।। প্রথম কলকাতা ।।
Unsolved Mysteries of India: ভারতের কোনায় কোনায় রয়েছে হাজারো রহস্য ঘেরা নানান মন্দির। তার মধ্যে এমন কিছু খাস মন্দির রয়েছে যার রহস্য উদঘাটনে হয়রান হতে হয়েছে মানুষকে। প্রাচীনকালে মন্দিরগুলো বানানোর ক্ষেত্রে বাস্তু নিয়ম মানা হত। প্রাচীন কালে রাজারা নিজেদের ধন-সম্পত্তি লুকিয়ে রেখে তার উপর মন্দির বানাতেন, সেই খাজানায় পৌঁছানোর জন্য তৈরি করতেন গুপ্ত রাস্তা। ভারতে এমন মন্দির রয়েছে যার গর্ভে রয়েছে বিপুল সম্পত্তি, অথচ তা পাহারা দেয় বিষধর সাপ। সেই সম্পত্তি নিতে গেলেই মৃত্যু অবধারিত। ভারতের কিছু কিছু মন্দির এমন রহস্য ঘেরা, যা উদঘাটনে অনেকেই প্রাণ খুইয়েছেন।
পদ্মনাভ স্বামী মন্দির
কেরালার পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের প্রত্যেকটি গাঁথুনিতেই যেন রয়েছে গোপন রহস্য। যার কিনারা করতে গিয়ে মানুষ বারংবার হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। এই মন্দরেই লুকিয়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার খাজানা। এখানে এমন একটি দরজা আছে যে দরজার তালা চাবি তো দূর কোন ছিটকিনি পর্যন্ত নেই। এমনকি দরজায় নেই কোনো নাটবল্টু। এই রহস্যময় দরজায় শুধুমাত্র খোদাই করা রয়েছে দুটি বিষাক্ত গোখরো সাপ। তারা বিশাল বড় হাঁ করে রয়েছে। সবাই মনে করে এই দরজার পিছনেই রয়েছে কুবেরের ধন, আর সেই ধন পেতে যারা চেষ্টা করেছে তারা নিজেদের প্রাণটা খুইয়েছেন। এই দরজার চর্চা দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশের মাটিতে। সাত রাজার ধন নাকি ভয়ঙ্কর মৃত্যু, দরজার পিছনে কি অপেক্ষা করছে কেউ জানে না। এই রহস্যকে আঁকড়ে বসে রেখেছে দুই সাপ। পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলি হিন্দু মন্দির রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে ধনী মন্দির মনে করা হয় পদ্মনাভস্বামী মন্দিরকে।
এই মন্দিরের নিচে রয়েছে একটা বড় পাতালঘর সেখানে ছয়টি ঘর রয়েছে। যাদের পরপর ছয়টি দরজাই বন্ধ। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাঁচটি ঘরের দরজা খোলা গেলেও ৬ নম্বর দরজাটি খোলা যায়নি। আর বাকি পাঁচটি ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল দামি পাথর বসানো সোনার গয়না, সোনার বাসনপত্র, সোনার মুদ্রা, মূর্তি আরো কত কি। কে বা কারা এভাবে রাশি রাশি কুবেরের ধন জমিয়েছে তার হদিস পাওয়া যায়নি। তবে ওই সাপের ভয়ঙ্কর হাঁ মুখের ছবি খোদাই করার দরজা খুলতে পারেনি কেউই। মন্দিরের পূজারী এবং শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করে যে দরজা খুলবে তার মৃত্যু হতে পারে। জোর করে দরজা খুললে তার কালো প্রভাব ছেয়ে যাবে রাজ্যে। মন্দিরের এই গোপন কুঠুরি গুলো খোলার জন্য আদালতে পিটিশন করেছিলেন টি পি সুন্দরাজন। আকস্মিকভাবে তার মৃত্যু এই রহস্যের জল্পনাকে আরও উসকে দেয়।
শনিদেবের ভরসায় দরজাহীন গ্রাম
ভারতে এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে কোন ঘরের দরজায় তালা চাবি তো দূর দরজা পর্যন্ত নেই। মূল্যবান সম্পত্তি রাখতে কেউ আলমারি ব্যবহার করেন না। গ্রামের মানুষ ভক্তি সহকারে শনিদেবের পুজো করেন। এমনকি শনিদেবের জন্যেও কোন মন্দির নেই। একে বলা হয় ভারতের অপরাধমুক্ত গ্রাম। মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গাপুর গ্রামে কোন বাড়িতেই দরজা নেই। পাকা বাড়ি অথচ স্কুল কলেজ সরকারি বিল্ডিং দোকানপাট কোথাও কোন দরজা নেই। এমন কি ব্যাংকের দরজাতেও কোন তালা দেখতে পাবেন না। মানুষ এখানে শনিদেবকে প্রচন্ড বিশ্বাস করেন। তারা মনে করেন শনিদেব তাদের সম্পত্তি রক্ষা করবেন। যদি তাদের সম্পত্তি চুরি করে তাহলে শনিদেবের অভিশাপে সেই ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। গ্রামবাসীরা শনিদেবকে এতটাই মানেন যে পাবলিক টয়লেটে পর্যন্ত কোন গোপনতা নেই অর্থাৎ কোন দরজা নেই। শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রে কাপড়ের পর্দা লাগানো রয়েছে।
কথিত আছে প্রায় ৩০০ বছর আগে গ্রামের প্রান্তে নদীতে একটি কালো পাথর ভেসে আসে। গ্রামবাসীরা সেই পাথরে লাঠির আঘাত করতে গলগল করে বের হতে থাকে রক্ত। সেই রাতেই গ্রামের প্রধান শনিদেবের স্বপ্নাদেশ পান। তিনি পাথর টাকে এনে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন তবে স্বপ্নাদেশের শর্ত ছিল যে তাকে ওই পাথরের মূর্তি কোন ছাদের তলায় রাখা যাবে না। শনিদেব গ্রামের সমস্ত রকমের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। তারপর থেকে গ্রামবাসীরা নিজেদের রক্ষার ভার সম্পূর্ণ তুলে দেন শনিদেবের হাতে। এখানেই রয়েছে ভারতের একমাত্র ব্যাংক, যে ব্যাংকে তালা লাগানো হয় না।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেরল আজও এমন কিছু রহস্য রয়েছে যার ব্যাখ্যা সবার কাছে নেই। জগন্নাথ মন্দিরের গম্বুজের উপর লাগানো পতাকা বায়ু প্রবাহের বিপরীত দিকে কীভাবে ওড়ে তার উত্তর এখনো মেলেনি। মন্দিরে সর্বোচ্চ অংশে রয়েছে সুবিশাল সুদর্শন চক্র, যার ওজন প্রায় এক টন। শোনা যায় শহরের যেদিক থেকেই এই চক্রটা দেখুন না কেন সবদিক থেকেই মনে হবে চক্রটি তার দিকেই ফেরানো । পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের উপর দিয়ে কোন হেলিকপ্টার, বিমানকে উড়তে দেখা যায় না। এমনকি কোন পাখি পর্যন্ত করে ওড়ে না। আশ্চর্যজনক ঘটনার যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে মানুষ বারবার হয়রান হয়েছে। দুপুর, গোধূলি কিংবা বিকেল কোনো সময় আপনি এই মন্দিরের মূল খিলানের ছায়া দেখতে পাবেন না। পুরীর মন্দিরের রান্নাঘর নিয়ে অদ্ভুত কথা শোনা যায়। সাতটি মাটির হাঁড়ি একটার উপর আর একটা বসিয়ে কাঠের জ্বালানিতে প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, সব থেকে উপরে থাকা পাত্রটির রান্না আগে হয় তারপর দ্বিতীয় তারপর তৃতীয়। এইভাবে ধাপে ধাপে একদম শেষের পাত্রের রান্না সমাপ্ত হয়। জগন্নাথ মন্দির থেকে সমুদ্র একদম কাছে অথচ মন্দিরের সিংহদ্বার একবার পেরোলে আর সমুদ্রে শব্দ শুনতে পাবেন না। মন্দির থেকে বেরোলেই কানে আসবে সমুদ্রের গর্জন।
জ্বালামুখী মন্দির
সতীর জিহ্বা পতিত হয়েছিল এই স্থানে। এখানে জ্বলছে সাতটি অগ্নিশিখা যা কোনদিনও নেভে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই অগ্নিশিখা জ্বলছে। অনেকে মনে করেন, পর্বতের তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে এই অগ্নি শিখার সৃষ্টি। কিন্তু ভারত সরকারের তরফ থেকে রহস্য উদ্ধারে গবেষণা চালালেও কোন প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভারতের হিমাচল প্রদেশের সতীপীঠ জ্বালামুখী মন্দিরে এটি ৫১ সতী পীঠের একটি। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী এখানেই পড়েছিল সতীর জীভ। জ্বালামুখী মন্দিরের সর্বদা জ্বলন্ত সাতটি অগ্নিশিখাকে দেবীর অম্বিকা রূপে আরাধনা করা হয়। এই মন্দির ঘিরে ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন নানান কাহিনী। শোনা যায়, এক কুচক্রীর বুদ্ধিতে আকবর দেবীর মাহাত্ম্য প্রমাণ করতে মন্দিরের কাছে থাকা ঝর্ণার বাঁক মন্দিরের দিকে ঘুরিয়ে দেন। সেদিন জলস্পর্শে অগ্নিশিখা নিভে যায়নি। পরে তিনি দেবীর মাহাত্ম্য বুঝতে পেরে আকবর দেবীর জন্য সোনার প্রলেপ দেওয়া ছাতা তৈরি করেছিলেন এবং মন্দিরের চূড়া সোনা দিয়ে মুড়ে দেন। একদল সৈন্য এই মন্দির আক্রমণ করতে গেলে ঝাঁক ঝাঁক মৌমাছি তাদেরকে আক্রমণ করে। এখানে মূলত সাতটি শিখা দেখা গেলেও কোন কোন সময় আবার নয়টি শিখাও দেখা যায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম