।। প্রথম কলকাতা ।।
আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের কারিগর শুধু লিওনেল মেসি নন, রয়েছেন আর এক লিওনেল। লিওনেল সেবাস্তিয়ান স্কালোনি, যিনি আর্জেন্টিনার সাফল্যের নেপথ্য নায়ক। মাঠের মধ্যে আলো ছড়িয়ে মঞ্চ রাঙিয়েছেন মেসি। অন্যদিকে ডাগআউটে ক্ষুরধার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে দলকে নিয়ে গেছেন এক অন্য মাত্রায়। লিওনেল মেসির পারফরম্যান্স আর লিওনেল স্কালোনির স্ট্র্যাটেজিতে ধরা দিয়েছে সোনালী পরি। আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার নাম। আর্জেন্টিনার সাফল্যে এখন স্বপ্নের ভেলায় ভাসছেন আর্জেন্টাইন কোচ।
সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের চোখের জল যেন ধরে রাখতে পারেননি লিওনেল স্কালোনি। ইতিহাস ছোঁয়ার আবেগ যে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। কোপা আমেরিকার পর বিশ্বজয়। তার হাত ধরেই আর্জেন্টিনার ঘরে এসেছে একের পর এক সাফল্য। আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসে তিনি এখন আরেক বিশ্বকাপজয়ী কোচ। ১৯৭৮ সালে সিজার লুইস মোনোত্তি আর ১৯৮৬–তে কার্লোস বিলার্দোর সঙ্গে একই আসনে জায়গা করে নিলেন তিনি। বিশ্বকাপজয়ী কোচ হিসেবে নিজের কীর্তিটা গড়লেন ফ্রান্সের মহানাটকীয় ম্যাচের মধ্যে দিয়ে।
প্রথম ম্যাচে হারের সৌদি আরবের কাছে হারের পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছে তাতে লিওনেল মেসি-ডি মারিয়াদের নিয়ে গর্বের অন্ত নেই লিওনেল স্কালোনির। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন এই আর্জেন্টাইন কোচ। দায়িত্ব নেওয়ার পরই খোলনলচে বদলে দেন আর্জেন্টিনা দলটিকে। স্কালোনির কোচিংয়ে প্রথম সাফল্য আসে গতবছর কোপা আমেরিকায়। ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে ২৬ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে কোপা আমেরিকা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। এই স্কালোনির কোচিংয়ে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতারে পা রাখে আর্জেন্টিনা।
আর এবার ৩৬ বছর পর বিশ্বজয়ের স্বাদ দিলেন দেশকে। সত্যিই তিনি অনন্য, অনন্য তাঁর স্ট্র্যাটেজি। ১৯৭৮ সালের ১৬ মে সান্তা ফে প্রদেশের ছোট্ট শহর পূজাতোতে জন্মগ্রহণ করেন লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনার প্রাইমারি ডিভিশন ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি রাইট ব্যাক বা রাইট মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে ভালোবাসতেন। ১৯৯৭ সালে যোগদান করেন স্পেনের ক্লাব দেপোর্তিভো লা কোরুনিয়ায়। সাড়ে আট বছর কাটান স্প্যানিশ ক্লাবে। তবে দেপোর্তিভোর লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মরসুমে চোটের কারণে মাত্র ১৪ টি লা লিগার ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে যোগ দেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে। সেইবার ওয়েস্ট হ্যামকে এফএ কাপের ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
২০০৩ সালের ৩০ এপ্রিল লিবিয়ার সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে অভিষেক হয় স্কালোনির। এরপর বিস্ময়করভাবে জাভিয়ার জানেত্তির বদলে আর্জেন্টিনার ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়ে যান। যদিও পুরো বিশ্বকাপে তিনি মাত্র একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেন।
কোচ হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে লা লিগার ক্লাব সেভিয়াতে স্বদেশী সাম্পাওলির কোচিং স্টাফে যোগ দেন। ২০১৭ সালে সাম্পাওলিকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হলে স্কালোনি তার সহকারী হিসাবে মনোনীত হন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ফল খারাপ হওয়ায় স্কালোনিকে সম্পূর্ণরুপে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর কোচিংয়ে ২০১৯ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এরপর ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়। ২০২২ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে ফিনালিসিমা জয়। আর এবার বিশ্বজয়। একের পর এক সাফল্যে স্বপ্নের ভেলায় ভাসছেন আর্জেন্টিনার এই কোচ।