্য করে না দ্বীপ বাসী। আন্দামান নিকোবরের কিছু মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখেন বরিশাল, যশোর, খুলনা আর সাতক্ষীরার। মাঝে মাঝে তাদের মন চায় বাংলাদেশের (Bangladesh) এই জায়গাগুলো থেকে ঘুরে আসতে। আসলে এখানেই রয়েছে তাদের নাড়ির টান। আন্দামান নিকোবরের সঙ্গে বাঙালির গভীর সম্পর্কের অন্যতম আরেকটি কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose)।
প্রকৃতির আদিম রূপ দেখতে চাইলে যেতে পারেন আন্দামান নিকোবরে, মনে হবে নগর জীবনের কোলাহল থেকে একদম দূরে শান্ত এক অন্য পৃথিবী। রূপকথার গল্পে পড়া নীল জলরাশি আর তার কোলে শ্যামল ছোট্ট দ্বীপ। কখনো অশান্ত সমুদ্রের গর্জন, কখনো ঝড়ো হাওয়ায় মুহূর্তে হারিয়ে যাবেন। এখানে রয়েছে এমন এক অনন্ত রহস্য যা জানলে গায়ে কাঁটা দেয়। ৫৭২ টি দ্বীপের মধ্যে বড়জোর ৩৭ থেকে ৪০টি দ্বীপে মানুষের বসবাস রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি দ্বীপের দরজা পর্যটকদের জন্য খোলা। এই দ্বীপগুলোতে বাঙালি পর্যটকরা গেলে কোন অসুবিধাই হয় না। এখানে বাংলা ভাষাভাষীর প্রচুর মানুষ পাবেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বহু পর্যটক আন্দামানের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন। ভাবলে অবাক হবেন, আন্দামানের বহু মানুষের নাড়ির সংযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। বিশেষ করে হ্যাভলকে গেলে বুঝতে পারবেন বাঙালিরা বাংলাদেশকে কতটা মিস করেন। বহু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্ম আন্দামানে। বড় হওয়া এবং কাজকর্ম সবই এখানে। কিন্তু তাদের আদি বাড়ি খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল কিংবা যশোরে। যেখানকার সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে তারা বহুদিন এখানে চলে এসেছেন। তবুও এক অদৃশ্য বন্ধনের টান রয়ে গিয়েছে আদি নিবাসের সঙ্গে। আসলে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, দাঙ্গা প্রভৃতির কারণে একটা সময় ওপার বাংলা থেকে বহু মানুষ আন্দামানের ঠাঁই নিয়েছিলেন। সেখানেই তারা বসতি গড়ে তোলেন। আন্দামানের হ্যাভলকে মানুষ শান্তিতে বসবাস করেন, এ যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে চাঁদা, ধান্দাবাজি, চুরি, গুন্ডামি কিছু নেই। মানুষ এখানে দরজা খুলে নিশ্চিন্তে বাইরে ঘোরাফেরা করেন। এখানে বাঙালিরা মূলত বিভিন্ন ছোটখাট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। যেহেতু প্রতি বছর প্রায় লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন, এর কারণ সমুদ্রের নীল জলরাশির পাশে বাঙালিরা ছোট ছোট বিভিন্ন দোকান খুলেছেন। এই বাঙালিদের অধিকাংশ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এর সময়ের মধ্যে এখানে বসতি গড়েছেন।
আন্দামান হল ব্রিটিশদের তৈরি কালাপানি। একটা সময় ছিল যখন মৃত বন্দীদের দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হতো সমুদ্রে। সাগরের জল তকমা পেয়েছে কালোর, আসলে নৃশংস অত্যাচারের ক্ষত যেন এই কালাপানির থেকেও অনেক গভীর। সিপাহী বিদ্রোহের সময় বন্দী বিপ্লবীদের এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হত। আন্দামানকে ব্যবহার করা হতো শাস্তির এক ভয়ঙ্কর দ্বীপ হিসেবে। তৈরি করা হয়েছিল সেলুলার জেল। যা বর্তমানে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। জেলের মধ্যে রয়েছে এক বিশাল টাওয়ার, যেখান থেকে রক্ষীরা বিশেষভাবে নজরদারি চালাত। বন্দীরা একে অপরের মুখ পর্যন্ত দেখতে পারতেন না। অন্ধকার কুঠুরিতে চলতো অকথ্য অত্যাচার। বহু বন্দী সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছেন, আবার কেউ বা আত্মঘাতী হয়েছেন। বন্দীরা মারা গেলে তাদের দেহ জলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত। আন্দামানের সঙ্গে বাঙালির এক আলাদাই সম্পর্ক। এই দ্বীপে পা রেখেছিলেন নেতাজি, তৈরি করেছিলেন নয়া ইতিহাস। সর্বপ্রথম নেতাজি আন্দামানকে স্বাধীন করেন। ১৯৪৩ সালে ৩০শে ডিসেম্বর জিমখানা গ্রাউন্ডে তিনি ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। বর্তমানে রস দ্বীপটির নাম রাখা হয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র দ্বীপ। ১৯৪৭ এ ভারতের স্বাধীনতা লাভের অনেক আগেই নেতাজি এই রস দ্বীপে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
আন্দামান সম্পর্কে এমন কয়েকটি তথ্য আছে যা জানলে চমকে যাবেন। আন্দামানে কিন্তু মূল ভাষা আন্দামানিজ বা নিকোবরিজ নয়। এখানকার বহুল প্রচলিত ভাষা বাংলা, যেখানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হিন্দি। এখানে দেখা মিলবে পৃথিবীর বৃহত্তম সামুদ্রিক কচ্ছপের। আশ্চর্যের বিষয় হল, আন্দামানে রয়েছে সামুদ্রিক গরু যাকে বলা হয় সমুদ্রের পরি। আসলে এই প্রাণীটির নাম ডুগঙ্গ। এরা অত্যন্ত শান্ত এবং নিরামিষাসী। ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক জলবিমান ‘জল হংস’, সর্বপ্রথম আন্দামানের চালানো হয়েছিল। আগুনের আগ্নেয়গিরি তো অনেক দেখেছেন, আন্দামানে দেখতে পাবেন কাদার আগ্নেয়গিরি। সুইফ্টলেট হল এক ধরনের পাখি, যাদের বাসা খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে আন্দামানে এই পাখির দেখা মিলতে পারে। এখানেই রয়েছে উত্তর সেন্টিন্যাল দ্বীপ যেখানে কেউ গেলে প্রাণহাতে করে ফিরতে পারবেন না। ভারত সরকার থেকে বহুবার চেষ্টা করা হয়েছিল এই দ্বীপের মানুষের আধুনিক জগতে আনার জন্য। কিন্তু অবশেষে সরকার নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। একবার এই দ্বীপের মানুষদের চুরি করে তুলে নিয়ে আসা হয়েছিল আধুনিক সমাজে। সময়টা তখন ১৯৮০। এই দ্বীপের উপজাতিদের মধ্যে বয়স্ক দম্পতি এবং চার শিশুকে তুলে নিয়ে আসা হয়। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাদের মেলবন্ধন করা কিন্তু ফল হয় উল্টো। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ছয় জনের মধ্যে দুজন মারা যায়। বাকি চারজনকে সরকার আবার দ্বীপে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছিল। এই দ্বীপের মানুষরা যে কিভাবে থাকে, কি খায়, কি ভাষায় কথা বলে এই সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজও পাওয়া যায়নি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম