।। প্রথম কলকাতা ।।
Sardar Vallabhbhai Patel: ভারতের ‘লৌহমানব’ বলা হয় তাঁকে। স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। একজন ভারতীয় পণ্ডিত এবং জাতীয়তাবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেল। জন্মগ্রহণ করেছিলেন গুজরাটের কুর্মী পরিবারে।
বাবা ঝাঁসির রানির সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। মা ছিলেন আধ্যাত্মিক মহিলা। গুজরাটের মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন সর্দার প্যাটেল। পরবর্তীতে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে স্থানান্তরিত হন। ১৮৯৭-এ উচ্চ বিদ্যালয় পাশ করেন এবং আইনি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। বেশি বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। আইনি বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে ১৯১০-এ ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ভারতে ফিরে গুজরাটের গোধরায় তাঁর আইনি অনুশীলন শুরু করেন। আইনি দক্ষতার জন্য তাঁকে ব্রিটিশ সরকার অনেক লাভজনক পদে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই সমস্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ১৯১৭-এ সর্দার বল্লভভাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুজরাট শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কায়রায় বন্যার পরে ব্রিটিশরা জোর করে কর চাপিয়ে দিলে, তিনি কৃষকদের কর প্রদান না করার জন্য ‘কর শুল্ক অভিযান’ পরিচালনা করেছিলেন। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন এই ব্যক্তি। ‘সর্দার’ তিনি উপাধি হিসেবে পেয়েছিলেন।
সাল ১৯৩০-এ মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগে বিখ্যাত ‘লবণ সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য কারাবন্দী নেতাদের মধ্যে নাম ছিল সর্দার প্যাটেলের। লবণ আন্দোলন চলাকালীন তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য অসংখ্য লোকের দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কংগ্রেস সদস্যদের অনুরোধে গান্ধী কারাগারে বন্দি থাকাকালীন, তিনি গুজরাট জুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৩১-এ তাঁকে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড আরউইন এবং মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই চুক্তি ‘গান্ধী-আরউইন চুক্তি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। একই বছর তিনি করাচি অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে প্রায়শই কংগ্রেসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দ্বন্দ্ব হয়েছে।
১৯৩৬-এ পরবর্তীকালে কংগ্রেসে সমাজতন্ত্র গ্রহণ করা হলে, তিনি প্রকাশ্যে নেহরুর উপর তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। এক কথায় নিজের বক্তব্য অতি সহজেই সকলের সামনে রাখতেন তিনি। ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পর প্যাটেল প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষে প্রায় ৫২২টি রাজ্যকে ভারতের অধীনে এনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এই শাসকদের দুটি বিকল্প দিয়েছিল- তাঁরা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে বা তাঁরা স্বাধীন থাকতে পারে। কংগ্রেস এই ভয়ঙ্কর কাজটি সর্দার প্যাটেলকে দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে রাজ্যগুলোর সংহতকরণের জন্য তদারকি শুরু করেছিলেন প্যাটেল। জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় এবং হায়দরাবাদ বাদে সকল রাজ্যকে সংহত করতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তিনি অসাধারণ রাজনৈতিক বুদ্ধির সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন। আজ আমরা যে ভারতকে দেখছি তা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রচেষ্টার ফল।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হয়েছিলেন গান্ধী। এই হত্যাকাণ্ডের পর আরএসএস-এর অনেক বিশিষ্ট নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং সেই বছরেরই ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী সংগঠন হিসেবে আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সর্দার প্যাটেল যা করেছেন তা সমস্তটাই দেশের জন্য। তাঁর রাজনীতি এবং চিন্তাভাবনার উপর গান্ধীর গভীর প্রভাব ছিল। তিনি গান্ধীজির প্রতি অটল সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সারা জীবন তাঁর নীতির পাশে ছিলেন। আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু তাঁরই। তাঁর সম্মাননায় ভারতের গুজরাটে তাঁর জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়, ‘ঐক্যের মূর্তি’। ২০১৪ সালে তাঁর জন্মদিবস ৩১ অক্টোবরকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৫০-এর আজকের দিনে মুম্বইতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম