।। প্রথম কলকাতা ।।
Sheikh Mujibur Rahman: ওপার বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস ঘাটতে গেলে যার নাম সর্বপ্রথম উঠে আসে তিনি হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman)। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু তার আগে দীর্ঘ কতগুলি দিন বাংলার মানুষকে ক্রমাগত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের (Pakistan) কারাগারে বন্দি দশায় থাকতে হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। তাকে দেখতে রীতিমত জনস্রোত উপচে পড়েছিল রাস্তায়। ১০ জানুয়ারি দিনটি তাই বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবেই খ্যাত।
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করাই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মূল লক্ষ্য। আর তার জন্য বাঙালি জাতির তরফ থেকে যেসব আন্দোলন গুলি গড়ে উঠেছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই কারণেই পরবর্তীতে তিনি বাঙালি জাতির কাছে এক অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী ফের একবার আক্রমণ চালায় বাংলাদেশে (Bangladesh)। রীতিমতো গণহত্যা শুরু করে তাঁরা। এই ঘটনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন। আর তারপরেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রোষের মুখে পড়তে হয় বঙ্গবন্ধুকে।
সেই রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। একদিকে বঙ্গবন্ধু বন্দী পাকিস্তানের কারাগারে। অন্যদিকে বাংলাদেশে চলছে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ (Freedom Fight)। পরবর্তীতে জানা যায়, সেই সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুকে বারবার নানা পরিকল্পনা তৈরি করে হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়। দীর্ঘ নয় মাস তাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করা হয়। এদিকে যতদিন এগোতে থাকে ততই বাংলাদেশের মাটিতে রক্তের বন্যা বয়ে চলে। কিন্তু বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিকে তাদের হেরে যাওয়ার কারণ হতে দেয়নি। বরং তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর নির্দেশিত পথে চালিত হয়ে যুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে যায়।
একসময় বাঙালি জাতিকে দমন করা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ প্রতিরোধের মুখে পরাজিত হতে হয় পাকিস্তানি বাহিনীকে। তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সেই সময় বাংলাদেশ স্বাধীন এই তকমা পেলেও বাঙালি জাতির মধ্যে বিজয়ের আনন্দ তেমনভাবে ছিল না। কারণ তখনও পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের আসল নায়ক মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তাই তখন নিজেদের নেতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য দাবি তোলা হয় বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন ও শান্তিকামী মানুষের তরফ থেকেও। অবশেষে তা আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করে। আর সেই আন্তর্জাতিক চাপের কাছে পাকিস্তানকে নতি স্বীকার করতে হয়। ১৯৭২ সালে ৮ জানুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। এরপর তিনি ১০ জানুয়ারি স্বদেশে এসে পৌঁছান। তাকে শুধুমাত্র চোখের দেখা দেখবার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন রেসকোর্স উদ্যানে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন । বর্তমানে যদিও সেটি এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত।
বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু সেদিন এসে পৌঁছেছিলেন ওই ময়দানে। আর তারপর বিকেল পাঁচটায় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সামনে বক্তৃতা রাখেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন তিনি বাঙালি জনজাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বাঙালি তাকে যে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে তার জন্য তিনি নিজের রক্ত দিতেও প্রস্তুত। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন থেকেই জাতির জনক হিসেবে শ্রদ্ধেয় বাঙালির কাছে। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাঙালি জাতির কাছে অত্যন্ত বিষাদময় একটি দিন। কারণ সেই দিনই দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শত্রুর হাতেই জীবন দিতে হয় বঙ্গবন্ধুকে।
এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশবাসীর জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস দারুন গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর ১০ জানুয়ারি অর্থাৎ ওই দিনে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগ একাধিক কর্মসূচি পালন করে। বঙ্গবন্ধু ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন থেকে শুরু করে নানান ধরনের আলোচনা সভাও করা হয় সেই দিন। আর এর সভাপতিত্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম