।। প্রথম কলকাতা ।।
Soil fertility: বছরের পর বছর জমিতে এক ধরনের ফসল চাষ করলে কিংবা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। আসলে মাটির উর্বরতা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে বহু কারণ জড়িয়ে রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ফসল পেতে কৃষকরা অনিয়ন্ত্রিত সার প্রয়োগ করছেন। যার ফলে জমির কার্যকারিতা যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে মাটি। পাশাপাশি ফলন কম হচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে চাষিদের খরচ। এই সব কিছুর জেরে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ কৃষক।
বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র জমিতে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ফসফরাস প্রয়োগ করলে প্রায় ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময় কৃষিক্ষেত্রে বহু চ্যালেঞ্জকে সামাল দিতে হচ্ছে। বহু কৃষক লোকসানের পর লোকসান হওয়ায় চাষ করতে খুব একটা ভরসা পান না। আসলে এই সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলিকে সামনে রেখে মাটির গুনাগুন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। অপরদিকে অত্যাধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করা খুব একটা সহজ নয়। জমির উর্বরতা ধরে রাখতে কয়েক বছর জমিকে যে বিশ্রাম দেওয়া হবে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মানতে হয়, যেমন-
•ফসলের অবশিষ্টাংশ কিছুটা জমিতে রেখে জমির ব্যবহার করা
•মাঝে মাঝে ফসলের পরিবর্তন করা
•মাটির পুষ্টি উপাদান ধরে রাখে এমন ফসলের চাষ করা
•জৈব সারের প্রয়োগ বৃদ্ধি
•সঠিক মাত্রা এবং সঠিক সময়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার প্রভৃতি
বহু জায়গায় ধান জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এর ফলে কিছু কিছু ফসলের ক্ষেত্রে প্রায় ৭ থেকে ৮ বার জমি চাষ হয়। যার ফলে মাটির উর্বর অংশ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায় এবং জলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যদি কনজারভেশন পদ্ধতিতে জমি চাষ করা হয় তাহলে সার এবং বীজ কম লাগে। সেচের খরচ কম হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যদি কোনজারভেশন চাষের তিনটি পদ্ধতি মধ্যে অন্যতম যে পদ্ধতি অর্থাৎ বিনাকর্ষণ পদ্ধতিতে যদি চাষ করা হয় তাহলে উৎপাদন খরচ কম হবে, আবার ফলনও বৃদ্ধি পাবে। এই পদ্ধতির সমস্যা হল, যথাযথ যান্ত্রিকীকরণের অভাব। সব জায়গায় এই পদ্ধতি চাষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
যে জমিতে ধান চাষ হচ্ছে সেই জমিতে বছরের পর বছর শুধু ধান চাষই হচ্ছে। যার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফসলের ধরন পরিবর্তনের প্রয়োজন। ফসলের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে আগাছা দমন হয়। ফসলের রোগ বালাই কমে যায় এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর চক্রাকারে চাষের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে নিয়ন্ত্রিতভাবে। সঠিকভাবে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে তবেই ফল মিলবে। নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সঠিক মাত্রার রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে কৃষকরা যা ফসল পান তার থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ফসল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আলু, ভুট্টা, গম প্রভৃতি ফসলের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত সার প্রয়োগের প্রবণতা সবথেকে বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে বহু কৃষক তাদের জমির মাটির পরীক্ষা না করেই ফসল চাষ করেন। যার কারণে জমিতে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি ঘটে। আসলে চাষ করা হয় অর্থনৈতিক ফলনকে গুরুত্ব দিয়ে। কারণ অর্থনৈতিক ফলন সব সময় লাভজনক, তবে তা জমির মাটির জন্য ভালো নাও হতে পারে।
মাঝে মাঝে ডাল জাতীয় ফসলের চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। কারণ এই ধরনের ফসল মাটিতে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে। জমির উর্বরতা বজায় রাখতে ব্যবহার করতে হবে পাঁক মাটি আর বোঁদ মাটি। এই মাটি বেশ উর্বর। শুষ্ক মৌসুমে এই মাটি কেটে আবাদি জমিতে মিশিয়ে দিলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম