।। প্রথম কলকাতা ।।
Sir Isaac Newton: স্যার আইজাক নিউটন ছিলেন বিজ্ঞানের প্রকৃত সিদ্ধ পুরুষ। যাঁরা বিজ্ঞানের অনুরাগী, যাঁরা বিজ্ঞানকে ভালোবাসেন, তাঁরা আইজাক নিউটন (Sir Isaac Newton) সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে তা টের পাবেন। বিজ্ঞান সাধনায় তিনি সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। একজন মহান বিজ্ঞানী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। গণিতশাস্ত্র, ভৌতিক শাস্ত্র, জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং দর্শন শাস্ত্রে সমান পারদর্শী ছিলেন নিউটন। ভরবেগের গতিসূত্র, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মত বিষয়গুলি আবিষ্কার করে অসামান্য কৃতি রেখে গিয়েছেন তিনি। ১৬৪৩ সালের ৩ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের লাঙ্কাশায়ার গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর।
ছেলেবেলায় খুব চঞ্চল ও রাগী ছিলেন নিউটন। ১৬৮৭ সনে তাঁর বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ‘ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’ (Philosophiae Naturalis Principia Mathematica) প্রকাশিত হয়। যাতে সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র রয়েছে। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলি বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এক কথায় বলতে গেলে, বল বিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন নিউটন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি ভিত্তি রচনা করেন। আলোকবিজ্ঞানের কথায় তাঁর হাতে তৈরি প্রতিফলন দুরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা এসে যায়। সেইসঙ্গে আলোর বর্ণের উপর একটি তথ্য দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। যা সমস্ত পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত করেছিলেন। গণিতের জগতেও তার জুড়ি মেলা ভার। নিউটন এবং লাইববনিজ যৌথভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। এই নতুন শাখাটিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতে বিপ্লব আনে।
নিউটনের যখন জন্ম হয় তখনও ইংল্যান্ডে (England) সমসাময়িককালের আধুনিকতম প্যাপাল বর্ষপঞ্জির ব্যবহার শুরু হয়নি। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ছোট স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাঁকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন তিনি। এই স্কুলে তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। স্কুল জীবনের প্রথম থেকেই যন্ত্রের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। উইন্ডমিল, জল-ঘড়ি, ঘুড়ি এবং সান-ডায়াল তৈরি করেছিলেন। এছাড়া একটি চার চাকার বাহন যা আরোহী নিজেই টেনে নিয়ে যেতে পারতেন, তা নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৬১-তে ট্রিনিটি কলেজ থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে নিউটন। কলেজে পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ভৃত্যের কাজ করতেন। তিনি মূলত গণিত ও বলবিজ্ঞান বিষয়ে অধিক পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি কলেজে প্রথমে কেপলারের আলোকবিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যয়ন করেন। এর পর ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি মননিবেশ করেছেন। ১৬৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভের প্রাক্কালে দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করে নিউটন। যে কলেজে তিনি পড়েছেন সেখানে তাঁকে ফেলো নির্বাচিত করা হয়। দু’বছর পর সেখানকার গণিত বিভাগের লুকাসিয়ান অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিউটন একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন। ১৬৭১-এর ডিসেম্বরে নিউটন দ্বিতীয় আরেকটি দূরবীন তৈরি করে রয়েল সোসাইটিকে উপহার দেন। এর দুই মাস পর রয়েল সোসাইটির একজন ফেলো হিসেবে তিনি আলো সম্বন্ধে তাঁর আবিষ্কার সমূহ প্রচার করেন। যার ফলে বিতর্ক তৈরি হয়। অনেক বছর যা অব্যাহত ছিল। এই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন রবার্ট হুক, লুকাস, লিনাস, পাউলিং ও আরও অনেকে।
তাঁর Mathematical Principles of Natural Philosophy গ্রন্থের তিনটি অংশ রয়েছে। ১৬৭৮-এ পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ছাপ ফেলেছে এই বই। এটি প্রকাশের পর সমগ্র ইউরোপ জুড়ে এটি বিপুল সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে প্রথম থেকেই ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশুনা করতে আগ্রহ পেতেন নিউটন। ১৬৯০-এর আগে থেকেই ধর্মীয় ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সে সময় লকের কাছে লেখা পত্রে এই সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বর্তমানকালের গণিতজ্ঞ ও ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি এবং লাইবনিজ গণিতের যে শাখার উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন তা গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম