।। প্রথম কলকাতা ।।
অধরা স্বপ্নপূরণ! অবশেষে ‘সোনালী পরি’ ধরা দিল ফুটবল জাদুকরের হাতে। টানটান উত্তেজনা, প্রতি সেকেন্ডে উৎকণ্ঠা, রোমাঞ্চ সব মিলিয়ে অতি রঞ্জিত ফাইনাল। এমন হাইভোল্টেজ ফাইনাল শেষ কবে দেখেছে বিশ্ব ফুটবল তা মনে করা কঠিন। তবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তিটা হয়ে গেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি ওঠার মধ্যে দিয়ে। পারলেন মেসি, করে দেখালেন। বুঝিয়ে দিলেন শুধু ক্লাব নয় দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ তিনি। আর হ্যাটট্রিক করে ট্র্যাজিক নায়ক রয়েই গেলেন কিলিয়ান এমবাপে।
এদিনের ফাইনাল যেন মনে করিয়ে দিয়ে গেল ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার আর্জেন্টিনার স্মৃতি। প্রথমে দুই গোল করেও সমতায় ফিরেছিল প্রতিপক্ষ। সেই একই স্মৃতি ফিরে এল মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। তবে সেইবার অতিরিক্ত সময়ে বুরুচাগার গোলে বাজিমাত করেছিল আর্জেন্টিনা। আর এবার টাইব্রেকারে মার্টিনেজের অনবদ্য সেভে বাজিমাত করল আলবিসেলেস্তেরা। ফুরাল আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বজয়ের অপেক্ষা। হয়তো এর মধ্য দিয়ে সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে। বিশ্বকাপ ট্রফি না পাওয়ায় অনেকে মেসিকে মানতে রাজি ছিলেন না। এবার আর না মানার কোন প্রশ্নই থাকলো। অধরা বিশ্বকাপ ট্রফিও যে নিজের সাফল্যের ঝুলিতে ভরে নিলেন লিওনেল মেসি। স্পর্শ করলেন মারাদোনাকে।
আজকে আর্জেন্টিনার জয়ে সবথেকে বেশি খুশি যদি কেউ হতেন তিনি দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। আর্জেন্টিনার ম্যাচ হলেই মেসিদের উৎসাহ দিতে তিনি ছুটে যেতেন মাঠে। দুই হাত উঁচিয়ে, বুকটা চিতিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়তেন। শেষ পর্যন্ত একরাশ হতাশা নিয়ে মুখ ঢেকে মাঠ ছাড়তে হতো কিংবদন্তিকে। দিনের পর দিন। টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট। বেঁচে থাকলে হয়তো কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে আজ থাকতেন তিনি। উচ্ছ্বাস, উল্লাসে ফেটে পড়তেন উত্তরসূরিদের শিরোপা অর্জনে। গভীর আলিঙ্গনে বাঁধতেন মেসি-ডি মারিয়াদের। কে জানে, হয়ত না ফেরার দেশে বসেই তিনি উপভোগ করছেন উত্তরসূরিদের সাফল্য! আবেগের বাঁধনহারা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। যেমনটা করতেন মাঠের গ্যালারিতে।
দূর থেকে যে তিনি আশীর্বাদ করেছিলেন প্রিয় ছাত্র মেসিকে। সেকথা জানিয়েওছিলেন স্বয়ং মেসি। তাঁর আশীর্বাদেই হয়তো আজ কাতার হয়ে উঠল শুধুই নীল-সাদা। প্রিয় ছাত্রও যে জবাব দিলেন একাধিক সমালোচনার। ঘটালেন একাধিক বিতর্কের অবসান। নতুন এক যুগের সাক্ষী থাকলাম আমরা। যে যুগে থাকবে শুধু জাদুকর মেসির নাম। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন। একার কাঁধে দেশকে তুলে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। স্বপ্ন দেখালেন, জয় করলেন। এটাই তো চেয়েছিল বিশ্বফুটবল। স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা তো এমনি হন।